রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

‘আবেগের দলিল হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে দেশের ইতিহাস ও বাঙালি জাতির আবেগের জীবন্ত দলিল। সেভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে এ উদ্যান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ স্থাপনাগুলো। পরিবেশ, প্রকৃতি ও ইতিহাসকে সমুন্নত রেখে নবরূপে গড়ে তোলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে জীবন্ত ইতিহাস। এখানে এলেই একজন মানুষের চোখে ফুটে উঠবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস। সেভাবেই প্রণীত হয়েছে প্রকল্প।

প্রকল্পটির একটি অংশের কাজ শেষ। চলছে বাকি অংশের কাজ। শতভাগ শেষ হওয়ার পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এ দেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সঙ্গে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে থাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যোগসূত্র বেশ গভীর। ৭ই মার্চের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ না হলে বাঙালির ভেতর জ্বলে উঠতো স্ফূলিংগ। বারুদের মধ্যে আগুনের কাজ করেছিল ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এরপর ২৬ মার্চ শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। চলে দীর্ঘ ৯ মাস। পরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এখানেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এখানেই ১৯৭২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বক্তৃতা করেছিলেন। এসব নানা ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই সরকার সোহরাওয়র্দী উদ্যানে স্বাধীনতা সংশ্রয় নির্মাণের পরিকল্পনা করে। নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভ এই সংশ্রয়েরই অন্যতম অনুষঙ্গ।
যা থাকবে সোহরাওয়ার্দীতে: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভূগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ এবং দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ যেমন- পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য, ইন্দিরা গান্ধী যেখানে বক্তৃতা করেছিলেন সেখানে ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ঝরনা, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির পার্কিং ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
গাছ কাটার ব্যাখ্যা: এরইমধ্যে উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য হচ্ছে -‘স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাণিজ্যিক স্পট বানানো যাবে না। উন্নয়ন হোক। কিন্তু গাছ কেটে সৌন্দর্যবর্ধন চাই না। আমরা চাই উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ টিকিয়ে রেখে উন্নয়ন চলুক। এই প্রকল্প বাতিল করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিষয়টির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পরিবেশবাদীদের বক্তব্য পুরোপুরি ঠিক নয়। তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে- সেখানে শুধু হোটেল নয়, আরও অনেক স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো বানাতে জমি কোথাও উঁচু কোথাও নিচু করতে হবে। তা করতে কোথাও মাটি ভরাট করতে হচ্ছে। আবার কোথাও মাটি কেটে গভীর করতে হচ্ছে। এর জন্য ‘না কাটলেই নয়’, এমন কিছু গাছ কাটা পড়ছে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য ও সবুজের সমারোহ ঠিক রাখতে ১৩শ নতুন গাছ তো লাগানো হচ্ছে। এগুলো লাগানো সম্পন্ন হলে উদ্যান ভবিষ্যতে আরও সবুজ হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার জানিয়েছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনও হোটেল বানানো হচ্ছে না। আন্দোলনকারীরা যা বলে মানববন্ধন করছেন তা পুরোপুরি অসত্য। তারা এক ধরনের গুজবই ছড়াচ্ছেন বলা যায়। এখানে বাঙালি জাতির ইতিহাস সমৃদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। এটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। দেশে ও দেশের বাইরের মানুষদের বাংলাদেশের ইাতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দেবে। এটি হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জীবন্ত দলিল। পাশাপাশি এখানে শিশুপার্কও থাকছে।’
তিনি আরও জানান, ‘একজন দর্শনার্থী বা আপনার সন্তান এই বিশাল উদ্যানের বিভিন্ন স্থাপনা দেখে যখন ক্লান্ত হবে, তখন পানি খেতে কোথায় যাবেন? সেটা বিবেচনা করে কয়েকটি কফিশপ ও স্ন্যাক্সের দোকান নির্মিত হচ্ছে, যা প্রকল্পেরই অংশ।’
শহীদুল্লাহ খন্দকার আরও বলেন, ‘ভিয়েতনামবাসী তাদের দেশের স্থপতি হোচিমিনের নামে যা করেছেন, তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। সেখানে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদান ও সমগ্র স্বাধীনতার স্মৃতি ধরে রাখতে ১৩শ গাছ লাগানোর বিপরীতে কয়েকটি গাছ কাটতে পারবো না? আমরা কি এতো স্বার্থপর জাতি?’ অপরদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার বিষয়ে একই ব্যাখ্যা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার জানানো হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com