রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

আশুলিয়ায় খাস পুকুর ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ

শহীদুল্লাহ মুন্সি আশুলিয়া :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১

ঢাকার আশুলিয়ার বেদখল হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ খাস পুকুর। এরই মধ্যে আশুলিয়ার অধিকাংশ খাস পুকুর ভরাট করে স্কুল, কলোনী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। তবে প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারের খাস খতিয়ানভোক্ত এসব পুকুর অভৈধভাবে দখল হয়ে গেলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সংশ্লীষ্ট প্রশাসন। আশুলিয়া থানা এলাকার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকার চিড়িংগা পুকুর, আশরাফনগর পুকুর ও জোড়া পুকুর অভিনব কৌশলে ভরাট করে দখল করছে প্রভাবশালীরা। পুকুরগুলো দখলে নিতে প্রথমে আবাসিক এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় এবং পরবর্তীতে মাটি ভরাট করে নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন স্থাপনা। এভাবেই পুকুর দখলসূত্রে মালিক বনে যাচ্ছে ভুমিদস্যু ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আবাসিক কলোনী, স্কুল, মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপন করে এসব পুকুর দখল করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকার চিড়িংগা পুকুরের আয়তন ১.৭২ একর। পুকুরটি ধীরে ধীরে ভরাট এবং পুকুরের পাড় দখলে নিয়ে স্থানীয় মৃত খিদির আলী মুন্সীর ছেলে আব্দুস সালাম, তার ভাই কালাম ও আজিজুল প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। পুকুরের জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ। পুকুরের জমি দখলে নিয়ে একর পর এক স্থাপনা নির্মাণ করার বিষয়টিস স্থানীয় বেশ কয়েকজন লিখিতভাবে সহকারি কমিশনার ভুমি (আশুলিয়া সার্কেল) বরাবরে জানালে তৎকালীন এসিল্যান্ড তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ ঘটনাস্থলে যান এবং সরকারি সম্পত্তি হিসেবে সেখানে সাইনবোর্ড দিয়ে আসেন। ওই সাইনবোর্ডে লিখা ছিল ‘ইহা সরকারি সম্পত্তি, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, আদেশক্রমে সহকারি কমিশনার ভুমি, আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল, সাভার, ঢাকা। কিন্তু সম্প্রতি ওই সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে নিজ নামীয় সাইনবোর্ড দিয়ে সালাম গংরা পুনরায় ওই পুকুরের দক্ষিণ পাশের বেশ কয়েকটি গাছ ও মাটি কেটে ফেলেছেন। সেই সাথে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করছেন। এছাড়া পুকুরের দক্ষিণ পাশ, পূর্বপাশ ও উত্তর পাশের অংশ দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এব্যাপারে বক্তব্য নিতে অভিযুক্ত আব্দুস সালামের মোঠোফোনে বার বার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির গোহাইলবাড়ি মৌজায় কোনাপাড়া আশরাফনগর এলাকায় রয়েছে দীর্ঘদিনের পূরনো বিশাল আকৃতির আশরাফ নগর পুকুর এবং জোড়া পুকুর নামের দুটি পুকুর। এসব পুকুর থেকে এলাকাবাসি গোসল করা ও গরু গোসল করানো সহ নানা কাজ করতেন। কিন্তু স্থানীয় আরমান মন্ডল ওরফে আমান বেপারীর ছেলে প্রভাবশালী কামাল বেপারী, তার ভাই মাওলানা মোহা: শামসুদ্দিন কাসেমী ওরফে তারা মিয়া ও মোহাম্মদ আলী পুকুর দখল করে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এমনকি পুকুরের জমি বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ আলীর নামে। তার ভাই কামাল উদ্দিন ওই পুকুরের এক পাশ দখল করে একতলা একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। পরে সেখানে এম এইচ পাবলিক স্কুল নামের একটি স্কুল চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী সমন মন্ডল, কামাল ও রুহুল আমিন নামের তিন ব্যক্তির কাছে পুকুরের দক্ষিণপাশ থেকে জমি বিক্রিও করেছেন। কামাল বেপারীর পূর্ব পাশ অর্থ্যাৎ পুকুরের দক্ষিণ পাশ দখলে নিয়ে সমন আলী মন্ডল নামের এক প্রভাবশালী কলোনী করে ভাড়া