শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
রোনালদোর মতো কোকাকোলার বোতল সরিয়ে দিলেন সিকান্দার রাজা শ্রমিকদের অবিলম্বে অধিকার-ভিত্তিক ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার দেয়ার সুপারিশ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর ইন্তেকাল এক কলসি পানির জন্য ১ ঘণ্টা অপেক্ষা হলুদ থেকে সবুজ: অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন, দেখে দুদক বললো ‘নিম্নমানের কাজ’ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এক যুগ পর জগুনা বিবিকে ফিরে পেলেন পরিবার ফোন ১০০ শতাংশ চার্জ করা ভালো নাকি খারাপ? জামালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত

লকডাউনের মাঝেই যখন রামাদান

খবরপত্র অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

।। ইয়াসির ক্বাদি ।।

এবার রামাদানটি পালিত হতে যাচ্ছে অবরুদ্ধ ও লকডাউনের মতো অবস্থায়। যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক না কেন, সর্বাবস্থায় রামাদানকে আমাদেরকে নিয়ামত হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। মুমিনের কোনো কিছুতেই লোকসান নেই। হীনম্মন্যতায় বা হতাশায় থাকারও কোনো সুযোগ নেই। মুমিনকে যেকোনো অবস্থাতেই ইতিবাচক মানসিকতা ধারণ করতে হবে। প্রকৃত মুমিনরা যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন, তারা ধরে নেয় যে, ‘আমার জন্য এতেই কল্যাণ রয়েছে।’ আমরা যেভাবে ঘরবন্দি হয়ে আছি, কোনো সন্দেহ নেই তাতে হতাশা আসতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এর মাঝেও আমাদেরকে রামাদানের প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করে আসতে হবে। যেভাবে ইসলামের প্রথম যুগে রাসূল (সা.) এবং সাহাবীরা রোজা পালন করতেন, আমাদেরকে সেই চেতনাকে সামনে রেখে যতটা সম্ভব প্রচেষ্টা চালাতে হবে- যাতে এই রামাদানটি আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম রামাদানে পরিণত হয়। এজন্য সবার আগে আমাদের মানসিকতা ও মানসিক কাঠামোকে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। হতাশায়, বিচ্ছিন্নতায় ভারাক্রান্ত হয়ে যেভাবে আমাদের ওপর অলসতা ভর করেছে, তাকে আগে ত্যাগ করতে হবে। যেভাবে নাটক, গান, সিনেমার মতো সস্তা বিনোদন দিয়ে আমরা বিগত সপ্তাহগুলোর অনেকটা সময় পার করেছি, সেই পথে আর হাঁটা যাবে না। মনে রাখতে হবে, আপনি যদি ভালো কোনো কিছু পেতে চান, তাহলে সবার আগে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘‘আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার তাওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশি হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আল্লাহ আরো বলেন, আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।’’ (সহীহুল বুখারী ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, মুসলিম ২৬৭৫)।

আসুন, আমরা নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচকতার দিকে অগ্রসর হই। এবারের রোজা থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করি।

কীভাবে তা করবেন?

বিগত বছরগুলোর রামাদানে আপনি-আমি অনেক সময় ইবাদত করতে গড়িমসি করতাম। বলতাম, সারা দিন রোজা রেখে আবার কাজ করে পরিশ্রান্ত হয়ে গেছি। শারীরিক ও মানসিকভাবেও আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। এবার আর সেই সুযোগ নেই। আমরা সবাই এখন বাসায় বন্দি। কাজকর্ম যা করছি, তা বাসা থেকেই। যতই বলি, অফিসের তুলনায় কিছুটা হলেও রিলাক্স আছি। তাই এবারের রামাদান আমাদের জন্য সুযোগ হতে পারে। এ রোজায় আমাদের শরীর ও মনে বাড়তি শক্তি রিজার্ভ থাকবে, যা ব্যয় করে আমরা ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।

