ইসরাইলে ১২ বছর ক্ষমতায় থাকা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতার অবসান হতে যাচ্ছে। দেশটিতে বিরোধী দলগুলো নতুন সরকার গঠনে চুক্তি করায় নেতানিয়াহুর দীর্ঘ শাসনের পরিসমাপ্তি হচ্ছে।
ইসরাইলের আটটি দল মিলে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যপন্থি দল ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিদ এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী ডানপন্থি দল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এরপর তিনি ইয়াইর লাপিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। অর্থাৎ আগামী ২০২৩ সালের ২৭শে আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন নাফতালি বেনেট।
ইসরাইলের বিরোধী দলীয় ডানপন্থি নেতা নাফতালি একজন সাবেক কমান্ডো ও প্রযুক্তি খাতের সফল ব্যবসায়ী।
ক্ষমতায় আরোহনের আগেই রাজনৈতিক জীবনকে যথেষ্ট আলোচিত করে তুলেছেন উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত বেনেট। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা এ বিষয়ে নিজেকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চাইতেও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন।
অতি কট্টরপন্থি হিসেবে চিহ্নিত বেনেট ইসরাইলকে একটি ইহুদি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতেই বেশি উদ্যোগী। তিনি বিশ্বাস করেন, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি- যা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল দখল করে রেখেছে- ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে ইসরাইলই ওই ভূখ-ের দাবিদার। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি ইসরাইলের অধিকৃত অঞ্চলে বসতি নির্মাণ কার্যক্রমে সমর্থন দিয়ে আসছেন (ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধানও ছিলেন বেনেট), যদিও তিনি বলেছেন গাজার ওপর ইসরাইলের কোনো দাবি নেই।
২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয় ইসরাইল, এরপর থেকে পুরো উপত্যকা ঘিরে রেখেছে তারা।
তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তবে এভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি। তার কট্টরপন্থি দল ইয়ামিনা গত সাধারণ নির্বাচনেও জিতেছে মাত্র ছয়টি আসনে। কিন্তু অল্প ওই আসনই এখন হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাস। সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে বেনেটের দলের অবস্থান যৌথভাবে পঞ্চম, কিন্তু তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’। কারণ সরকার গড়তে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রধান দুটি পক্ষের কাছে পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই জোট গঠনে বেনেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ইসরাইলে যেসব দলগুলো জোট গঠন করেছে তাদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। ভিন্ন মতাদর্শের হলেও একটি বিষয়ে তারা এক। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হারাতে হবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ইসরাইলের পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ- দুজনেই বেনেটকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন, সঙ্গে ছিল ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব। তবে লাপিদের প্রস্তাবই গ্রহণ করেন বেনেট। ৪৯ বছর বয়সী নাফতালি বেনেটকে এক সময় নেতানিয়াহুর শিষ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হত। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি থেকে পদত্যাগ করে বেনেট যোগ দেন ধর্মীয় কট্টরপন্থি দল জিয়ুশ হোম পার্টিতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় সাফল্যে ভূমিকা রেখে পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি।
এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের প্রতিটি জোট সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন বেনেট। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের ডানপন্থি জোট কোনো আসন জিততে ব্যর্থ হয়। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ইয়ামিনা দলের প্রধান হিসেবে পার্লামেন্টে যোগ দেন তিনি।
ফিলিস্তিনি গেরিলাদের বিরুদ্ধেও অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণের পক্ষে নাফতালি বেনেট। তিনি গেরিলাদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-কে সমর্থন করেন। ২০১৮ সালে সংঘাত বন্ধে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তিরও বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।