মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী শেরপুরের খুকু মনি

জাহিদুল খান সৌরভ শেরপুর:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১

তৃতীয় লিঙ্গের একজন হয়েও হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী শেরপুরের খুকু মনি। ৩য় লিঙ্গ হওয়ায় যেখানে-সেখানে তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হতো তাকে। একসময় হাত পাতা বা চাঁদা তোলা ছাড়া পেটে খাবার পড়ত না খুকুমনির। আজ সে নিজের পায়ে দাড়িয়ে স্বাবলম্বী।  খুকুমনির ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। দিনে দিনে বড় হতে থাকে এই খামার। তার মুখে এখন তৃপ্তি আর সফলতার হাসি। হাঁস পালনের জন্য খুকুমনি  শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বাদাতেগরিয়া গ্রামে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বড় একটি খামার। এই খামারে বর্তমানে তার হাঁস আছে ১ হাজারেরও বেশি। হাঁসগুলোর সঙ্গে খুকুমনির দারুণ বন্ধুত্ব। প্রতিদিন সকালে পাশ্ববর্তী বিলে নিয়ে যান হাঁসগুলোকে। এরপর নির্দিষ্ট সময় পার হলে পুনরায় বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। বাড়িতে এসে হাঁসগুলোকে খেতে দেন বাড়তি খাবার। ডাক দেওয়ার সাথে সাথে সব হাঁস এসে জড়ো হয় খুকুমনির সামনে। এবিষয়ে খুকুমনি বলেন, বাজার থেকে প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা কেনা পড়েছে ২৫ টাকা করে। মোট বাচ্চা কিনেছিলেন ১ হাজার ২ শতের মত। একন সব মিলিয়ে ১ হাজারের মত বড় হাঁস রয়েছে। এর আগেও হাঁস পালন করে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন খুকুমনি। এই লাভের টাকা দিয়েই ধীরে ধীরে খামার বড় হচ্ছে  তার। এখন তার যে হাঁসগুলো রয়েছে সেগুলো বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করলে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি সম্ভব। এরপর সব খরচ মিটিয়ে খুকুমনির ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে। খুকুমনি আরও বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের একজন হলেও মানুষের কাছে আমি হাত পাততে চায় না। আমি কর্ম করে বাঁচতে চাই। সরকার আমাকে একটি ঘর আর জমি দিয়েছে, আমি এখানেই হাঁস-মুরগি পালন করে বেঁচে থাকতে চাই। আমার দাবি অন্যদের মতো যেন আমাকে সরকার থেকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থাটা করে দেয়া হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী জুবাইদুল ইসলাম বলেন, খুকুমনি ছোট থেকেই বুদ্ধিমতি। কারণ বড় হওয়ার সাথে সাথে সে নিজে কিছু করার চেষ্টা করে। খুকুমনি সমাজের আরও অন্যদের মত চাঁদাবাজি, বাজারে বাজারে টাকা তোলা, জোর করে নেওয়া এগুলো করতে পারতো। কিন্তু সে একাজ না করে নিজে উদ্যেগী হয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে নিজে খামার গড়েছে। অল্প অল্প করে হাঁস পালন করে, আজকে তার খামারে ১ হাজারেরও বেশি হাঁস রয়েছে। খুকুমনির জন্য আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, আমরাও সমাজের অন্যদের মতই মানুষ। আমাদেরও পরিবার ছিল। মা, বাবা, ভাই-বোন ছিল। শারীরিক পরিবর্তনের কারণে আমরা পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। আমরাও যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। কিছু একটা করে স্বাবলম্বী হতে পারি তার জ্বলন্ত উদাহরণ খুকুমনি। শুধু তাই নয় শেরপুরের অনেক হিজড়া আছে যারা মাস্টার্স শেষ করেছে। কেই আবার শেরপুর সরকারী কলেজে ইন্টার বা অনার্স পরছে। অনেকেই আবার সেলাই, বুটিক, কম্পিউটার, গবাদিপশু পালনসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় বসবাসকারী ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা ৫২। প্রশিক্ষণ পেয়ে তাদের সবাই এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। শেরপুরের ট্রান্সজেন্ডারদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় নাগরিক সংগঠন জন উদ্যোগ। জনউদ্যেগের শেরপুর জেলার আহবায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, একসময় ট্রান্সজেন্ডারদের কেউ ঘর ভাড়াও দিতে চাইতো না। সময়ের পরিবর্তনে আমরা সব দাবী আদায় করেছি।  শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নে ২ একর জায়গায় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য বাসস্থান ‘স্বপ্নের ঠিাকানাথ আবাসন প্রকল্প। সেখানে আছে পুকুর, শাকসবজি, ফসল আবাদের জন্য খোলা জায়গা। আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। ইতিমধ্যে ৪০ জন হিজড়ার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন ঘরের চাবি। আমরা চাই প্রশিক্ষণ শেষে সবাই যেন খুকুমনির মত আত্ননির্ভরশীল হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com