আগের বছরের রোজাগুলোয় আমাদের বড় একটা সময় রাস্তায় কাটাতে হতো। জ্যামে বসে থাকতাম। এখানে-ওখানে যেতাম, মার্কেটে যেতাম, বিভিন্ন জনের বাসায় ও অফিসে যেতাম। অনেক ধরনের কাজে সম্পৃক্ত থাকতাম। এবার এসব কাজই বন্ধ হয়ে আছে। সেই সময়টাও আমাদের হাতে আছে। এবার তাহলে বেশি বেশি কুরআন না পড়ার মতো কোনো অজুহাত কি আর দেয়ার সুযোগ আছে?

এ মাস হলো পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস। কুরআনকে নতুন করে আবিষ্কার করার মাস। মনে রাখবেন, রামাদান মাসে রোজা রাখার জন্য কুরআনের যে আয়াতে আল্লাহ নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তার আগে দুইবার আল্লাহ রামাদানের সাথে কুরআনের সম্পর্কের কথা বলেছেন। তাই রামাদানে উপবাস থাকার পাশাপাশি কুরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিও একইভাবে জরুরি। এরপরও এত বছরের রামাদানে আমরা অনেকেই কুরআন অধ্যয়নকে সেভাবে আমল করতে পারিনি। এবারের রামাদান আমাদের সামনে সেই সুযোগকে উম্মুক্ত করে দিয়েছে। কেননা আমাদের হাতে এই রামাদানে সময় ও শক্তি দুটিই বাড়তি পরিমাণে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

আরেকটি নির্মম সত্য কথা বলি। রোজার মাসে কোনোভাবেই ওজন বাড়ার কথা নয়। আহার-বিলাসেরও কথা নয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোয় আমরা প্রায় প্রতিদিনই মানুষের বাসায় দাওয়াতে ইফতার খেয়ে বেড়িয়েছি। প্রচুর পরিমাণ খাবার খেয়েছি। ওজন তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। দাওয়াত খেতে, আসতে-যেতেও অনেকটা সময় ও শ্রম ব্যয় করেছি। ইফতার, এরপর খাওয়া, নামাজের পর আবার খাওয়া- এভাবে কয়েক ধাপে আমরা খেয়েছি। যেমনটা আমরা বছরের বাকি সময়েও খাই না। কিন্তু এবার আমরা সবাই বাসায় পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাবো, ইনশাআল্লাহ। ফলে শারীরিক স্বাস্থ্যের দিক থেকেও এবারের রামাদানটি বরকতময় হবে, ইনশাআল্লাহ।

কী করবো, এত তেলযুক্ত খাবার খাই, মোটা তো হবোই কিংবা রোজায় বেশি রিচ ফুড খাওয়া হয়- এসব অজুহাত এবার আমাদের দেয়ার সুযোগ নেই। কেননা এবার সবকিছু হবে নিজের বাসাতেই। বেশি দিন বাকিও নেই। তাই আজই গোটা রামাদান মাসের জন্য বাসার সদস্যদের সাথে কথা বলে একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিকল্পনা করে ফেলুন। রামাদান এতদিন আমাদের অন্তরকে বিশুদ্ধ করেছে, এবার ইনশাআল্লাহ আমাদের শারীরিক উন্নয়নেও রামাদান ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি যেহেতু তারাবি নেই, মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগও কম। তাই শরীরের বাড়তি ক্যালোরি বার্ন করার মতো কিছু কাজ করতে পারেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘তোমরা প্রত্যেকে যার যা প্রাপ্য তাই দিয়ে দাও।” আমাদের ওপর আমাদের শরীরের কিছু হক আছে, যা আমরা অনেক সময়ই অবহেলা করি। এবারের রোজায় সেই ভুলটি থেকে আমরা বেরিয়ে আসারও চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। আমরা যখন অতিভোজনকে এড়িয়ে পরিমিত খাবার খাবো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাবো, তখন শারীরিকভাবেও যেমন ভালো অনুভব করবো, ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিকভাবেও অনেক উপকার পাবো, ইনশাআল্লাহ।

