রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে চলমান জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যায় ১২ সপ্তাহ পরও। কিন্তু সিনোফার্ম ও স্পুটনিকের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে ৩ সপ্তাহ পর। একইসঙ্গে, টিকাদান কেন্দ্র, টিকা রাখার স্থান (কোল্ড টেইন)সহ বিভিন্ন পদক্ষেপেও পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ৩ কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এসেছে এক কেটি দুই লাখ ডোজ। ফেব্রুয়ারির ৩০ লাখ, মার্চের ৫০ লাখ এবং এপ্রিলে ৫০ লাখ টিকাও দেশে আসেনি। ইতোমধ্যে ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় টিকা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আগামী কয়েকদিনে মধ্যেই দেশে টিকার মজুদ ফুরিয়ে যাবে। ১০ মে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজের চালান দেশে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, মে মাসেই আসবে স্পুটনিকের ৪০ লাখ ডোজ।
গত ৫ মে পর্যন্ত এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮১১ জন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৩২ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ জন। দুই ডোজ মিলিয়ে ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৩২০ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হয়েছে। গত ২ মে থেকে বন্ধ রয়েছে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ‘সিনোফার্ম বা স্পুটনিকের জন্য কেন্দ্রে কিছু সমন্বয় করতে হবে। যেহেতু এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেওয়া হচ্ছে, দুই রকমের টিকা নিয়ে সেখানে দ্বিধা তৈরি হবে কিনা-সে বিষয়টি রয়েছে। কেন্দ্র কোথায় করা হবে তা-ও ঠিক হয়নি।’
কোন টিকা আসবে জানতে চাইলে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা আমাদের লাগবেই। এ ছাড়াও সিনোফার্ম, স্পুটনিকও চেষ্টা করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক বলেন, টিকা আসবে, তবে দেরি হতে পারে।
দুই থেকে তিন মাস সময়ের মধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যেতে পারে এবং প্রয়োজনে এর সময়সীমা আরও বাড়ানো যেতে পারে মন্তব্য করে ডা. শামসুল হক বলেন, নাইট্যাগ (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) বলছে ভবিষ্যতে তারা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় আরও বাড়াতে বলতে পারে।
ফাইজার নিয়ে চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ফাইজারের টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে মে’র শেষের দিকে। তবে ফাইজার সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার দরকার। টিকা অনুযায়ী যে অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার হবে, সেভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে- বলেন অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এদিকে, ফাইজারের ডোজ আসবে ১ লাখ। এমনটা জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, এটাকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। একইসঙ্গে এর সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়েও একটু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই যেখানে ৭০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রার ফ্রিজ রয়েছে সেখানেই স্পট ঠিক করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের টিকা দিতে হলে আরও দক্ষতার প্রয়োজন। একেক টিকা একেকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। কোম্পানিভেদে মেয়াদও ভিন্ন।’
উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদফতর: যতোদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে টিকা থাকবে, ততোদিন কার্যক্রম চলবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, যদি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এখনকার টিকা দিয়ে কার্যক্রম চলে, তবে এর মধ্যে টিকা না আসলে ১৫ মে’র পর থেকে যাদের আট সপ্তাহ হবে, তাদের টিকা দেওয়া যাবে না। আর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যাবে। আবার এই ১২ সপ্তাহটাও কারও একদিনে পার হবে না মন্তব্য করে অধ্যাপক সেব্রিনা বলেন, ২৬ এপ্রিলে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়েছে। সে হিসেবে ২৬ জুন আট সপ্তাহ হবে এবং ১২ সপ্তাহ ধরে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা থাকছে। ‘এ জন্য আমরা অতোটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই’ জানিয়ে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সবাই টিকা নেওয়া ছেড়ে দেবে সে আশঙ্কাও আমরা করছি না।’
এদিকে, কোভ্যাক্স থেকে প্রথম টিকা আসবে ফাইজারের। সেটা চলতি মাসের শেষে অথবা জুনের শুরুর দিকে আসবে বলে জানায় সূত্র। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে অধিদফতরের অন্যতম মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, সরকারের হাতে এক কোটি দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ছিল। এখন নতুন ভ্যাকসিন না এলে সংকট দেখা দেবে। তবে ঈদের আগেই চীন থেকে টিকা আসার সুযোগ আছে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন আসার ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র রয়েছে। ছাড়পত্র দেওয়া হলে রাশিয়া থেকেও ভ্যাকসিন আসবে। এ ছাড়া রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস মডার্নার ভ্যাকসিন আমদানি করার আবেদন করেছে। এ নিয়েও আলাপ চলছে। সিনোফার্ম এবং স্পুটনিকসহ যে কোনও টিকাই প্রথম কিছু মানুষকে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে কর্মসূচি শুরু হবে।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com