গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৬ জন। গতকাল (৮ মে) করোনায় ৪৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। মৃত্যুর মতো বেড়েছে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৩৮৬ জন। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিলেন এক হাজার ২৮৫ জন। নতুন করে মারা যাওয়া ৫৬ জনের মৃত্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৩৪ জন। নতুন শনাক্ত এক হাজার ৩৮৬ জনকে নিয়ে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হলেন সাত লাখ ৭৩ হাজার ৫১৩ জন।
রবিবার (৯ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৩২৯ জন। তাদের নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত থেকে সুস্থ হলেন সাত লাখ ১০ হাজার ১৬২ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার আট দশমিক ১৯ দশমিক, আর এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার এক দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ১৬ হাজার ৭৭৫ টি এবং গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৫টি।
দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৬ লাখ ৩০ লাখ ৮৯৪টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৬২টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩২টি।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, বাংলাদেশে উদ্বেগ, টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা: ভারতীয় করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ এক প্রভাব পড়ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। অধিক মাত্রায় সংক্রমণের বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট সবেমাত্র শনাক্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে যখন করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি জোরালো করা উচিত, তখনই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অত্যাসন্ন টিকা সঙ্কটের সতর্কতা দিচ্ছেন। বার্তা সংস্থা এপির রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারতে উৎপত্তি এমন একটি করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশে। তবে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের নমুনাগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের বিষয়টি আধিপত্য বিস্তার করে আছে। উদ্বেগের বিষয় হলো ভাইরাসের এসব ভ্যারিয়েন্ট অতি সহজে বিস্তার লাভ করতে পারে।
প্রথম পর্যায়ে যেসব টিকা এসেছে তা এসব ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কমই কার্যকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মার্চ এবং এপ্রিলের প্রথমদিকের তুলনায় গত ২ সপ্তাহের বেশি বাংলাদেশে সংক্রমণ তুলনামূলক কমে এসেছে। এর প্রকৃত কারণ এখনও পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে টিকাদান প্রক্রিয়াকে জোরদারের একটি প্রকৃত সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা বলেছেন, টিকা দেয়ার উপযুক্ত সময় এখনই। এর মধ্য দিয়ে সংক্রমণকে কমিয়ে রাখতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব যেন না ঘটে এখানে।
ওদিকে নিজের দেশে করোনা সঙ্কটে ভারত হাবুডুবু খাচ্ছে। এমন অবস্থায় টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। জুনের মধ্যে বাংলাদেশে মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে মোট ৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা ছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের। কিন্তু তারা মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ দিয়েছে। ফেব্রুয়ারির পর থেকে তারা সব রকম শিপমেন্ট স্থগিত করে রেখেছে। বাংলাদেশ সরকারের ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্সের (আইইডিসিআর) বিজ্ঞানী ড. এএসএম আলমগীর বলেছেন, এ অবস্থাই আসল সমস্যা সৃষ্টি করেছে। টিকা সঙ্কটের আশঙ্কায় গত মাসে প্রথম ডোজ টিকার জন্য নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়াও বিঘিœত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের এক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ভারত ছাড়াও টিকা আমদানির জন্য অন্য উৎসগুলোর দিকে মরিয়া হয়ে ছুটছে সরকার। রাশিয়া এবং চীনের টিকা তৈরির প্রযুক্তি বাংলাদেশে এনে এখানে টিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। বেইজিং থেকে আগামী সপ্তাহে উপহার হিসেবে চীনা টিকার ৫ লাখ ডোজ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চাওয়া রয়েছে। ঢাকাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্সের (আইসিডিডিআর) বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে যে ঝুঁকি আসছে তা বিরাট উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে, বিশেষ করে যখন টিকা পর্যাপ্ত নেই।
যদিও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ, মানুষ এপাড়-ওপাড় যাওয়া আসা বন্ধ, তবু পণ্য পরিবহন কিন্তু অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশে ভাইরাস শনাক্ত করার সুযোগ অনেক কম। এর অর্থ হলো, সহজেই অনেক ‘ব্লাইন্ড স্পট’ থাকতে পারে। অর্থাৎ এমন সব স্থান বা এলাকা থাকতে পারে যেখানে করোনা ভাইরাস বিদ্যমান থাকলেও কেউ তা জানে না। ড. আলমগীর বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যে বাংলাদেশে নতুন করে করোনার ঢেউ তুলবে না, এমনটা আমরা বলতে পারি না। কারণ, ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে অনেক স্পর্শকাতর সীমান্ত। গত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তারপর থেকে এখানে কমপক্ষে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪২ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এতে মারা গেছেন ১১ হাজার ৮৩৩ জন।
১৬ই মে পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থায় মানুষের গাদাগাদি অব্যাহত আছে। যদিও আন্তঃজেলা পরিবহন নিষিদ্ধ, তবু লাখ লাখ মানুষ তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন। তাদের উদ্দেশ্য পবিত্র ইদুল ফিতরে গ্রামের বাড়ি গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করা। ড. আলমগীর বলেন, যদি দেশজুড়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রক্ষায় ব্যর্থ হই আমরা, তাহলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এই ভাইরাস তার প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়বে।
করোনা শনাক্ত করবে মৌমাছি: করোনার পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফল পাওয়ার সময় কমিয়ে আনতে গবেষণা করছেন নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা। এ জন্য মৌমাছিদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। এসব মৌমাছি গন্ধ শুঁকেই শনাক্ত করতে পারবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা। তবে এ প্রক্রিয়ায় করোনা শনাক্তের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-পশু চিকিৎসার গবেষণাগারে মৌমাছির এ বিশেষ প্রশিক্ষণ চলছে। সেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনা শনাক্ত করতে দেওয়া হচ্ছে মৌমাছিকে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া মৌমাছিরা আক্রান্ত নমুনা শনাক্তের সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের স্ট্রুর মতো লম্বা ও সূক্ষ্ম শুঁড় প্রসারিত করতে পারছে, এমনটাই জানিয়েছেন ভাইরোলজির অধ্যাপক উইম ভ্যান দের পোয়েল। তিনি এ প্রকল্পে গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন। উইম ভ্যান দের পোয়েল বলেন, শুরুতে আমরা মৌয়ালের কাছ থেকে সাধারণ মৌমাছি সংগ্রহ করেছি। এর পর সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় রেখেছি। এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার পর প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে মৌমাছিগুলোর সামনে করোনার পজিটিভ নমুনা রাখা হয়েছে। এর পর পরই সেগুলাকে দেওয়া হয়েছে চিনিযুক্ত পানি। দেখা গেছে, আক্রান্ত নমুনা শনাক্তের পর মৌমাছিরা চিনিযুক্ত পানিতে তাদের শুঁড় বাড়িয়ে দিয়েছে।