নাম পরিচয় বলতে না পারা মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী পথেই যার ঠিকানা খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। গতকাল রোববার বিকেলে পায়ে ক্ষত হয়ে পোকা ধরা রোগ (গ্যাংরিন) নিয়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ওই নারীকে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নয়াকান্দি এলাকা থেকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নজরুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জানা যায়, রোববার বিকেল ৫টার দিকে পুলিশের ওই কর্মকর্তা ডিউটিরত অবস্থায় পৌরসভার নয়াকান্দি এলাকায় পড়ে থাকা ভারসাম্যহীন নারীটিকে দেখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারীটিকে চিকিৎসা দিতে নানা তালবাহানা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে পুলিশের ওই কর্মকর্তা তার নিজ খরচে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে ওই নারীকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে সেখান থেকেও তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পুলিশের সহযোগিতায় ওই নারীকে গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবা দিতে গড়িমসি করে। পরে রাত ৩টার দিকে পুনরায় মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার সকাল ৮টার দিকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে মানসিত ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ভর্তি করে। মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনের সার্জারী ওয়ার্ডের বারান্দার ফ্লোরে একটি বিছানায় বসে আছে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার তেমন কোন আলামত চোখে পড়েনি। তখন সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন নার্স হুইল চেয়ার নিয়ে ওই নারীর দিকে এগিয়ে যান। মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল ভারসাম্যহীন ওই নারীকে পায়ে ক্ষত নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) নারীটিকে ভর্তি করতে অনিহা প্রকাশ করে। পরে হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে বার বার ফোন করেও তাকে পাইনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে আমি নিজ খরচে লোক মারফত তাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা পাঠাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও তারা ওই নারীকে ভর্তি না করে মিটফোর্ড হাসপাতালে রেফার্ড করে। ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতা নিয়েও ওই নারীকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারিনি। সকল পেশার উর্ধ্বে মানবতা। সেই মানবতা আজ বিপন্ন। পায়ে ক্ষত নিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেনি। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটিকে চিকিৎসা সেবা দিতে কেউ গড়িমসি না করে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ এ কে এম রাসেল বলেন, ওই নারীর একইসাথে মানসিক রোগের ও সার্জারী চিকৎসা প্রয়োজন। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যদি একা একা কোথাও চলে যায় বা অন্য কোন রোগীর সাথে ঝামেলা করে সেই ভয়ে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়েছিল। সারাক্ষণ তো আর একজন রোগীকে পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব না। আর আমাদের হাসপাতালে সাইকিয়াট্রিট বিভাগ না থাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ঢাকা মেকিল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তার পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করেনি। তাকে সেখান থেকে আবার মানিকগঞ্জে পাঠানো হলে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আরশ^াদউল্লাহ বলেন, আমাদের হাসপাতালে ওই নারীকে চিকিৎসা সেবা দিতে কোন প্রকার অনিহা প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের হাসপাতালে সাইকিয়াট্রিট বিভাগ না থাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ঢাকা মেকিল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এখন সে আমাদের এখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।