বিগত বছরগুলোয় আমরা তারাবির নামাজে মসজিদে থাকতাম। এশার আযানের আগ দিয়ে বের হতাম। ২ ঘণ্টা ধরে নামাজ পড়তাম। নামাজের পর অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও গল্প করতাম। একটু আড্ডাও দিতাম। বাসায় ফিরতে সব মিলিয়ে বেশ রাতই হতো। এবার তা হবে না। আমরা ওই কাজগুলো মিস করবো এটা যেমন ঠিক, তেমনি আবার এবার একটা সুবিধাও আছে। এবার আমাদের ওপর খবরদারি করার মতো কেউ নেই। এবার আমরা নিজেরাই নিজেদের ইবাদতের জিম্মাদার। আমরা কতটুকু ইবাদত করবো, কখন করবো, তা সবটাই নির্ধারণ হবে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে। রাসূল (সা.) তারাবি, কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদের মতো ইবাদতগুলো একান্তেই করতেন। জীবনে দু-একবার তিনি জামাতে তারাবি পড়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ বছরই তিনি একা একাই পড়তেন। হযরত আবু বকর (রা.) নিজেও তাই করে গেছেন। হযরত ওমর (রা.) তারাবি জামাতে পড়ার বিধান চালু করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, তিনিসহ আরো বেশ কয়েকজন প্রবীণ সাহাবী এ সিদ্ধান্তের পরও নিজেরা ঘরে থেকেই এ নামাজগুলো পড়তেন। কেননা তারা অনুধাবন করেছিলেন, তারাবি, কিয়ামুল লাইল এবং তাহাজ্জুদের মতো নামাজগুলো নিজ ঘরে একান্তেই পড়া শ্রেয়। কারণ সেক্ষেত্রে অনেকটা সময় নিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। রুকু-সিজদা করতে পারেন। তেলাওয়াত দীর্ঘায়িত করতে পারেন। মনমতো সূরা পড়তে পারেন। নিজের মতো করে দোয়া করতে পারেন। একেবারেই স্বাধীনভাবে। কারণ এবার শুধু আল্লাহই আপনাকে দেখবেন। লোকজনের প্রতিক্রিয়ার ভয় আর আপনাকে পেতে হবে না। আর এটাই কিয়ামের প্রকৃত চেতনা। আপনি লকডাউনের সময়ের এ রোজা নিয়ে আফসোস করছেন। আমি বলছি, এটা একটা নিয়ামত লাভের সুযোগও হতে পারে, যা হয়তো এই জীবনে আপনি আর কখনো পাবেন না।

হাফেজ সাহেবের সুন্দর তেলাওয়াতের পেছনে নামাজ পড়তে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এরপরও কথা থাকে। যত সুন্দর তেলাওয়াতই হোক না কেন, আপনার নিজের নামাজে যদি খুলুসিয়াত না থাকে, আপনার দোয়াগুলো যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে সেই জামাত থেকে আপনি কাঙ্ক্ষিত উপকার পাবেন না। আর সত্যি কথা হলো, সেই খুলুসিয়াত, সেই খুশ ও খুযু, সেই আন্তরিকতা বৃদ্ধি করার একমাত্র উপায়ই হলো একান্তে ও একাকিত্বে ইবাদত করা। আপনি জনসমাগমে নামাজ পড়ে সবসময় এখলাস অর্জন করতে নাও পারেন। যখন আপনি মধ্যরাতে আল্লাহর সামনে একান্তে দাঁড়াবেন, তখনই আপনি বেশি একনিষ্ঠতা অর্জন করবেন।

