ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নীলফামারীর ছয় উপজেলায় ৭৪ হাজার ৮৮২ কুরবানির পশু প্রস্তত করা হয়েছে। গত বছর (২০২০ সালে) এর সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার। তবে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এবার এখনও খামারে আসছেন না ব্যবসায়ীরা। হাট বসতেও শুরু করেনি। এ অবস্থায় ভালো দামে পশু বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খামারি ও কৃষকরা। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী, এবার চাহিদার বিপরীতে ১৫ হাজার ৮৮২ টি পশু বেশি প্রস্তত রয়েছে। জেলায় খামারির সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৭৪ জন। ওই সংখ্যা গত বছর ছিল ১৮ হাজার ৫০২ জন। খামারি বেড়েছে ৭২ জন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ওইসব পশুর মধ্যে, সদরে ষাঁড় পাঁচ হাজার ৮২৪, বলদ দুই হাজার ৫৯০, গাভী তিন হাজার ৫০, ছাগল তিন হাজার ৩৪০, ভেড়া ১৮৩, সৈয়দপুরে ষাঁড় চার হাজার ৫২১, বলদ এক হাজার ৪৯৫, গাভী দুই হাজার ১৮০, ছাগল দুই হাজার ৮৩৬, ভেড়া ১৮৮, ডোমারে ষাঁড় দুই হাজার ৯১৬, বলদ এক হাজার ৩৫১, গাভী দুই হাজার ৮৪, মহিষ তিন, ছাগল তিন হাজার ১০২, ভেড়া ১৮৫, অন্যান্য পশু ২০টি রয়েছে। এছাড়াও জেলার ডিমলায় ষাঁড় তিন হাজার ২০৬, বলদ এক হাজার ২৬৫, গাভী তিন হাজার ৭৩১, মহিষ ১৩, ছাগল দুই হাজার ৮৫৮, ভেড়া ৭৭৬, জলঢাকায় ষাঁড় ৯ হাজার ১০৬, বলদ এক হাজার ৪৫৬, গাভী এক হাজার ৮১৪, মহিষ ১০, ছাগল দুই হাজার ৫০০, ভেড়া এক হাজার ১৩৫, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ষাঁড় ছয় হাজার ৩১৭, বলদ ৬৮৭, গাভী দুই হাজার ১৪, ছাগল দুই হাজার ২১, ভেড়া ৩৭৫টি কুরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ৭৪ হাজার ৮৮২ টি।
জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার খামারি আব্দুল খালেক বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে তিনটি বলদ গরু ৬০ হাজার টাকায় কিনে বাসায় লালন পালন করছি। প্রতি বছর কুরবানির সময় গরু বিক্রির আয়ের টাকায় বছরের ৬-৭ মাস ভালোই চলে যায়। কিন্ত এবার করোনায় সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীতেও যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। সংক্রমণ বাড়ায় মহাজনেরা এখনও খামারিদের কাছে আসেনি। হাট বসতেও শুরু করেনি। একারণে কুরবানির পশুর চাহিদা কম মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভালো দামের আশা করা যাচ্ছে না। এবার গরুর খাওয়া খরচের টাকাই উঠবে কিনা, তা নিয়েই যত চিন্তা।
একই শহরের আব্দুল মালেক ও আলেয়া বেগম জানান, আমরা গরু বর্গা নিয়ে লালন পালন করে থাকি। আমাদের মতো শতশত বর্গাদার এবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কারণ করোনার জন্য আয় উপার্জন না থাকায় কুরবানি দেওয়ার সংখ্যা কমে আসতে পারে। আর এতে কুরবানির পশুও কম বিক্রি হবে বলে মনে হয়।
আলেয়া বেগম বলেন, দিন যতই যাচ্ছে খড়, ঘাস, ভূষি ও চালের কুড়ার দাম বেড়ে যাচ্ছে। লাভতো দূরের কথা, আসল টাকা উঠবে কিনা জানি না। বিক্রির টাকা দুইভাগ হবে। মালিক একভাগ আমার একভাগ।
জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিন্মাঞ্চল সামান্য পানিতে তলিয়ে যায়, এ কারণে অলস জীবন যাপন করে ওই এলাকার মানুষ। তাই প্রতিবছর কুরবানির ঈদের সময় ঘরে বসে গরু মোটাতাজা করে বাড়তি আয় করে থাকেন তারা। এতে তাদের সংসারসহ ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চলে যায়। উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিশামত ছাতনাই গ্রামের খামারি বাবলুর রহমান (৫৮) ও রোস্তম আলী (৫০) জানান, বিভিন্ন বাজার থেকে কমদামে ছোট বকনা ও এঁড়ে বাছুর কিনে দেশীয় পদ্ধতিতে পাতা, কাঁচা ঘাস, গমের ভূষি, ধানের কুড়া, খৈল, লবণ ও চিটাগুর খাইয়ে পালন করা হয়। রোস্তম বলেন, গত বছর দুই দাতের দুটি বাছুর ৩০ হাজার টাকায় কিনে তা লালন পালন করেছি। এতে খাওয়া খরচসহ মোট খরচ পড়েছে ৫২ হাজার টাকা। ঈদের এখনও ২০-২২ দিন আছে। তবে ওই টাকা গরু থেকে তুলতে পারবো কিনা সন্দেহ হচ্ছে। কারণ করোনা মানুষকে লোকসানে ফেলেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, এবার কুরবানির জন্য ৭৪ হাজার ৮৮২টি পশু মজুত আছে। চাহিদার তুলনায় এবার ১৫ হাজার ৮৮২ পশু বেশি রয়েছে। জেলায় এখনও পশুর হাট বসতে ১২-১৫ দিন দেরি আছে। তবে ভারতীয় গরু বাজারে না এলে জেলার ১৮ হাজার ৫৭৪ খামারি ও স্থানীয় পর্যায়ে পশুর মালিকরা লাভবান হবে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির ওপরই খামারিদের বেচাকেনা নির্ভর করবে বলে মনে করেন তিনি।