বিশ্বে করোনায় মৃত্যু সরকারি হিসাবের দ্বিগুণেরও বেশি: আইএইচএমই
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই হু হু করে বাড়ছে। দেশটির মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়েছে। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড ও বিহার- পূর্ব ভারতের এই পাঁচটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপদকালীন বৈঠকের পরই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাজ্যগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৯ লাখ মানুষ মারা গেছেন, যা দেশগুলোর সরকারি হিসাবের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড এভাল্যুয়েশন (আইএইচএমই)-এর বিশ্লেষণে এমন আভাস পাওয়া গেছে। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির নিয়মিত আপডেট দিয়ে আসছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২ লাখ, ৫৬ হাজার ৬৭৫ জন। আরেক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩২ লাখ, ৭০ হাজার ৪৭৮ জন। এই সংখ্যা আইএইচএমই-এর দেওয়া মৃত্যুর হিসেবের অর্ধেকেরও কম।
বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার তুলনামূলক হিসাব তুলে ধরা একটি স্বাধীন স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা আইএইচএমই। অতীতে হোয়াইট হাউসও সংস্থাটির দেয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছে। এর প্রতিবেদনগুলো জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। আইএইচএমই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ দেশ শুধু হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীদের গণনা করায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন থেকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই বিশ্লেষণে শুধু সরাসরি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিসাব করা হয়েছে। মহামারির কারণে সৃষ্ট চিকিৎসা সংকটে যেসব মৃত্যু হয়েছে, তা হিসেবে ধরা হয়নি।
আইএইচএমই’র মতে, কোনও দেশে করোনায় মৃত্যুর হারের সঙ্গে সেখানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক ক্রিস্টোফার মুরে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আপনি যদি পরীক্ষা খুব বেশি না করেন, তাহলে করোনায় অনেক মৃত্যু এড়িয়ে যাবেন। মহামারিপূর্ব সময়ে সব ধরনের কারণে মৃত্যুর প্রবণতার সঙ্গে মহামারির সময়ে সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যার তুলনামূলক হিসাব করে করোনায় মৃত্যুর সম্ভাব্য প্রকৃত সংখ্যা বের করেছে আইএইচএমই। তাদের হিসাব বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় অন্তত ৯ লাখ ৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। অথচ দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) হিসাবে বলা হচ্ছে, সেখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯১ জন। আইএইচএমই’র এই প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোনও মন্তব্য করেনি সিডিসি।
বাংলাদেশ সীমান্তের ভারতীয় রাজ্যগুলোতে করোনা বাড়ছে: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই হু হু করে বাড়ছে। দেশটির মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়েছে। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, ঝাড়খ- ও বিহার- পূর্ব ভারতের এই পাঁচটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপদকালীন বৈঠকের পরই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাজ্যগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দক্ষিণ, পশ্চিম বা উত্তর ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি এতদিন কিছুটা ভালো ছিল। কিন্তু তা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে ইঙ্গিত পাওয়ার পরই বুধবার বিকেলে পূর্বের পাঁচটি রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় আমলা ও বিশেষজ্ঞরা। পরে রাতে দিল্লিতে জারি করা এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ এদিকেই দিকনির্দেশ করছে যে, কোভিড মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। দেশের (পূর্ব প্রান্তের) এই রাজ্যগুলোতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যেমন বাড়ছে মৃত্যু হারও।
বিহারে সোমবারেও মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১১ হাজার। গত মাসের শেষ সপ্তাহেও সেই গড় ছিল দশ হাজারের নিচে। অথচ বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারে পৌঁছেছে। রাজ্যে ১৫ মে পর্যন্ত জারি করা হয়েছে লকডাউন। আসামে সপ্তাহদুয়েক আগেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজারের নিচে। এখন তা ৫ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। পশ্চিমবঙ্গেও মাত্র দিন দশেক আগেও প্রতিদিন ১০-১২ হাজার করে নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন। এখন সেখানেও দৈনিক সংক্রমণ ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।