মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ভোলার চরাঞ্চলে মহিষ পালনে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

বাসস :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১

জেলার বিভিন্ন দুূর্গম চরাঞ্চলে মহিষ পালনকে কেন্দ্র করে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী বিচ্ছিন্ন চরের বাথানে হাজার হাজার মহিষ প্রতিপালন হয়ে আসছে। চরগুলো থেকে দৈনিক শত শত মণ দুধ স্থানীয় বাজার হয়ে পটুয়াখালী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এ দুধ দিয়ে স্থানীয়ভাবে সবচে বেশি পছন্দের খাবার টক দৈ তৈরি হয়। যা এখানকার ব্রান্ড হিসেবে পরিচিত। আরো প্রস্তুত হয় মিষ্টি, মাখন, ঘি, পনির, রসমালাই, ছানা, সন্দেসসহ নানান মুখরোচক খাবার।প্রকৃতির সবুজ প্রান্তরের উপর নির্ভর করে এখানে শত শত কোটি টাকার মহিষের বাথান গড়ে উঠেছে নিজস্ব উদ্যোগে। সরকারিভাবে চালু রয়েছে কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা। যা জাত উন্নয়নে সহায়তা করছে। সৃষ্টি হয়েছে পিছিয়ে পরা নদী বেষ্টিত এ জনপদের প্রায় ৩৮ হাজার পরিবারের কর্মসংস্থান’র ব্যবস্থা।
এছাড়া সদর উপজেলার ইলিশা এলাকায় মিল্ক ভিটা কোম্পানী মহিষের দুধ সংগ্রহের জন্য একটি প্লান্ট তৈরির কাজ চালাচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে এখান থেকে দৈনিক ৫ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করা হবে। ফলে দুধের দাম কমার আশংকা থাকবেনা। একইসাথে আন্তর্জাতিক খাদ্য পণ্য সংস্থা ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অরাগানাইজেশনের সাথে প্রাণি সম্পদ বিভাগের আলোচনা চলছে মহিষের দুধ ব্যাপকভাবে বাজারজতকরণের ব্যপারে। তাই কৃত্রিম প্রজনন, সুষম খাবার নিশ্চিতকরণ, মোটাতাজাকরণ, মহিষ পালনে দক্ষতার প্রশিক্ষণ নিশ্চিতের মাধ্যমে এ শিল্পের ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহিষের মালিকরা বলছেন, সেই প্রাচীণকাল থেকেই চরাঞ্চলে মহিষ পালনের ইতিহাস জানা যায়। বিশেষ করে এক সময়ে গৃহস্থ সমৃদ্ধ পরিবারগুলোর চরে শত শত মহিষ থাকতো। সেই ধারা এখোনো অব্যাহত রয়েছে। জেলার ৭৩টি ছোট-বড় চরাঞ্চলের বিশাল প্রান্তরে নির্বিঘেœ মহিষের দল বিচরণ করতে পারে, তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এসব বাথানে মহিষ বেড়ে উঠে। মহিষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় রোগ-বালাই কম হয়। এছাড়া প্রায় সারা বছরই গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধের মূল্য বেশি থাকে। তাই বলা যায় এর চাহিদা বেশি রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইন্দ্রজীত কুমার মন্ডল বাসস’কে জানান, জেলায় প্রায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের খামার, বাথান ও পারিবারিকভাবে এক লাখ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে। যা থেকে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লিটার দুধ পাওয়া যায়। মহিষের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মহিষের জাত উন্নয়নের কাজ চলছে। উন্নত জাতের মুররাহ পুরুষ মহিষের সাথে স্থানীয় দেশি মহিষের কৃত্রিম প্রজনন চলছে। জেলার সদর, মনপুরা ও চরফ্যাসন উপজেলায় কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এছাড়া সরকার ৫০ ভাগ র্ভর্তুকিতে ৩০ টি উন্নত জাতের মহিষ খামারীদের বিতরণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, সদর উপজেলার বাঘমারা এলাকায় সরকারিভাবে ৫০ একর জমির উপর মহিষের আধুনিক খামার গড়ে তোলা হবে। এটি চালু হলে এখান থেকেই উন্নত জাতের মহিষ কিনতে পারবে খামারীরা। যেখানে দেশি জাত থেকে দেড় থেকে দুই লিটার দুধ পাওয়া যায়, সেখানে উন্নত জাত থেকে ৮ থেকে ১০ লিটার দুধ পাওয়া সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে মহিষের মাংসের জন্য মহিষ মোটাতাজাকরণ পক্রিয়ার পরিধি বাড়ানো হয়েছে চরগুলোতে। একইসাথে মহিষ পালনে আমরা খামারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি।