দিয়েছেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা ভাড়া উত্তোলণ করছেন তিনি। একই পাশে রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তিও জমি কিনেছেন। এছাড়া কামাল বেপারীর উত্তর পাশেই পুকুরের পশ্চিম পাশ দখল করে ভিটি মাটি দ্বারা ভরাট করে দারুল আরমান ইসলামী ইনিষ্টিটিউট নামের একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন তারই ভাই মাওলানা মোহা: শামসুদ্দিন কাসেমী ওরফে তারা মিয়া। এর উত্তর পাশেই পুকুর ভরাট করে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ দশ ফিট পশ্চিম পাশেই রয়েছে পাকা আরেকটি মসজিদ। স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের কেউ কোন কিছু বলতে সাহস পান না। তবে স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও যেন না দেখার বান করে বসে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসি। এলাকাবাসি জানান, দিনের আলোতে প্রকাশ্যে এসব সরকারি খাস খতিয়ানভোক্ত পুকুরগুলো ভরাট করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে নাকি তা ওয়াক্ফাকৃত হতে হয়। তা না হলে নামাজ হয় না। কিন্তু সরকারি খাস পুকুরে মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে নামাজ পড়লে কি নামাজ হবে? এমনটাই প্রশ্ন করেন এলাকাবাসি? এব্যাপারে আশরাফ নগর পুকুরের দক্ষিণ পাশ দখল করে কলোনী নির্মাণ করা অভিযুক্ত সমন আলী মন্ডল জানান, আমি মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে ওই জমি কিনে বাড়ি করে ভাড়া দিয়েছি। আপনার যা ভাল মনে হয় করেন। একই পুকুরের জমি দখল করে স্কুল নির্মাণ করা কামাল বেপারী মোঠোফোনে জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করি। তাই বাড়ি-ঘর করেছি। এছাড়া কিছুটা ঝামেলাও আছে কোর্টে মামলা চলছে। এক সময় আইসেন, চা পান খাইয়া যাইয়েন। এব্যাপারে পুকুরের জমি ভরাট করে মাদ্রাসা নির্মাণ করা মাওলানা মোহা: শামসুদ্দিন কাসেমী ওরফে তারা মিয়ার বক্তব্য নিতে ওই মাদ্রাসায় দুইদিন গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মোঠোফোনে কল করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এব্যাপারে সহকারি কমশিনার ভুমি (আশুলিয়া সার্কেল) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, ‘‘টেঙ্গুরীর একটি পুকুর নিয়ে হাইকোর্টর সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনে মামলা আছে। ওরা আবার এটা ওদের পক্ষে রায় দেখায়। আমরাতো সরাসরি হাইকোর্টে ইয়ে করতে পারিনা। তবে ডিসি অফিসের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা আমাদের মত করে ডিফেন্ড করার জন্য, গভমেন্টের পক্ষে সেটা উদ্ধার করার জন্য। তারা আবার কয়েকবার মামলা করেছেন। কোর্টে তলব করে বা কনটেপ্টের প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু তারা কোনভাবে সরকারি দীর্ঘতার কারণে বা সুদীর্ঘ অবস্থা নেওয়ার কারণে ওরা ওদের মত করে বেদখল করার পরেও আমরা কাগজপত্রে আমাদের মত করে আইনগতভাবে প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি এটা চুড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য। এটা তাদের পক্ষে যদি চায় তাহলে এটা সরকারের সিদ্ধান্ত বা মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কোনভাবে এটা নিষ্পত্তি করবো না।’’ তিনি আরো জানান, ‘‘ এটার হচ্ছে আপিল বিভাগে মামলা চলমান আছে, তো সে অবস্থায় আমরা জবাব দিয়েছি, সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে সরকারের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যেভাবে জবাব দেওয়া দরকার সেটা কিন্তু দেওয়া হয়েছে।” বেদখল থাকুক বা কোর্টের একটা নিষেধাজ্ঞা আছে, এজন্য আমরা সরাসরি এই মুহুর্তে উচ্ছেদ করা যাচ্ছেনা। কিছুদিন আগে হলেও উচ্ছেদ করা যেত। কিন্তু তাই বলে এরকম না যে সরকারের ডিফেন্ড করার জন্য যে ব্যবস্থা করা দরকার সেটা করা হচ্ছে। তা নাহলে তারা মিউটেশন করে ফেলত।’’ এছাড়া ওই এলাকায় অন্যান্য যে খাস পুকুরগুলো রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে শীগ্রই খোঁজখবর নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com