বিশেষ করে রোজার শেষ দশক নিয়ে আমি আপনাদের আরো বেশি সচেতন হওয়ার অনুরোধ করছি। এই রামাদানটি মূলত সেই জন্যই। শেষ ১০ দিনে ফজরের ঘণ্টা দুই আগে উঠুন। ইবাদত করুন। আল্লাহর কাছে মন খুলে সাহায্য চান। আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আর রবের সাথে একান্তে কথা বলার জন্য এ লকডাউনের চেয়ে উত্তম সময় আর কী হতে পারে? কারো কারো মনে হতে পারে, আমরা এখন কষ্টে আছি, বিপদে আছি। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আল্লাহর রহমত, নিয়ামত, মাগফিরাত, ক্ষমা আর পুরস্কার পাওয়ার জন্য এ পরীক্ষাকালীন সময়ের চেয়ে উত্তম সময় আর কী হতে পারে? তাই এবার আমরা যদি প্রকৃত চেতনা ধারণ করে থাকতে পারি, তাহলে এবারের তারাবি ও কিয়ামুল লাইল আমাদের অন্য বছরের থেকে বরং আরো ভালো হতে পারে।

আরেকটি বিষয়ও ভাবুন- সাধারণভাবে রামাদানগুলোয় আমরা পরিবারকে সময় দিতেই পারি না। সকালে উঠে অফিস, সারা দিনের ব্যস্ততা, কাজকর্ম, কেনাকাটা, দৌড়াদৌড়ি, বাসায় আসা, হুড়মুড় করে ইফতার, আবার মসজিদে যাওয়া, বাসায় ফেরা আবার ঘুম। সারা দিন আমরা পরিবারকে ন্যূনতম সময়টাও দিতে পারতাম না। এই রামাদান আমাদের পরিবারকে সময় দেয়ার সুযোগ। আমাদের পরিবার আর পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক ঝালাই করার একটি উপায় আমাদের সামনে খুলে দিয়েছে।

হাদিসে এসেছে, ‘জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে, যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করবেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ৩২৮)। তাই এ মাস হলো পরিবারের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাস।

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন পরিবার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫৫৯)।

এই রামাদানে পরিবারের সাথে বার বার বসুন। কথা বলুন। তাদের নিয়ে নামাজ পড়ুন। কিছু আয়াত ও সূরা মুখস্থ করানোর চেষ্টা করুন। তাদের ভেতরে কিছু ইসলামিক উপাদান ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। তাদের নিয়ে ইসলামী বই পড়ুন। ইসলামিক বিভিন্ন ঘটনাকে তাদের সামনে খোলাসা করুন। রাসূলের (সা.) সিরাত নিয়ে আলোচনা করুন। আমি আশা করি, আল্লাহ যদি আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন, এমনভাবে আপনারা এই রামাদানে পরিবারকে নিয়ে সময় পার করবেন- যাতে কয়েক বছর পরে এই লকডাউনের সময়টি পরিবারকে নিয়ে কাটানো একটি সুখস্মৃতি হিসেবে আপনার জীবনে বিরাজ করবে।

এরপরের কথাটি পুরুষদের নিয়ে। আমরা এমনভাবে চিন্তা করতে অভ্যস্ত- যাতে আমাদের মহিলারা রামাদানে সিংহভাগ সময়টি রান্নাঘরে কাটায়। সাহরিতে বা ইফতারির প্রস্তুতিতে তারা অনেকটা সময় ব্যয় করে। তাদেরও ইবাদত করার সময় দিন। বাড়ির মহিলাদের ওপর কর্তৃত্ব খাটাবেন না। আমাদের নবী (সা.) কমান্ডিং মানসিকতার মানুষ ছিলেন না। হযরত আয়েশাকে (রা.) প্রশ্ন করা হয়েছিল, স্বামী হিসেবে নবীজীর (সা.) চরিত্র কেমন ছিল? হযরত আয়েশা বলেন, “তিনি নিজের মেষের দুধ নিজেই দোহাতেন।” অর্থাৎ রাসূল (সা.) অন্যকে আদেশ করার চেয়ে নিজের কাজগুলো নিজের মতো করে করতেই স্বস্তিবোধ করতেন। তাই এবারের রামাদানে স্ত্রীর দায়িত্ব ও করণীয়কে যতটুকু সম্ভব শেয়ার করার চেষ্টা করুন। তাদের ওপর থেকে চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। তাদের সাথে চিন্তার শেয়ার করাও বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি রামাদানে নানা ধরনের পসরা ও খাবারের আয়োজন কমিয়ে দিন। প্রতিদিন ভারী ভারী ও বাহারি খাবার রান্না ও আহার বন্ধ করুন। অনেক পসরা নিয়ে ইফতার করার সময় রাসূলের (সা.) ইফতারকে স্মরণ করুন। তিনি মাত্র কয়েকটি খেজুর দিয়েই ইফতারি সম্পন্ন করতেন। আল্লাহ আমাদে অনেক খাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। তারপরও অতিভোজন কখনোই কাম্য নয়।

