কোনো জাতির ভবিষ্যৎ তার শিশুদের হাতে গড়া। আর একটি শিশুর আত্মিক, নৈতিক, চারিত্রিক ও শারীরিক গঠনের পেছনে যে বিষয়টি অনেক সময় অনুল্লিখিত থেকে যায়—তা হলো লজ্জাশীলতার চর্চা ও পর্দা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ততা। ইসলাম এই মৌলিক দিকটির সূচনা করে শৈশব থেকেই। অথচ আজ, আধুনিকতার নামে কিংবা ‘বাচ্চা তো!’ বলে অবহেলায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ এই শরয়ি রীতিকে অবহেলা করছি প্রতিনিয়ত।
কোরআনের আলোকে লজ্জাশীলতার ভিত্তি
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘হে আদমসন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে আচ্ছাদন করে এবং যা শোভা। আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম।’
(সুরা আল আ‘রাফ, আয়াত: ২৬)।এই আয়াত কেবল বস্ত্রের উপকারিতা বোঝায় না, বরং একটি গভীরতর আত্মিক দিকও নির্দেশ করে। আর সেটি হচ্ছে লজ্জাবোধ ও তাকওয়ার বিকাশ।
হাদিসের আলোকে শৈশবে লজ্জাবোধ শিক্ষা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক ধর্মের একটি স্বভাবগত গুণ রয়েছে, আর ইসলামের স্বভাব হলো লজ্জাশীলতা।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১৮১)
আর একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে এসেছে: ‘যদি তোমার মধ্যে লজ্জা না থাকে, তবে যা খুশি তাই কর।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৮৩)
অর্থাৎ, হায়া বা লজ্জা হলো এমন এক আত্মিক গুণ, যা মানুষকে গুনাহ থেকে রক্ষা করে। তাই শিশুদের মধ্যেও তা বিকশিত করতে হবে পোশাকের মাধ্যমে, চলনে-বলনে এবং সামাজিক আচরণে।
ফিকহি দৃষ্টিকোণ ও শিশুদের সতর সংরক্ষণ: ইমাম ইবনে আবিদ্দীন শামি (রহ.) বলেন:
‘চার বছর বা ততোধিক বয়সি শিশুর সামনে ও পেছনের লজ্জাস্থান আবৃত রাখা আবশ্যক, কারণ তখন সে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।’ (রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার ১/৪০৭-৪০৮)
এছাড়া ‘ইলাউস সুনান’ গ্রন্থে এসেছে: ‘যেভাবে সাত বছর বয়সে শিশুকে নামাজের আদেশ দেওয়া হয়, তেমনি তাকে লজ্জাস্থান আবৃত রাখতে বলা হবে—যাতে সে বালেগ হওয়ার আগেই অভ্যস্ত হয়ে যায়।’ (ইলাউস সুনান, ২/১৭১-১৭২) আজ দেখা যায়-পাঁচ, ছয় কিংবা সাত বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা অর্ধনগ্ন অবস্থায় পার্কে, স্কুলে, রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাদের প্যান্ট কেবল হাঁটু পর্যন্ত, কোমরের অংশ বা উরুর একাংশ অনাবৃত। অথচ মহানবী (সা.) বলেছেন,‘উরু হলো সতর (লজ্জাস্থান)।
’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০১৪)
সুতরাং এমন পোশাক যা উরু বা কোমর অনাবৃত রাখে, তা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে গোনাহ। বিশেষত নয় বছর বা তার অধিক বয়সি শিশুদের জন্য এটি আরো গুরুতর।
প্রিয়নবী (সা.) তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে ভালোবাসতেন, কোলে নিতেন, কাঁধে উঠাতেন; কিন্তু কখনো তাদের উলঙ্গ করে রাখেননি বা শরিয়তের শালীনতা লঙ্ঘন করেননি। বরং লজ্জাশীলতা ছিল তাঁর ঘরের অলংকার।
কাজেই আমাদের করণীয় হচ্ছে- চার বছর বয়স থেকে শিশুদের সামনে-পেছনের সতরের জায়গা আবৃত রাখা। সাত বছর বয়সে তাদের পূর্ণ পোশাক যেমন লম্বা জামা-পায়জামা পরাতে অভ্যস্ত করা। নয় বছর থেকে তাদের প্রতি বালেগদের মতোই সতরের বিধান প্রযোজ্য সুতরাং ছেলে হলে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত, মেয়ে হলে মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢেকে রাখা। হাফপ্যান্ট, ছোট জামা, পাতলা পোশাক পরানো বন্ধ করা।
শিশুর শারীরিক লজ্জাস্থানকে অনাবৃত রাখা যেমন সামাজিক শিষ্টাচারবিরোধী, তেমনি তা শরিয়তের দৃষ্টিতেও স্পষ্ট গোনাহ। অভিভাবকদের উচিত—শৈশবেই সন্তানদের হৃদয়ে পর্দা, হায়া ও তাকওয়ার বীজ বপন করা। ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেরই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’
( বুখারি, হাদিস: ৮৯৩)
আল্লাহ আমাদের সন্তানদের ইসলামী আদব ও শালীনতায় গড়ে তোলার তাওফিক দিন। আমিন।