অসহায়, অভিভাবকহীন, নির্যাতিতা ও মজলুম ষাটোর্ধ বৃদ্ধাকে আশ্রয় ও মানবিক সহযোগিতা দেওয়ায় সীতাকুণ্ড উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি জয়নব বিবি জলির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা, বানোয়াট অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ মার্চ সোমবার গণমাধ্যমকে জয়নব বিবি জলি বলেন, একজন ষাটোর্ধ অসহায় বৃদ্ধ মহিলার পাশে দাঁড়ানোর কারণে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল। তিনি জানান, আমি ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করছে। এখন এক মহিলাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাকে ভিন্নদিকে নিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। গত কিছুদিন আগে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পেইজ থেকে অসত্য ও বানোয়াট পোস্ট করে। পরে ঐ পোস্টের সত্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে পেইজ কতৃপক্ষ জয়নব বিবি জলি এর নিকট ক্ষমা চেয়ে পোস্টটি মুছে ফেলে এবং দুঃখ প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেয় পেইজটি থেকে। কিন্তুু প্রথম দফা মিথ্যা প্রচারে সফল না হয়ে পুনরায় মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে এই অসৎ মহল। এসব বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে জয়নব বিবি জলি বলেন মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে । ১৬ মার্চ মঙলবার বেলা এগারোটায় ঘটনার রহস্য উদঘাটনে সরেজমিনে দৈনিক খবরপত্রের তদন্তে ওঠে আসে বানোয়াট চাঞ্চল্যকর মিথ্যা কাহিনী। এসময় এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা রিটু আক্তার, হোসেন বানু, আয়শা আক্তার, খালেদা বেগম, শানু আক্তার, মনোয়ারা বেগম, রিজিয়া বেগম, রাবেয়া বেগম, শেখ হাসিনা, আকলিমা আক্তার, নুর জাহান, লিমা আক্তার দৈনিক খবরপত্রকে জানান, আমরা সকলে সীতাকু- উপজেলার উত্তর সলিমপুর ১ নং ওয়ার্ডস্থ হাজী সাহেব মিয়া কোম্পানির বাড়ির মরহুম নজির আহম্মদ এর প্রশিবেশী হয়। নজির আহম্মদ এর মেয়ে শায়রা খাতুন একজন স্বামী-সন্তান হারা বৃদ্ধ মহিলা। বর্তমানে সে অভিভাবকহীন। দীর্ঘ দিন তার ভাই মাহবুল আলম (গনু মিয়া) এর স্ত্রী সোনোয়ারা বেগম ও তার ছেলেমেয়ে যথাক্রমে সাদিয়া, মুন্নি, মামুৃন এর দ্বারা গৃহবাড়িতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। পারিবারিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আমরা শায়রা বেগমকে ভাতে-কাপড়ে সাহায্য করতাম। ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলিও তাকে সাহয্য সহযোগিতা করে আসছে। এসব মানবিক সহযোগিতার ফলে তার ভাবি,ভাইঝি, ভাইফো আমাদের কটু কথা বলতো।শায়রা বেগমকে সহযোগিতা করে তাদের অপমানের তোপে পড়তে হতো আমাদেরকে। বিভিন্ন সময় নিজের আপন স্বজনদের হাতে নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন সইতে হতো শায়রা বেগমকে। ভাত-কাপড় না পেয়ে বাসা বাড়িতে কাজ নিতে বাধ্য হয় শায়রা। কিন্তুু দিনের পর দিন ভাবি ও তার ভাতিজা-ভাইঝি দ্বারা চরম বঞ্চনার শিকার হতে থাকে শায়রা। এসব বিষয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অবগত করেও উপযুক্ত বিচার পায়নি সে। ঘটনাক্রমে তারা (সোনোয়ারা বেগম, সাদিয়া, মুন্নি, মামুন) তাদের আপন ফুফুকে ঘর থেকে তাড়িয়ে সম্পত্তি লুপে নেওয়ার পায়তারা করে। এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে শায়রা বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমাস খাতুন ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি’কে অবহিত করে। পরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি ইউপি সদস্য