শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
মাধবদীতে লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের বৃষ্টি প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন বরিশালের মুসল্লিরা আদিতমারীতে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা নওগাঁয় বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন ছড়ার পানিই ভরসা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চকরিয়ায় একাধিক অভিযানেও অপ্রতিরোধ্য বালুখেকো সিন্ডিকেট রবি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ৮৮ হাজার ১১০ মেট্রিকটন ভূট্টা উৎপাদনের প্রত্যাশা কটিয়াদীতে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ, বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসস্তিকা বরিশালে দাপদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে শেবাচিম হাসপাতালে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু কালীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না খালেদা জিয়া

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ মে, ২০২১

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রোববার (৯ মে) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। এর আগে সকালে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর আবেদনের বিষয়ে মতামত দিয়ে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি মঞ্জুর করেনি বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটা আবেদন নিয়ে আসছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আপনারা এও জানেন তিনি (খালেদা জিয়া) আদালত কর্তৃক দ-প্রাপ্ত হয়ে প্রিজনে রয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানটি, তিনি তাকে মানবতার তাগিদে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর (১) ধারা অনুযায়ী তার দ-াদেশ স্থগিত করে সুবিধা মতো চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং বাসায়ই অবস্থান করছিলেন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তার ছোট ভাই আবার আসছিলেন আবেদনটি করেছিলেন, তিনি বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমাদের। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। সেটাও আপনারা জানেন।’
‘আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মত আসছে, তারা স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছেন, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে, এটা দ্বিতীয় বার…তার সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর কোন অবকাশ এই ৪০১-এ দ্বিতীয়বার নেই। এটা তারা জানিয়ে দিয়েছেন।’ আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘শর্ত সাপেক্ষে সেই সাজাটা স্থগিত হয়েছিল যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না বা বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী, আমরা তাদের আবেদনটা মঞ্জুর করতে পারছি না। এখন তাদের আমরা এটাই জানিয়ে দেব।’
আপনারা কী বিষয়টি মানবিকভাবে দেখছেন না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কথাটা আপনি কেন বললেন? মানবিক বিষয় দেখব বলেই তো আমরা পাঠিয়েছি। আইন অনুযায়ী তাকে কোনভাবে দেয়া যায় কি-না। প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেয়ার কোন স্কোপ নেই এটাই আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়েছে। মানবিকতা দেখিয়েই প্রধানমন্ত্রী বাসায় রেখে চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছিলেন।’ বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ আছে সরকারের কারণে বেগম জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতেও যদি বিএনপি এমন অভিযোগ তোলে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেখুন বিএনপি কী অভিযোগ করল সেটা প্রশ্ন আসে না। আমাদের আইন অনুযায়ী যেটুকু করণীয় আমরা সেটুকু করছি। যেখানে মানবতার প্রশ্ন এসেছে সেটাও আমরা করেছি। বিএনপি আবেদন করতেই পারে। আইনের বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’ দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দী ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে- এই দুটি শর্তে তার দণ্ড স্থগিত করা হয়।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ মে বেগম জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। গত ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে শামীম ইস্কান্দার আবেদনটি দিয়ে আসেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। গত ৬ মে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা তা হল, এর আগে ওনার (খালেদা জিয়া) দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায়। ৪০১ ধারা কাজ কিন্তু সম্পন্ন হয়ে গেছে। তারপর আবার এটাকে ওপেন করার স্কোপ আছে কিনা সেটা আমরা দেখব। সেটা দেখে আমরা আমাদের অভিমত দেব। যথাশীঘ্র আমরা সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
গত বছরের মার্চে করোনা মহামারী শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়ার শেষ হয়ে আসলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর আবেদনের নথিতে কী আছে সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কেউই মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে গতকাল রবিবার (৯ মে) মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনটি মতামত দিয়ে ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তির দেশের সীমানার বাইরে যাওয়ার বা পাঠানোর কোনও সুযোগ আইনে নেই। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া দ-প্রাপ্ত। তাকে বিদেশে পাঠাতে হলে আগে দণ্ড মওকুফ করতে হবে। আদালত যেহেতু তাকে সাজা দিয়েছেন তাই তার দণ্ড মওকুফের একমাত্র ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রের। এখন রাষ্ট্রই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই মতামত জানিয়ে খালেদা জিয়ার ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার (৯ মে) সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মতামত দিয়ে পাঠানো নথিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (মন্ত্রীর দফতর) ড. মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর মতামত সংবলিত খালেদা জিয়ার বিদেশ নেওয়ার আবেদনের নথিটি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো

আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামত বেআইনি: খন্দকার মাহবুব হোসেন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামত বেআইনি। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কোনো অঘটন ঘটে গেলে তার দায় সরকারের। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরবার আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠালে আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয় জানায়, খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ নেই। তারা বলেছে, দ-প্রাপ্ত আসামি হিসেবে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মতামত এসেছে, তাতে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অবকাশ নেই।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এ আইনে এমন কোনো বিধান নেই যে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিদেশে যেতে পারবে না। এ আইন করাই হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চিকিৎসা শেষে ফিরে আসতে হবে-সরকার এই শর্ত দিতে পারত। খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত জটিল। সরকার মানবিকভাবে দেখতে পারত। এই আইনজীবী বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের নিজেরই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। অনুমতি না দিয়ে সরকারের এত বড় দায়ভার নেওয়া উচিত হয়নি। যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তখন সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারের ঘাড়ে পড়বে। আইনকে তো মানবিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।’ হয়েছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com