মহিষের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক ডা. মো: খলিলুর রহমান বাসস’কে জানান, মহিষ মূলত প্রাকৃতিক খাাবার খেয়েই বেঁচে থাকে। এ জেলায় ২০১৬ সালে মহিষের মৃত্যুর হার ছিলো ১৪ ভাগ, দুধ উৎপাদন ছিলো গড়ে এক লিটার। আর তা বর্তমানে মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ৪ ভাগ ও দুধ আসছে দুই লিটার করে। বলা যায়, মহিষ লালনের অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে এবং সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে ভোলায়। সঠিক কর্ম পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ খাতকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তিনি জানান, গত ৪ বছরে আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার খামারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং ৪০টি উন্নত জাতের মহিষ দিয়েছি। ভোলায় বাংলাদেশের মধ্যে সবচে বেশি দুধের দাম পাওয়া যায়। ইন্ডিয়া, নেপাল, পাকিস্তান শুধুমাত্র মহিষ দিয়ে উপরে উঠছে। মহিষের দুধ থেকে এসব দেশ প্রায় ৪০ ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি করে। আমাদের দেশেও সেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুধের খাদ্য তৈরির প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। এতে করে দুধের কদর আরো বাড়বে। একইসাথে মহিষ পালনে গতানুগতিক ধারা থেকে বেড় হয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
ভোলা সদরের মাঝের চরের মহিষের রাখাল খালেক মিয়া ও সবুজ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চরে কৃষকরা দুধ উৎপাদন ও মহিষ মোটাতাজাকরণে আগ্রাহ দেখাচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননে জন্ম নেওয়া মহিষের বছুরের বেশ চাহিদা রয়েছে এখা।ে কারণ মহিষ পালনে তেমন যতœ করতে হয়না। অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই তারা বেড়ে উঠে।
দৌলতখান উপজেলার মেঘনা নদীর মধ্যে জেগে উঠা চর মদনপুর। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শত শত মহিষের পাল। চারণভূমিতে জন্মানো সবুজ ঘাসই এদের খাদ্য। খাবার সেরে পানিতে গা ডোবায় এরা মেঘনায় । দিন শেষে রাখাল লাঠি হাতে মহিষের পাল বাথানে নিয়ে আসে। এ চরের একটি বাথানে শতাধিক মহিষ পালন করছেন পৌর শহরের ২ নং ওয়ার্ডের আদর্শ দধি ভান্ডারের মালিক আব্দুল হাইসহ অন্য দুজন। তাদের গত কয়েক পুরুষ ধরেই মহিষ পালনের ঐতিহ্য।
আব্দুল হাই জানান, তারা চরে মহিষ পালনের জন্য ৫৫ কানি জমি লিজ নিয়েছেন এক বছরের জন্য। তিনি এ মহিষের দুধ থেকে টক দই, ঘি মাখন, ঘোল ইত্যাদি উৎপাদন করে বিক্রি করেন। তবে সাম্প্রতিককালে দুধের পরিমাণ কমে গেছে। কারণ হিসেবে বলেন, চরে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ায় মহিষের চারণ ভুমির সংকট দেখা দিয়েছে। ঘাসের উপর নির্ভর করে মহিষের দুধের পরিমান। মাটি থেকে প্রায় ৭ ফুট উচ্চতায় কেল্লা তৈরি করে তারা মহিষ লালন করে আসছেন। বর্ষা বা জোয়ারের পানিতে চর যখন ডুবে যায় তখন কেল্লায় নিরাপদে মহিষ থাকতে পারে।
সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভবানীপুর গ্রামের মহিষের বাথানের মালিক গোলাম কিবরিয়া বলেন, সদরের কাচিয়ার চর ও দৌলতখানের বৈরাগীর চরে দুটি বাথানে প্রায় সাড়ে ৪’শ মহিষ পালন করছেন তিনি। প্রাণি সম্পদ থেকে উন্নত জাতের একটি চেলা মহিষ পেয়েছেন। যার মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনেন বেশ কিছু মহিষ উৎপাদন হয়েছে তার বাথানে। যার ওজন ও আকৃতি দেশি মহিষের চেয়ে বড় এবং দুধও হয় বেশি। এছাড়া খুরা রোগের জন্য সরকারি ভ্যাকসিনও পেয়েছেন তিনি। তবে মহিষ পালন সমস্যামুক্ত করতে চারণ ভূমির সংকট মোকাবেলায় মহিষের জন্য আলাদা চর নির্ধারণ ও দুূর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আধুনিক কেল্লা নির্মাণের দাবি জানান এ মহিষ মালিক।
ডা. খলিলুর রহমান বলেন, মহিষের মাংস ও দুধ অনেক স্বাস্থ্যসম্মত। গরুর দুধে সর্বোচ্চ ৪ ভাগ ফ্যাট থাকে আর মহিষের দুধে ৮ ভাগ হয় এবং এর জন্যই মিষ্টি, বটার বা অন্যান্য খাদ্য বানানো সম্ভব। এটা নিয়ে আমরা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি। এখন খামারীরাও পূর্বের চেয়ে সচেতন হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আরো বলেন, মহিষের অন্যতম রোগ হলো খুরা রোগ। এর ফলে মহিষের পায়ে ও মুখে ঘা হয় এবং মহিষ মারা যায়। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রকল্প চালু রয়েছে। সরকারিভাবে বিনামূল্যে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ডোজ টিকা গরু-মহিষকে প্রদানের জন্য কাজ চলছে। রাশিয়া থেকে আসা এ টিকার এক ডোজের মূল্যে পড়েছে ১৩১ টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ৬৯জন কর্মী কাজ করছে। আগামী ৫ বছর ধরে এ প্রকল্প চলবে । এতে আশা করা হচ্ছে এ রোগটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com