আলমাস খাতুনকে সমন্বয় করে একটি বৈঠকে এসব বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা করে। কিন্তুু নির্যাতনকারী মা, মেয়ে ও ভাই প্রকাশ্যে বৈঠকে দুই নারী জনপ্রতিনিধিকে অপমান ও লাঞ্চনা করে এবং বিচার মানবে না বলে চিৎকার চেঁচামেচি করে পরিবেশ অশান্ত করে তোলে। বিশেষ করে সোনোয়ারা বেগম এর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে সাদিয়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং পাথর মারতে থাকে। একপর্যায়ে সাদিয়া ভার্সিটি থেকে তার লেডি গ্যাং এনে জয়নব বিবি জলিকে শাসানোর হুমকি দেয়। পরে নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ১৩ মার্চ ২০২১ ইং তারিখে শায়রা বেগম সীতাকু- মডেল থানায় বাদী হয়ে তার ভাবি সোনোয়ারা বেগম, ভাতিজি সাদিয়া, মুন্নি ও ভাইপো মামুনকে বিবাদি করে একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। এরই মধ্যে ১৪ মার্চ শায়রা বেগমকে আশ্রয় ও সহযোগিতা দেওয়ার কারণে জয়নব বিবি জলির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল চুরির মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন সাদিয়া ও তার মা। ঐদিনই ফৌজদার হাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এসময় প্রতিবেশিরা সত্য ঘটনা পুলিশের কাছে তুলে ধরেন। এতে আরো বেশি ক্ষুদ্ধ হয়ে বিবাদিগণ প্রতিবেশি সকলের সামনে বাদী শায়রা বেগমকে মারধর করে। এসময় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এগিয়ে এলে সাদিয়া মোবাইল দিয়ে ভিডিও করতে থাকে এবং মিথ্যা বুলি ছাড়তে থাকে।একপর্যায়ে সাদিয়া ও তার মা এলাকাবাসীর কাছ থেকে ফুফু শায়রা বেগমকে কেড়ে নিয়ে তাকে গাড় ধাক্কা দিয়ে “ আমরা আমাদের ফুফুকে খাওয়াবো, এটি আমাদের বিষয় “এই বলে টানাহিছড়া করতে করতে ঘরে নিয়ে যায়। পরে সারা রাত তারা শায়রা বেগমকে অভুক্ত রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এসব বিষয় নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি তদারকি করলে তারা ভাইস চেয়ারম্যান জলির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একজন নারীকে অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পথে ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি বাঁধা হওয়ার তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় মেতে ওঠে এই পরিবারটি। আর তাদের এই অপকর্মে পিছনের হোতা হিসেবে কাজ করছে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল এমনটি জানিয়েছে উত্তর সলিমপুর ১নং ওয়ার্ডের বেশকয়েকজন বাসিন্দা। এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যের সত্যতা মিলেছে ভুক্তভোগী বৃদ্ধা শায়রা বেগম ও তার ভাই অর্থাৎ সোনোয়ারা বেগম এর স্বামী ও সাদিয়ার পিতা মাহবুল আলম (গুনু মিয়া) এর নিজ মুখেই। বৃদ্ধ শায়রা বেগম দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, আমি আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানের অত্যাচারের শিকার। তারা আমাকে সবসময় মারে, যেকোন সময় গায়ে হাত তোলে, ভাত দেয় না, কাপড় দেয় না। আমি গোসল করতে গেলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, মসকারি করে, পানি মেরে ভিজিয়ে দেয় এবং বলে গোসল হয়ে গেছে যা চলে যা। এসময় শায়রা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন, ঘোঙ্গিয়ে ঘোঙ্গিয়ে বলতে থাকেন, আমার পৈতৃক সম্পত্তি আমাকে দিচ্ছে না তারা, আমি বঞ্চনার শিকার। এসময় শায়রা বেগম আরো বলেন, আমি এক বড় লোক ডাক্তারের বাসায় যখন কাজ করতাম সাহেব আমাকে ১ লক্ষ ৬০ টাকা উপহার দেয়। তারা আমার থেকে টাকাগুলো নিয়ে ফেলে, যা আমাকে আর ফেরত দেওয়া হয়নি। মাহবুল আলম