নিজ বাসায় খাবার রান্না করে টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার বিভিন্ন মেসে সরবরাহ করতেন স্বপ্না রায় ওরফে ফাতেমা আক্তার সুমি(৩০)। খাবার সরবরাহ ও আসা যাওয়ার পথে বছর চার আগে ফাতেমার সঙ্গে পরিচয় হয় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ সৈজ উদ্দিন খানের। স্বামী পরিত্যক্তা ফাতেমাকে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই প্রেমের এবং বিয়ের প্রস্তাব দিতেন বৃদ্ধ সৈজ উদ্দিন। কিন্তু বরাবরই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতেন ফাতেমা। পরে সৈজ উদ্দিন জানতে পারেন এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলছে ফাতেমার। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বৃদ্ধ সৈজ উদ্দিন ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ফাতেমাকে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের সৈজ উদ্দিনের জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। বৃহস্পতিবার সকালে টঙ্গী পূর্ব থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হাসিবুল আলম। গ্রেপ্তার সৈজ উদ্দিন খান(৭০) ঝালকাঠি জেলার সদর থানার নাগপাড়া গ্রামের মৃত তুরাব আলী খানের ছেলে। নিহত স্বপ্না রায় ওরফে ফাতেমা আক্তার সুমি প্রায় ৮ বছর পূর্বে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হাসিবুল আলম বলেন, গত ১৬ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে স্বপ্না রায় ওরফে ফাতেমা আক্তার সুমি বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার দত্তপাড়া হাউজবিল্ডিং এলাকার জনৈক শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ির সামনে পৌঁছালে আগে থেকে উৎ পেঁতে থাকা আসামি সৈজ উদ্দিন খান ধারালো চাকু দ্বারা ভিকটিমকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় পথচারী ও স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উলাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার দিন ভিকটিমের মেয়ে তুলি বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্ত করে গত মঙ্গলবার (০৮ জুন) মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে আসামি সৈজ উদ্দিন খানকে গ্রেপ্তার করে। হাসিবুল আলম আরও বলেন, হত্যাকা-ের পর সৈজ উদ্দিন পাইলিংয়ের কাজ নিয়ে প্রথমে নেত্রকোনা চলে যান। সেখান থেকে অন্য রাজমিস্ত্রিদের সহায়তায় আসামি পল্লী বিদ্যুৎ অফিস নির্মাণ কাজের শ্রমিক হিসেবে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় গিয়ে গা ঢাকা দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সৈজ উদ্দিন খান জানায়, তিনি ভিকটিম স্বপ্না রায় ওরফে ফাতেমা আক্তার সুমিকে পছন্দ করত। ভিকটমিকে প্রথমে প্রেম এবং পরে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি সৈজ উদ্দিন খান হত্যার পরিকল্পনা করে। আসামির দেওয়া তথ্যেরভিত্তিতে দত্তপাড়া এলাকার আতাউর রহমানের ভাড়াটিয়া তার ছেলের স্ত্রী জাহানারা বেগমের ঘরের রান্না ঘরের সেডের উপর থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকু উদ্ধার করা হয়।