মাত্র পাঁচ মাসেই বদলী হয়ে গেলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হক।বদলির আদেশ নিয়ে গত (১৬ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বাগেরহাটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের নাম ঘোষনা করা হয়েছে।একই সাথে আ,ন,ম ফয়জুল হককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব করা হয়েছে। এদিকে, মাত্র ৫ মাসের মাথায় নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে বাগেরহাটবাসীর মন জয় করে নেয়া জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হকের এমন বিদায় মানতে পারছে না বাগেরহাটবাসী।এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) রীতিমত প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন তারা।তবে এরই পাশাপাশি এত অল্প সময়ে কেন এই বদলী এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে তাদের মনে।রবিবার দিনভর যখন এ বিষয়টি নিয়ে বাগেরহাটের সর্বত্র আলোচনার-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে বিকাল ৪টার দিকে নিজ ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে নিজ অবস্থান জানানোর পাশাপাশি বাগেরহাটবাসীর জন্য দিয়েছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হকের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো, সম্মানিত বাগেরহাটবাসী। আপনারা ইতমধ্যে জেনে গেছেন আমার বদলীর আদেশ হয়েছে। অনেকেই ফোন করেছেন।বিভিন্ন পেশাজীবী ফোরাম থেকে বলেছেন আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই যে আপনাকে যেতে দেব না। আপনার আদেশ প্রত্যাহার করে ছাড়ব ইত্যাদি ইত্যাদি। বিগত পাচঁ মাস আমি আপনাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম তাতেই আমি আপনাদের ভালবাসা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ। অনেকে জানতে চেয়েছেন কেন হঠাত এ আদেশ? আসলে সরকারি আদেশের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যায় না। তবে আমি এ জেলায় দায়িত্ব গ্রহণের আগে স্হানীয় সরকার বিভাগে থাকতে ঘটে যাওয়া একটা বিষয় নিয়ে নাকি কে একজন বাগেরহাটের মোল্লাহাটের ছেলে কেবিনেটে অভিযোগ দায়ের করেছে। সেটি আমার মনে হয় আপনাদের একটু বলা প্রয়োজন, না হলে সোসাল মিডিয়ার অপব্যবহারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এর ঐতিহ্যবাহী পদটিকে সম্মানহানী করার চেষ্টা করা হতে পারে।আপনাদের বাগেরহাটেরই মোল্লাহাটের ঐ ছেলে, ফেসবুকে বিডি প্রথম আলো নামে একটা পেজ খুলে (পেজটি একদম নতুন খোলা হয়েছে এবং সংবাদ মাধ্যম হিসেবে এর কোনো ভিত্তি আছে বলে জানা নেই) সেখানে তার পারিবারিক বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা বানোয়াট কিছু কথা লিখে অনবরত নিজস্ব কিছু লোকজন দিয়ে সেটিকে ভাইরাল করে। ফেসবুকে আপনারাও অনেকে এটা দেখেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি হয়তো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্তাধীন তাই বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তবে আমি এবং আমার পরিবার আমাদের নিজেদের অবস্থানে আত্মবিশ্বাসী।আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি যে ঐ অভিযোগে আমার কোনো দায় নেই। আমার সারল্যের সুযোগ নিয়ে এমন বানোয়াট অভিযোগ তৈরি করা হয়েছে। দু:খজনক হলেও সত্যি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে এখনও আমার নিকট থেকে কোনওরুপ বক্তব্য নেয়া হয়নি বা অভিযোগকারীকে আমি নিজেই চিনি না, অভিযোগের কপিটিও আমি অফিসিয়ালি পাইনি। আমার বদলির পেছনে এটি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ও থাকতে পারে। একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে জনস্বার্থে সরকারের আদেশ বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নেয়া আমার দায়িত্ব। যাই হোক, এটা সত্যি কথা যে আরো কিছুদিন আপনাদের সংঙ্গে কাজ করতে পারলে আপনাদের সুখে দুখে পাশে থাকতে পারলে আমার ভাল লাগত।যেহেতু সরকারি আদেশ, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাকে মেনে চলতে হবে,তাই নতুন জেলা প্রশাসকের নিকট অতি দ্রুতই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাব।তবে খারাপ লাগবে নি:সন্দেহে, কারণ এত অল্প সময়েও আমি বাগেরহাটের মানুষকে ভালবেসেছিলাম।কত-কত কাজে হাত দিয়েছিলাম।যাবার বেলায় যত কথাই বলি বাগেরহাটের মানুষ আর এখানের শিশু পরিবার ও সেফ হোমের বা”চাগুলোর জন্য ভীষণ ভীষণ কষ্ট হবে। যখন চলে যাব তখন দড়াটানা নদীর ব্রিজের ওপরে গাড়ীর জানালা থেকে দড়াটানা নদীর দিকে তাকিয়ে কষ্টে চোখ ভিজে যাবে !মনে হবে আমার জীবন দর্শনের কথা “কোথায়, কখন, কবে, কোন তারা ঝরে গেলো আকাশ কী মনে রাখে”। অপরদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “বিডি প্রথম আলো” নামের পেজ থেকে জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল হকের নামে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর এক ব্যাক্তির একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।আংশিক প্রকাশিত ওই অভিযোগে,ওই ব্যাক্তি তার স্ত্রীর (বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা) সাথে জেলা প্রশাসক আ,ন,ম ফয়জুল ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ করেন। সেই সাথে তিনি ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর উপর যৌন নির্যাতন, তাদের সংসার ভেঙ্গে দেয়াসহ তাকে হুমকী প্রদানের অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় ওই ব্যাক্তি ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানান।