বঙ্গ থেকে বাংলা বিজয়ের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধের এক সংগঠক নিয়েছেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজ বাড়ির সীমাপ্রাচীরে করেছেন মুক্তিযোদ্ধের আর্ট গ্যালারী। তার পাশে বাগানের গাছে গাছে মুক্তিযোদ্ধ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়ে সাঁজিয়েছেন ফেস্টুন। পাশেই চলছে বিজয় গাঁথা বা বীরশ্রেষ্ট স্বরণী নির্মাণ কাজ। সব মিলিয়ে স্বাধীণ বাংলার নির্মল ইতিহাস তুলে ধরতে এ যেনো যুগোপযোগী এক ভিন্ন প্রয়াস। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে বিশিষ্টজনেরা সাধুবাদ জানান। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কেন্দুয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধের এক সংগঠক একে এম হাসমত আলী তার বাড়ির সীমানা প্রচীরে তুলে ধরেছেন পলাশী থেকে বাংলা বিজয়ের ইতিহাস। এতে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ৪ নেতা, বীরশ্রেষ্ট মোহাম্মদ হামিদুর রহমান, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল সহ ৭জন বীরশ্রেষ্ট, ভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তিতুমীর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সাহিত্যিক, দার্শনিক সহ ৪৭জন গুণীব্যক্তির ছবি ও নাম পরিচিতি অঙ্কণ করিয়ে বানিয়েছেন আর্ট গ্যালারী। তার পাশের বাগানে গাছে গাছে সাঁটিয়েছেন স্বাধীণতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা, বিরাঙ্গনা, শহীদমুক্তিযোদ্ধা সহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিত্র। তার সাথে রয়েছে মনীষীদের বানী। এসব-ই করা হয়েছে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীণ বাংলার নির্মল ইতিহাস জানাতে। ফলে এখানে প্রতিদিনই দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ইতিহাস প্রেমী মানুষজন। পাশেই চলছে বিজয় গাঁথা বা বীরশ্রেষ্ট স্মরণী নির্মাণ কাজ। যাতে থাকছে ৩৩২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের স্মরণীয় ব্যক্তিদের সার সংক্ষেপ। এখানে এলে যেনো, স্বল্প সময়েই ইতিহাসের সম্মুখ ধারণা পায় ইতিহাসপ্রেমীরা। আর পেনকেচ হ্যান্ডরাইটিংয়ের পরিচালক আল-আমিনের রং তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এসব চিত্রকর্ম। সব মিলিয়ে একে এম হাসমত আলীর বাগান ও বাড়ি যেন ইতিহাসের এক লাইব্রেরী। মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক একে এম হাসমত আলী জানান, আমি দেশ ও মাটিকে ভালবাসি। দেশ ও মাটির টানে যারা জীবণ বাজি রেখে স্বাধীণ বাংলার পতাকা ছিনিয়ে এনেছে তাদেরকে নতুন প্রজন্মে কাছে তুলে ধরতেই আমার এ উদ্যোগ। তার সাথে বঙ্গ থেকে বাংলা বিজয়ে যাদেরকে শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করতে হয়। ইতিহাসের সেই বীরদের ছবি ও নাম পরিচিতি সহ বাণী তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। হাবিবুর রহমান শাহীন জানান, তার পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে ও দেশের স্বার্থেই এ উদ্যোগ। দর্শনার্থীরা এখানে এলে যেনো অল্প সময়েই ইতিহাসের সামগ্রীক ধারণা পায়। যাতে করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গ-থেকে বাংলা বিজয়ের ইতিহাস সঠিক ভাবে জানতে পারে। মুক্তিযোদ্ধকালীন রূপগঞ্জ থানা কমান্ডার আব্দুল জব্বার খাঁন পিনু বলেন, এ দেশের সঠিক ইতিহাস সবাইকে জানাতে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সে সাথে যার যার অবস্থান থেকে ব্যক্তি বা সমষ্টিগত উদ্যোগে হলেও ইতিহাস সংরক্ষণ করা একান্তই কাম্য। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন বলেন, দেশ ও জাতীর কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধ সহ বঙ্গ থেকে বাংলার ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি নিত্যান্তই প্রশংসনীয়। যারা দেশকে ভালোবাসে, দেশের ইতিহাসকে ভালোবাসে তাদের কাছে স্বাধীণ বাংলার ইতিহাস সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ একে এম হাসমত আলীর মতো এই বাংলার ইতিহাস সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয় তাদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করা হবে।