রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৫ অপরাহ্ন

অগ্নিঝরা মার্চ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

রক্তে কেনা স্বাধীনতার স্মৃতিবাহী অগ্নিঝরা মার্চের দশম দিবস আজ । তখনও এ বাংলায় ঋতুরাজ বসন্ত বিরাজমান ছিলো। রক্তিম পলাশ-শিমুলের দোর্দ- প্রতাপ ছিলো। কোকিলের কণ্ঠে ছিলো গান। দখিনা সমীরণে বনানীজুড়ে অনির্বচনীয় ঝংকারের সৃষ্টি হতো। সেদিকে কারো এতোটুকু ভ্রƒক্ষেপ কিংবা আকর্ষণ ছিলো না। কিন্তু স্বাধীনতার টকটকে লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে একাত্তরের টালমাটাল দিনগুলোতে জেগে উঠেছিলো মুক্তিকামী মানুষ। ১৯৭১ সালের স্বাধিকার আন্দোলনের এই দিনে সারা ঢাকায় বাড়ি বাড়ি কালো পতাকা পৎ পৎ করে উড়তে থাকে। এদিকে এদিন সরকারের এক ঘোষণায় জানায়, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়।
অসহযোগ আন্দোলনের ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খা ক্রমেই বাড়তে থাকে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ঢাকায় কয়েকটি ছাত্র সংগঠন এবং লেখক, শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবিতা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সময়টাতে এ অঞ্চলের প্রশাসনের ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্তৃত্ব আরো সুসংহত হয়। হরতাল,অসহযোগ আন্দোলনের ভেতরেও দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দীন আহমেদ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন করার নির্দেশ দেন।
এই দিনেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দৈনিক পাকিস্তান’ অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। কালক্ষেপণ না করে জনগণের দাবিও মেনে নেয়ার জন্য কথা বলা হয়। ইংরেজি ‘দ্য পিপলস’ পাকিস্তান পিপলস পার্র্টির (পিপিপি) নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সমালোচনা করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
২০১৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত, একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরযোদ্ধা লে. কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী তার ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১’ শীর্ষক গ্রন্থে একাত্তরের ১০ মার্চের ঘটনাবলী সংক্ষেপে তুলে ধরেন এভাবে- “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, শুধুমাত্র জাতিসংঘ কর্মচারীদের সরিয়ে নিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কারণ, আজকে যে হুমকি দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে গণহত্যার হুমকি, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী স্বীকৃত বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের হুমকি। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাসের অধিকার আদায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে দৃঢ় সংকল্প। বাংলাদেশের জনগণ জানে যে ইতিহাস তাদের পক্ষে আছে এবং ধ্বংসকারী অস্ত্র যতোই সংগ্রহ করা হোক না কেন, কোনো শক্তিই তাদের চূড়ান্ত বিজয় রুখতে পারবে না।”
গ্রন্থটিতে আরো বলা হয়, “ঐ তারিখেই নারায়ণগঞ্জে কারাগার ভেঙ্গে ৪০ জন কয়েদী পালিয়ে যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলীতে একজন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়। সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলবেন বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান ১৩ মার্চ ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করবেন বলে ঘোষণা করেন।”
আহমাদ মাযহার তার ‘বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বইয়ে উল্লেখ করেন, “১০ মার্চ থেকে সারা ঢাকায় বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা উড়তে থাকে। এমনকি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা, হাইকোর্ট, প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা উড়তে থাকে।”




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com