শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

ইপিজেডে করোনার প্রভাব: বন্ধ এক ডজন কারখানা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১

১৯৮০ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এর আওতায় ১৯৮৩ সালে যাত্রা করে ইপিজেডগুলো। প্রথম প্রতিষ্ঠা পায় চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড)। এরপর একে একে গড়ে ওঠে আরো সাতটি ইপিজেড। এগুলোতে বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে ৪৬১টি। চার লাখের বেশি কর্মী কাজ করছেন এ শিল্প ইউনিটগুলোতে। ইপিজেডগুলোতে গত দেড় বছরে এক ডজন কারখানা বন্ধ হয়েছে, যার মধ্যে নয়টিরই মূল কারণ কভিডের প্রভাব। এর মধ্যে কয়েকটি কারখানার কর্মীদের বকেয়া অর্থ আদায়ে দেখা দিয়েছে শ্রম অসন্তোষ। বেপজার সহযোগিতায় কারখানার সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে কর্মীর পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে কভিডের প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ইপিজেডগুলোতে।
জানতে চাইলে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, মোট কারখানা সংখ্যা বিবেচনায় নিলে কভিডের প্রভাব তেমন পড়েনি ইপিজেডে। তবে কভিড আক্রান্ত দেশগুলোতে রফতানির বাজার ছিল এমন কয়েকটি কারখানা ব্যবসা হারিয়ে মন্দা পরিস্থিতিতে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় দেড় বছরে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা ইপিজেডের লেনি ফ্যাশনস ও লেনি অ্যাপারেলসসহ আরো আছে সিইপিজেডের এঅ্যান্ডবি আউটারওয়্যার লিমিটেড, নর্ম আউটফিট লিমিটেড, কোল্ড প্লে লিমিটেড, উইঙ্ক কো. লিমিটেড, পেনিনসুলা গার্মেন্টস লিমিটেড, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড ও পদ্মা ওয়্যারস লিমিটেড। কেইপিজেডে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো পিআরএম ফ্যাশনস লিমিটেড ও ভ্যালটেক্স লিমিটেড। এছাড়া আদমজী ইপিজেডে বন্ধ হওয়া কারখানাটি হলো কুন তং অ্যাপারেলস।
হংকংভিত্তিক মাস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান লেনি ফ্যাশনস লিমিটেড। ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) এ কারখানা গত ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ হয়ে গেছে। কভিড-১৯-এর প্রভাবে ছয় হাজার কর্মীর এ প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থের ক্রয়াদেশ বাতিল করে দেয় পোশাকের ক্রেতারা। ফলে লোকসান ঠেকাতে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। লেনি ফ্যাশনসের মতো বন্ধ হয়েছে ডিইপিজেডে থাকা একই মালিকানাধীন লেনি অ্যাপারেলসও। শুধু ডিইপিজেড নয়, দেশের মোট আটটি ইপিজেডের পাঁচটিতে কারখানা বন্ধ হয়েছে এক ডজন, যার বেশির ভাগই বন্ধ হয়েছে কভিডের প্রভাবে কার্যাদেশের অভাবে কারখানা পরিচালনার অক্ষমতার দরুন। কারখানা বন্ধের পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ ইপিজেডগুলোতে কভিডের প্রভাব দৃশ্যমান করে তুলছে।
গত এক যুগে ইপিজেডের শিল্প ইউনিটগুলো থেকে রফতানি বেড়েছে পাঁচ গুণ। ২০০৮ সালে রফতানি হয় ১৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ২০২০ সালে রফতানি হয় ৮৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। পাঁচ বছরে বেপজার ইপিজেডগুলোতে বিনিয়োগ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। কর্মসংস্থান ও শিল্প বেড়েছে দ্বিগুণ।
বেপজার তথ্যমতে, করোনাকালে বেপজা এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ এসেছে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো দেশ থেকে আসা বিনিয়োগের পরিমাণ ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। নতুন ৭১টি শিল্প আছে বেপজার পাইপলাইনে, যারা শিগগিরই তাদের বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করবে।
বিনিয়োগসংশ্লিষ্টদের দাবি, শিল্পের জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পর্যাপ্ত গ্যাসসহ অবকাঠামো সুবিধা। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ইপিজেডগুলোকে তৈরি করা হয়েছে। শিল্পের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এগুলোকে নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। কভিডকালেও নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ইপিজেডের বেশির ভাগ কারখানায়। বিশ্বের ৩৯টি দেশের চার শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে ইপিজেডগুলোতে। বিনিয়োগ করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, তাইওয়ান, জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, ইন্দোনেশিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি।
ইপিজেডের কারখানায় উৎপাদন হয় একাধিক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্য। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে নাইকি, রিবক, লি, অ্যাডিডাস, ইন্টার স্পোর্টস, লাফুমা, গ্যাপ, জেসি পেনি, ওয়ালমার্ট, কেমার্ট, অ্যামেরিকান ঈগল ও এইচ অ্যান্ড এম। নাইকি, পোলো, পুমা, ইন্টার স্পোর্টস, সিয়ার্সসহ বিশ্বখ্যাত কয়েকটি ব্র্যান্ডের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পণ্য তৈরি হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা দেশের শিল্প অধ্যুষিত এ ছয় এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ৭ হাজার ৯৮২টি। শিল্প কেন্দ্রীভবনের কারণেই ছয় শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। ছয় শিল্প এলাকায় শুধু পোশাক খাতের কারখানা আছে ২ হাজার ৩৮৬টি। এ খাতেরই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র শিল্পের কারখানা আছে ৩১৫টি। এছাড়া বেপজার আওতায়ও আছে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা। শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছয় শিল্প এলাকায় মোট ৭ হাজার ৯৮২টির মধ্যে পোশাক খাতকেন্দ্রিক মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৭০১। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বেপজার আওতাভুক্ত বস্ত্র ও পোশাক কারখানার বাইরে চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন ও ওষুধসহ অন্যান্য খাতের কারখানা আছে ৪ হাজার ৮১৬টি। মোট ৭ হাজার ৯৮২টির মধ্যে কভিডকালে বন্ধ কারখানার সংখ্যা সাড়ে ছয়শর মতো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com