অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে রাজপথে নামছে বিএনপি। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘দাবি আদায়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় চলতি মাস থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। সর্বপ্রথম সমাবেশ হবে চট্টগ্রামে এবং সর্বশেষ হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনগুলোতে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশগুলোতে আমরা দলের মেয়র প্রার্থীরা অংশ নেব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বশংবদ সিইসি দেশে যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম নয় তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি নিজ নিজ নির্বাচনে যেসব অনিয়মের মুখোমুখি হয়েছিলেন তাও তুলে ধরবেন তারা। এছাড়া গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। আমাদের সঙ্গে থাকবেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।’ গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন ছয় সিটির মেয়র প্রার্থীরা। পরে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে যুক্ত হন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর অবস্থানরত দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বৈঠকে অংশ নেন ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, দক্ষিণের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, সদ্য সমাপ্ত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, খুলনা সিটির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বরিশাল সিটির প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার ও রাজশাহী সিটির প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বৈঠকে মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রস্তাবনা পেশ করেন। গত দুদিনে মেয়র প্রার্থীরা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা নিয়েছেন। আমরা প্রত্যেকে আমাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন আগামী শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সমাবেশের সময়সূচি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আমাদের কোন সিটিতে কবে সমাবেশ হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ৩ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সমাবেশে হবে। শুরু হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি ২৬ মার্চ থেকে শুরু হবে বিধায় তার আগেই সমাবেশগুলো শেষ করবো আমরা।’
বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক উইংয়ের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছেন না। সর্বশেষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়ার পর দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা গভীর রাতে দিয়েছে। এছাড়া আমাদের আগে দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুপ্রিম কোর্টের ১০১ আইনজীবী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে চিঠি দিয়েছেন সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমরা সিইসি কেএম নুরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত করে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছি। এতে সুপ্রিম কোর্টের ১০১ আইনজীবী স্বাক্ষর করেছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে আবেদনের কপি রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পৌঁছানো হয়েছে। আমি ছাড়াও এতে স্বাক্ষর করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়াসহ ১০১ আইনজীবী।’ আবেদনে কোন কোন বিষয় উল্লেখ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশনের অধীন ইলেকটোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ভয়াবহ দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তসহ প্রকাশ পেয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিতর্কিত পদ সৃষ্টির মাধ্যমে সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনার, সচিব এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ প্রকাশিত সংবাদে উঠে এসেছে। এসব বিষয়গুলো তুলে ধরেছি আবেদনে।’
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘সিইসিসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের জন্য গত বছর ১৪ ডিসেম্বর এবং গত ১৭ জানুয়ারি দুই দফায় চিঠি দেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।’
৬ মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি: ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে ও দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে দেশের ৬টি মহানগরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ার বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মজিবুর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কিন্তু আমরা কী দেখতে পেলাম, সেখানেও রাষ্ট্রযন্ত্র প্রশাসন জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই আমরা জনগণকে সরকারের ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আগামী ১৩ ফেব্রয়ারি চট্টগ্রামে, বরিশাল ১৮ ফেব্রয়ারি, খুলনায় ২৭ ফেব্রয়ারি, ১ মার্চ রাজশাহীতে, ৩ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ ও ৪ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটিতে ঘোষিত এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশাল সিটি করপোরেমনের সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাক্তার শাহাদাত হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল এবং দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পারিবারিক কারণে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।