শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

জুলুমের পরিণতি

মাওলানা এম এ হালিম গজনবী:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ মে, ২০২১

জুলুম বা অত্যাচার একটি অতিশয় ঘৃণিত অমানবিক ও অতিশয় নিকৃষ্ট পাপাচার। আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন- আল্লাহ পছন্দ করেন না কাফেরদের, অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের, দাম্ভিকদের, জালিম বা অত্যাচারীদের। অন্য কথায় আল্লাহর অপছন্দ ও ঘৃণার দিক থেকে কাফের, অরাজকতাকারী, দাম্ভিক, জালিম বা অত্যাচারী, মিথ্যাবাদী ইত্যাদি চরিত্রের লোকদের এক কাতারে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
মহাহিসাবের দিনে অত্যাচারী ও অত্যাচারিত পশুগুলোকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিচারের সম্মুখীন করবেন এবং অত্যাচারিত পশু দ‍্বারা অত্যাচারী পশুর ওপর যথাযথ প্রতিশোধ নেওয়াবেন। তারপর আল্লাহ আদেশ করবেন- ‘হে পশুদ্বয়! তোমরা মাটিতে মিশে যাও।’ হুকুমের সাথে সাথেই পশুদ্বয় মাটির সাথে মিশে যাবে।
এ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, জালেম পশু যখন মহাবিচারের নিখুঁত বিচার হতে নিষ্কৃতি পায়নি, তখন জালিম মানুষ কি তা থেকে নিষ্কৃতি পাবে? নিশ্চয়ই পাবে না। প্রথমত জালিম ব্যক্তি পরিশোধ করতে মাজলুমকে তার নির্ধারিত পরিমাণে পুণ্য দেবে, যদি তাতে ঋণ পরিশোধ না হয় তাহলে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপ প্রয়োজনীয় পরিমাণ অত্যাচারীকে নিতে হবে। পাপ পুণ্যের বিনিময়ে যদি অত্যাচারের পরিমাণ পরিশোধ হয় তো ভালো, তা না হলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর খাছ রহমতে অত্যাচারিত ব্যক্তির ক্ষতি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে দেবেন। এ ক্ষেত্রে যদি অত্যাচারীর কোনো পুণ্য অবশিষ্ট না থাকে তা হলে সে হয়ে গেল নিঃস্ব, রিক্ত, হতোদরিদ্র, মহাক্ষতিগ্রস্ত। ফলে তার স্থান হবে জাহান্নামে, নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক।
প্রত্যেক মানুষের দুটো অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। প্রথমটি আল্লাহর অধিকার, অপরটি মানবাধিকার। আল্লাহর অধিকার সংরক্ষণে মুমিন মুসলিমদের ব্যর্থতা তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন না। প্রত্যেক মানুষের অধিকার হলো মানবাধিকার ক্ষুণ্নকারী বা অত্যাচারীর অত্যাচার, অবিচার ইত্যাদি থেকে নিরাপদ থাকা। মানুষ মানুষকে অত্যাচার করে নানাভাবে। ধন-সম্পদ আত্মসাৎ, শারীরিক নির্যাতন, আহত ও নিহত করে, অপমানজনক কথা-বার্তা দ্বারা মানসিক আঘাত করে, শত্রুতা স্থাপন, হিংসা-বিদ্বেষ, গাল-মন্দ, অপবাদ, মিথ্যা সাক্ষী, ষড়যন্ত্র, মিথ্যা মামলা, ওয়াদা ভঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে যা আমাদের সমাজে ব্যাপক হারে ও ভয়াবহ পর্যায়ে বিশেষ করে দুর্বলের ওপর সবলের নির্যাতন প্রচলিত আছে। মহাপরিতাপের বিষয় যে, ক্ষণস্থায়ী জীবনে পার্থিব মোহের নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অত্যাচারীরা কী ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তা সে আদৌ জানে না। যদি সে জানত তার করুণ পরিণতি সম্পর্কে মহাহিসাবের দিনে মহাবিচারকের আদালতে যা তার ভাগ্যে ঘটবে সে হয়ে পড়বে নিঃস্ব, রিক্ত, হতদরিদ্র, মহাক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ সামনে একমাত্র খোলা পথ ‘জাহান্নাম’, তাহলে সে অত্যাচার বা মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করত না।
হে অত্যাচারী মুমিন মুসলিম ভাইগণ! অত্যাচারের ভয়াবহ পরিণতি ধর্মীয় জ্ঞানী-গুণী লোকদের কাছে গিয়ে জেনে নিন। সামাজিক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মূল শীর্ষস্থানীয় কুকর্মের শেষ ফল জুলুম- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অরাজকতা, ব্যভিচার, মিথ্যাচার, অবিচার, খুন, জখম অর্থসম্পদ আহরণ, ঘুষ, সুদ, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি।
জুলুম বা অত্যাচারের শাস্তির বিধান স্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন-জালেমদের কঠিন শাস্তি অর্থাৎ জাহান্নাম। তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁর রহমতে দাখিল করেন। আর জালেমদের জন্য তো প্রস্তুত রেখেছেন মর্মন্তুদ শাস্তি (সূরা : আদ দাহর, আয়াত-৩১)।
জুলুম হতে পারে অন্যের ওপর যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। অপর দিকে জুলুম হতে পারে স্বয়ং নিজের ওপর, পাপাচারের বা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রেও শাস্তি অবধারিত, যদি না আল্লাহ দয়া করে ক্ষমা করেন। আদম আ:-কে আল্লাহর শিক্ষা দেয়া দোয়া- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা অত্যাচার করেছি স্বয়ং আমাদের ওপর (নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে) যদি দয়া করে আপনি আমাদের ক্ষমা ও দয়া না করেন তাহলে নিশ্চয়ই আমরা মহাক্ষতিগ্রস্ত (জাহান্নামবাসী) হয়ে যাবো।’ মাছের উদর হতে ইউনুস আ: আত্মসমর্পণে -আল্লাহর বাণী- ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই, আপনি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি জালিম বা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি।’
উপরিউক্ত দুটি আল্লাহর বাণী থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় স্বয়ং নিজেদের ওপর অত্যাচার করার ঘটনা।
হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদেরকে তাওফিক দান করুন আমরা যেন কোনো পাপ কাজে লিপ্ত না হই এবং জুলুম করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে পারি। আমীন।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও ম্যানেজিং পার্টনার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com