রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় কবিরাজের ভূল চিকিৎসার কারনে ডান হাত কেটে ফেলা শিশুটিকে পীরগাছা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দশ হাজার টাকর চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আবু নাছের শাহ মাহবুবার রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামছুল আরেফিন প্রমুখ। উল্লেখ্য যে, উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের নগদ ভগতের ছেলে চয়ন লিচু গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় এবং তার ডান হাত ভেঙ্গে যায়। এরপর স্থানীয় সাহেবগঞ্জ এলাকায় কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিলে ভাঙ্গা হাতে পচন ধরে যায়। পরে শিশুটিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মেডিক্যালের চিকিৎসকরা জানান, চয়নের ডান হাতটি কেটে না ফেললে সমস্ত শরীরে ক্যান্সারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে বাধ্য হয়ে শিশুটির হাতটি কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। শিশুটির বাবা নগদ ভগত বলেন, ‘আমি দিনমজুর, দিনে আনি দিনে খাই। আমরা স্বামী-স্ত্রী অন্যের জমিতে কাজ না করলে আমাদের পেটে ভাত জুটে না। আমরা উপজাতি। আমার তিনজন সন্তান। তাদের মধ্যে বড় সন্তান মেয়ে, দ্বিতীয় সন্তান চয়ন ভগত কুমর। চয়ন এবার ইটাকুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। চয়নের রোল নম্বর ৯। আমরা সেদিন বাড়িতে ছিলাম না, তখন সবার অজান্তে আব্দুস সোবহানের ছেলে (পরিচিত নাম) বাবু মিয়া আমাদের সন্তান চয়ন কুমারকে জোর করে লিচু গাছে উঠিয়ে দেন। সেদিন বৃষ্টি থাকার কারণে লিচু গাছটি ছিল পিচ্ছিল। ওই সময় গাছে উঠিয়ে দিলে আমার সন্তানটি গাছ থেকে পড়ে যায়। এর ফলে ওর ডান হাতটি ভেঙ্গে যায়। পরে বাবু মিয়া তার পরিচিত স্থানীয় কবিরাজের কাছে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে হাতটিতে পচন ধরে যায়। স্থানীয় মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, এরা খুবই গরিব মানুষ এক দিন কাজ না করলে পেটে ভাত জুটে না। বাবু মিয়ার উচিত ছিল উন্নত চিকিৎসা করার মাধ্যমে শিশুটিকে সুস্থ করা। কিন্তু বাবু মিয়া তা না করে কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে শিশুটির জীবন নষ্ট করে দিলো। এ ব্যাপারে বাবু মিয়া বলেন, ‘আমার কোনো দোষ নেই। আমি উন্নত চিকিৎসা করার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চয়ন কুমারের মা-বাবা আমাকে জানিয়েছে কবিরাজের মাধ্যমে তারা চিকিৎসা করবেন। প্রথম দিকে তার মা-বাবা একজন কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। আমি তাদেরকে বলেছি যদি কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করতে চান তাহলে আমার পরিচিত সাহেব বাজারে কবিরাজ আছে। আমি সেখানেই চিকিৎসা করাবো। আমি সাহেব বাজারে কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করতে দেই। কবিরাজের কাছে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার ডান হাতটিতে পচন শুরু হয়। ফলে বাধ্য হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তার বাবা-মা। সেখানেই চিকিৎসার একপর্যায়ে ডানটি কেটে ফেলা হয়।’ তিনি আরো জানান, প্রথম দিকে যদি কবিরাজের কাছে না গিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতো তাহলে তার ডান হাতটি কাটা লাগতো না। তবে বাবু মিয়া স্থানীয়ভাবে সবার সাথে পরামর্শ করে চয়ন কুমারকে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। চয়ন কুমারের বাবা নগদ ভগত ছেলেটির জন্য সমাজের বিত্তশালীদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।