টিকা আমদানিতে ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। এর আগে গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আমদানিতে সরকারের এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যর্থতা ও দুর্নীতিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বৈঠক মনে করে যে, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিএনপি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে বলে আসছে। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া, একটি মাত্র উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী হতে পারে সে বিষয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক করে এসেছে।
‘কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার শুধু মাত্র নিজেদের আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকার নিজে আমদানি না করে তাদের পছন্দমত চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এর কাছ থেকে সংগ্রহ করায় এবং দেড় কোটি ভ্যাকসিনের অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করেও এখন পর্যন্ত দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লক্ষ ডোজ পেয়েছে। ভারত সরকারের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট বাকি ভ্যাকসিন পাঠাতে অপারগতা জানিয়েছে!’
তিনি বলেন, বৈঠকে বলা হয় কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে সরকার শুধুমাত্র নিজেদের দুর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে। জনগণকে এই চরম অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকি তৈরী করার অপরাধে সরকারকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বৈঠক মনে করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
‘বৈঠক মনে করে অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানাই।’
ফখরুল বলেন, বৈঠকে বলা হয়, স্বাধীনতার দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সরকার প্রায় ২০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যার পর সরকার চিরাচরিত কৌশল নিয়ে বিরোধী দল ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। নেতা-কর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছে না। এরপরও পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপিসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের দুঃস্ত জনগণের সহযোগীতার জন্য পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
‘বৈঠকে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত চালের আপদকালীন মজুদ তলানিতে নেমে আসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, সরকারের মদদপুষ্ট মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে সরকার সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে থাকায় আবার গণহারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়ে বৈঠকে বলা হয়. আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক ও তথ্যমন্ত্রী ক্রমাগত মিথ্যাচার এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করে কল্প কাহিনী প্রচার সরকারের কতৃত্ববাদী একনায়কতান্ত্রিক একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের একটি অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। বিএনপিকে ধ্বংস করবার এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হয়। ‘গ্রেপ্তারকৃত হেফাজত নেতৃবৃন্দেকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাদের থেকে তথাকথিত মিথ্যা স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এই জঘন্য মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে। অবিলম্বে এসব মিথ্যাচার বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।’ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।