আমরা প্রতি বছর আমাদের দায়িত্বে বাসায় ও বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য ইফতার মাহফিলের আয়োজন করি। নানা ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করি। ডেকোরেশন, ক্যাটারিংসহ অনেক খাতেই খরচ করি। এবার সেই খরচগুলো করার সুযোগ নেই। তাই দয়া করে এই অর্থগুলোকে হেফাজত করুন। এই অর্থকে নিজের মতো করে বিলাসী উপায়ে খরচ করবেন না। বরং নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র সম্প্রদায়ের যারা ঠিকমতো ইফতারি ও সাহরি করার সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এই অর্থগুলোকে দান করে দিন। আমরা বিলাসবহুল ইফতারে যা খরচ করতাম, এবার শুধু সেই অর্থ নয় বরং আরো বেশি অর্থ জোগাড় করে তাদের দেয়ার চেষ্টা করি, যারা বিলাসবহুল তো দূরের কথা, ন্যূনতম ইফতারির আয়োজনও করতে পারে না। আমাদের দেশে অনেক দরিদ্র মানুষ আছে, অসংখ্য মানুষ উদ্বাস্তু শিবিরেও রয়েছে। তাদের কাছে এই টাকাগুলো পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করুন। উদ্বাস্তুদের বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করুন। কেননা তারা বন্দি না হলেও, দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বাস্তু শিবিরে আটকা পড়ে আছে। আমরা এই কয়দিন লকডাউনে বা কোয়ারেন্টিনে থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছি। অথচ তারা একই শিবিরে বছরের পর বছর আটকা পড়ে আছে।

আমি বার বার বলতে চাই, এবারের রামাদান নিয়ে হতাশ হবেন না। বরং এমন কিছু সুযোগ এই রামাদানে উম্মুক্ত হয়েছে, যা এই রামাদানকে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম রামাদানে পরিণত করতে পারে। হযরত মূসার (আ.) লাঠি দিয়ে আঘাত করে সাগর ভাগ করে দেয়ার কথা যদি ভাবেন, তাহলে দেখবেন, সেই জন্য তাকে একটু হলেও চেষ্টা করতে হয়েছিল। নবীজীর (সা.) জীবনেও অসংখ্য বার এমন সময় এসেছে, যখন তিনি কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তারপর তিনি আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করেছেন আর বিনিময়ে আল্লাহ ধারণাতীত জায়গা থেকে আমাদের প্রিয় নবীকে (সা.) সাহায্য করেছেন।

তাই যদি আমরা ইবাদতের আসল সৌন্দর্য দেখতে চাই, এই পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও আবার আল্লাহর মিরাকলকে ফিরে ফিরে পেতে চাই, তাহলে আমাদেরও ন্যূনতম হলেও একটু পরিশ্রম করতে হবে। আমরা যেন শুধু মিরাকলের প্রত্যাশা করে বসে না থাকি। আমরা যেন সেই উদ্দেশ্যে নিজেদের মতো করে চেষ্টা করতে পারি, অনেক বেশি পরিশ্রম করতে পারি। আমিন। অনুবাদ : আলী আহমাদ মাবরুর

ই-খ/খবরপত্র




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com