২৭ বাংলাদেশী কর্মীকে সৌদি আরবে পাঠানোর দেড় বছর পরও তাদের কারোরই বৈধ আকামা, কাজ ও বেতন দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কর্মীর স্বজনরা রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো উপায় না পেয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
এদিকে এর আগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স লাব্বাইক ইন্টারন্যাশনালের মালিককে দ্বিতীয় দফা চিঠি দিয়ে গত ৭ জানুয়ারির মধ্যে কর্মীদের সমস্যা সমাধান করে বিএমইটিতে প্রমাণ দাখিলের নির্দেশ দিয়ে আলটিমেটাম দেন। সেই সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রতারিত শ্রমিকদের কোনো সুরাহা করা হয়নি বলে কর্মীর স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের সাথে যারা এসেছিল বর্তমানে তাদের অনেকেই আকামা না হওয়ার কারণে পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে তারা ২৭ জন পালিয়ে কোনোভাবে টিকে আছেন। যেকোনো সময় তারাও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যেতে পারেন বলে স্বজনদের কাছে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রতারিত কর্মীদের নিয়ে আগেই নয়া দিগন্তে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক (কর্মসংস্থান) তানভীর হোসেন গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রিক্রুটিং এজেন্সিকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করেন, উপযুক্ত বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স লাব্বাইক ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৭০৮)-এর বিরুদ্ধে আব্দুল্লা আল নোমান কর্তৃক আনীত অভিযোগটি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সৌদি আরবে কর্মরত ১১ জন কর্মীর আকামা না পাওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। রিক্রুটিং এজেন্সি ১১ জন কর্মীর আকামা সমস্যা সমাধানের জন্য এক মাস সময় চেয়ে অঙ্গীকারনামা দাখিল করেছেন। বিএমইটি পত্র নং-৯৭৬৯, তারিখ ১৯/১১/২০২০-এর মাধ্যমে ২০-১২-২০২০ এর মাধ্যমে ১১ জন কর্মীর আকামা সমস্যা সমাধান করে বিএমইটিতে প্রমাণ দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। কিন্তু অদ্যাবধি উক্ত কর্মীদের আকামা সমস্যা সমাধান করার প্রমাণ দাখিল করা হয়নি। এমতাবস্থায় ৭ জানুয়ারি ২০২১ এর মধ্যে কর্মীদের কাজ, বেতন ও আকামা দেয়াসহ সমস্যা সমাধানপূর্বক বিএমইটিতে প্রমাণ দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে পুনরায় অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় অভিবাসী আইনের ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে চিঠিতে এজেন্সি মালিককে আলটিমেটাম দেয়া হয়। তারপরও এজেন্সি মালিক এই চিঠিকে ‘থোরাই কেয়ার’ করছেন বলে প্রতারিত কর্মীদের স্বজনরা গতকাল জানান। এর আগেও একইভাবে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর বিএমইটি থেকে একই কর্মকর্তা এজেন্সিকে চিঠি দিয়েছিলেন।
সৌদি আরবে মানবেতর জীবন কাটানো কর্মীদের মধ্যে একজন হচ্ছেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। গতকাল তার বড় ভাই শামীম হাওলাদার টেলিফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বড় আশা করে আমার ভাইকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার দেড় থেকে দুই বছর হতে চলল এখনো তার আকামাই হয়নি। শুধু আমার ভাই নয়, ওই এজেন্সি থেকে যাওয়া এমন শতাধিক কর্মীর কারোরই আকামা হয়নি। এ নিয়ে এজেন্সি মালিকের সাথে অনেক দেন-দরবার হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। পরে আমাদের ২৭ কর্মীর পক্ষ হয়ে ভোলার দৌলতখান হাজীপুর মাদরাসার বাসিন্দা এক কর্মীর স্বজন আব্দুল্লাহ আল নোমান রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স লাব্বাইক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ দেন। ডকুমেন্ট হিসেবে ২৭ জন কর্মীর নামের তালিকা ও পাসপোর্ট নাম্বারের কপি বিএমইটিতে জমা দেয়া হয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএমইটিতে আমরা ২৭ জনের নামের তালিকা দিলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের বলেছেন, প্রথমে ১১ জনের আকামা, বেতন ও কাজের আগে সুরাহা হউক। এরপর বাকিদের সমস্যা সমাধান করা হবে। এসব কথা বলার ফাঁকে শামীম হাওলাদার বলেন, আপনারা জানেন না, তারা সেখানে এখন কত কষ্টের মধ্যে আছে। বিকাশে আমরা টাকা পাঠালে সেই টাকা দিয়ে তারা এখন কোনোমতে বাজার সদাই করে খেয়েপরে বেঁচে আছে। তার দাবি সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আমার ভাইদের দ্রুত সরকার দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসুক। একই সাথে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক। আমার মনে হচ্ছে বিএমইটিকেও এজেন্সি মালিক ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। যার কারণে আমরা বিএমইটির ডিজির সাথে বুধবার সকালে তার দফতরে দেখা করে আবারো অভিযোগ জানিয়েছি। তিনি সব কিছু শুনে রিক্রুটিং এজেন্সির সমস্ত কার্যক্রম বন্ধে সার্ভার বন্ধ রাখতে কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও এজেন্সির সার্ভার বন্ধ করা হয়নি।