বলেন, আমাকে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা অমান্য করে, তারা তাদের আপন ফুফুর গায়ে হাত তোলে। দীর্ঘ দিন আমিও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। আমি কিছু বললেই আমার উপর বিপদ নেমে আসে। ফুফুকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়ার বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, সে একজন গাদ্দার ও লম্পট মেয়ে। সবসময় ভিডিও করে, যেকেউ কথা বলতে চাইলে তাকে ভিডিও করে নেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকি পুলিশ যখন তদন্তে আসে তখন সে পুলিশকেও ভিডিও করতে থাকে। আমরা এলাকাবাসী তার এহেন অস্বাভাবিক ও ঝগড়াটে আচরণে অতিষ্ঠ। গ্রামে কাজ করতে আসা কয়েকজন শ্রমিকও সাদিয়া ও তার মায়ের অশ্লীলতার কথা বলেন। এদের মধ্যে মহিউদ্দিন, রমজান আলী, শওকত ও আরমান বলেন, আমরা এই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ, এখানে কাজ করতে আসি প্রতিদিন।যখনি আসি সাদিয়া মেয়েটার উগ্র ও মারমুখী আচরণ চোখে পড়ে।আমরা তাকালে আমাদেরও ভিডিও করে এবং বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে। ভয়ে আমরা নিশ্চুপ থাকি। এদিকে মানহানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে জয়নব বিবি জলি বলেন, একজন নির্যাতিতা নারীর পক্ষে লড়তে গিয়ে আমাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোই আমার সর্বপ্রথম ও অন্যতম কাজ। সমাজের অসহায় ও নির্যাতিত, বঞ্চিত নারীদের অধিকার আদায়ে নিয়মিত লড়াই -সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তুু দুঃখের বিষয় একটি মহল আমার জনকল্যাণকর কাজে ঈষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের লিপ্ত হয়েছে। একটি অসৎ পরিবারের ঘটনাকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করছে, অপপ্রচার করছে দুস্কৃতিকারীরা। তারা আমার কাজকে হিংসা করে আমার সম্মান হানি করতে ওঠে পড়ে লেগেছে। অপরদিকে সাদিয়া বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি’র অত্যাচারে আমরা বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। তিনি আমার ফুফুকে জোর করে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ লেখান। সাদিয়া সকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাদের উপর অবিচার করা হয়েছে বলে দাবি করেন এবং তাদের পরিবারের কিছু হলে তার জন্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি দোষী সাব্যস্ত হবেন বলে নিজের আইডিতে একটি পোস্ট করেন। ঘটনার বিষয়ে সালাদার পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মো. শাহজাহান বলেন, একজন অসহায় মহিলাকে সাহায্য করায় জয়নব বিবি জলি’কে ফাঁসানো হচ্ছে। যে পরিবারটি এমন জঘন্য কাজে জড়িত তাদের সামাজিক অবস্থান অত্যন্ত বাজে। অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকাসহ মানুষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনো ও মিথ্যা -সাজানো মামলায় ফাঁসানো এ পরিবারটির কাজ। তাদের আচরণ আমাকে হতবাক করেছে, সমাজে এরকম মেয়ে থাকতে পারে জেনে আমি লজ্জিত। ১০ সলিমপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আলমাস খাতুন বলেন, আমরা যখন মিমাংসার জন্য বৈঠক করি তখন বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। লোকভর্তি বৈঠকে মা, মেয়ে (সোনোয়ারা, সাদিয়া) আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও তারা আমাদের অপমান করে ও অমান্য করে এবং সম্মানহানি করে। এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফৌজদার হাট পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। ঘটনার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ এখনো বলতে পারছি না।