নিচের ছোট ছোট আমলগুলো আমরা চাইলে অতি সহজেই করতে পারি। রাসূল সা:-এর সুন্নাহর অনুসরণ দিন দিন আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করতে শুরু করবে। প্রতিটি আমলের মধ্য থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কোন আমলটি বেশি পছন্দনীয় হয় তা আমরা জানি না। সুতরাং আমাদের উচিত আমল ছোট হোক কিংবা বড় হোক, বেশি হোক কিংবা অল্প হোক তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যদি ছোট ছোট আমল থেকে আমাদের পরিবর্তনের যাত্রা শুরু করি, বৃহৎ পরিবর্তনের দ্বার উন্মোচন হতে শুরু করবে, ইনশাআল্লাহ। ১. আমাদের যেহেতু নিয়মিত কাপড় পরিধান করতে হয়, প্রথমে ডান হাত এবং ডান পায়ের ব্যবহার দিয়ে শুরু করতে তো পারি। আগে বাম হাত ও বাম পা ব্যবহার না করলেও তো পারা যায়। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: জামা-পায়জামাসহ সব ধরনের পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে ব্যবহার করতেন (আবু দাউদ, হাদিস -৪১৪১)।
২. আমাদের পায়ে যেহেতু নিয়মিত জুতা ব্যবহার করতে হয়, প্রথমে ডান পা দিয়ে পরিধান এবং জুতা খোলার সময় প্রথমে বাম পা দিয়ে শুরু করতে তো পারি। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: জুতা পরিধানের সময় ডান পা এবং জুতা খোলার সময় প্রথমে বাম পা ব্যবহার করতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস -৫৮৫৫)।
৩. আমাদের যেহেতু প্রায়ই থুথু ফেলতে হয়, পশ্চিম দিকে না ফেলে অন্য দিকেও তো ফেলা যায়। এতে তো আমাদের আলাদা কষ্টের প্রয়োজন পড়ে না। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, কিবলার দিকে যে কফ ফেলে তার চেহারায় ওই কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে (সহিহ বুখারি-৪০৭; সহিহ মুসলিম-১২৫৫; বাজজার-৫৯০৪; ইবনে খুযাইমাহ-৮৮০; ইবনে হিব্বান-১৬৩৮; সহিহ তারগীব-২৮২)
৪. আমাদের যেহেতু নিয়মিত ঘুমাতে হয়, ডান কাত হয়ে শুইলে তো আর সমস্যা হয় না; বরং উপকারই হয়ে থাকে। মেডিক্যাল সায়েন্সও তাই বলে। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: যখন শয়ন করতেন তখন ডান কাত হয়ে শয়ন করতেন (বুখারি-৬৩১১; মুসলিম-২৭১৪)।
৫. পানি যেহেতু আমাদের সব সময় পান করতে হয়, একটু বসে খেলে তো বেশি পরিশ্রম হয় না। যেহেতু পান করবই, এক নিঃশ্বাসে না করে তিন নিঃশ্বাসেও তো পান করা যায়। এতে শুধু উপকারই হয়ে থাকে। মেডিক্যাল সায়েন্স এর উপকারিতার কথা বলেছে। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস রা: বলেছেন, রাসূল সা: দাঁড়িয়ে পান করা থেকে নিষেধ করেছেন (মুসলিম-৩৭৭২; তিরমিজি-১৮০০)।
৬. বাড়িতে এবং মসজিদে যেহেতু আমাদের সবসময় প্রবেশ করতে হয় এবং বের হতে হয়, ডান পা দিয়ে প্রবেশ এবং বাম পা দিয়ে বের হলে তো তেমন কঠিন হয় না। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা ও বের হওয়ার সময় বাম পা ব্যবহার করতেন (হাকিম-১/২১৮; বাইহাকি-২/৪৪২)।
৭. স্মার্ট ফোনে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি অ্যাপস দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে সময় ব্যয় করে থাকি। কুরআন অ্যাপসে একটু সময় দিতেই তো পারি।
৮. আমরা যেহেতু নিয়মিত পথ দিয়ে চলাচল করে থাকি, পথের কষ্টদায়ক বস্তু দেখলে তা সরিয়ে দিতেও তো পারি। একটু কষ্টের ফলে সবার জন্য কল্যাণই বয়ে আনে। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা ঈমানের সর্বনি¤œ শাখা হিসেবে উল্লেখ করেছেন (তিরমিজি-১৯৫৬; বুখারি-৬২২৯; মুসলিম-৩৫)।
৯. প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেহেতু আমাদের শৌচাগারে যেতে হয়, প্রবেশের ক্ষেত্রে বাম পা এবং বাহির হতে ডান পা ব্যবহার করতে তো পারি। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: শৌচাগারে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং ডান পা দিয়ে বাহির হতেন (আবু দাউদ, হাদিস-৩২)।
১০. আমাদের যেহেতু নিয়মিত প্যান্টস (পায়জামা) পরিধান করতে হয়, টাখনুর উপর পরিধান করতেই তো পারি। টাখনুর উপর পরিধান করতে তো তেমন অসুবিধা হয় না; বরং একটু নিচে পরিধান না করে সামান্য উপরে পরিধান করার মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার রয়েছে। মেডিক্যাল সায়েন্স তার প্রমাণ নিশ্চিত করেছে। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কোনো পোশাক পরিধান করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না (বুখারি-৫৭৮৪; আবু দাউদ-৪০৯৩; ইবনে হিব্বান-৫৪৪৭)। অন্য এক বর্ণনায়, রাসূল সা: বলেছেন, কাপড়ের যে অংশ টাখনুর নিচে যাবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে।
ছোট ছোট আমলের মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত থাকে। যদি এরূপ আমলের মাধ্যমে নিজেদের চরিত্র সুন্দর করতে চেষ্টা করি তাহলে আমাদের প্রধান বিষয়গুলো অনুসরণ করা অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠবে। ছোট্ট আমলের বিপরীতে ভালো কিছুর উপস্থিতি বিরাজমান। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতের গালিচায় গড়াগড়ি খেতে দেখলাম (অর্থাৎ শান্তি ও আরামের সাথে সুখময় জীবন কাটাচ্ছে)। মানুষের চলাচলের পথে একটি গাছ ছিল, যার কারণে চলাচলে কষ্ট হচ্ছিল। এ ব্যক্তি তা কেটে দিয়েছিল। ফলে আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে জান্নাতে দাখিল করেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস-১৯১৪)।
অতএব, উপরিউক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা চাইলে এই ছোট্ট আমলের মাধ্যমে আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং জান্নাতে বসবাসের সুযোগও করে দিতে পারেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।