চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী তিন মাসের আগে নতুন করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে উৎপাদন শুরু হচ্ছে না। কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ সূত্র আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) এ খবর নিশ্চিত করেছে। খনি সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী ১০ আগস্ট বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই গত ২৫ জুলাই উৎপাদন বন্ধ করে দেয় চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন খনি এলাকায় তিন লাখ টনের মতো কয়লার মজুত রয়েছে। তা দিয়েই আগামী তিন মাস বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই খনির বাংলাদেশি কর্মীদের বাড়ি চলে যাওয়ার নোটিশ দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দু’দিন ধরে এ নিয়ে বড়পুকুরিয়া খনি এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শ্রমিকরা।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের এক্সএমসি এবং সিএমসি গঠিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আমরা নতুন করে চুক্তি করতে যাচ্ছি। করোনার কারণে এই চুক্তি করতে আরও দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগতে পারে। এই সময় কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। অধিকাংশ শ্রমিক কাজ না থাকায় বাড়ি ফিরে গেছে। চুক্তি করার পর আবার শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনা হবে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বর্তমানে খনির অন্যান্য কাজের জন্য ৩০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছে। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইলে এর আগেও কাজ শুরু করতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে করোনার উপর।
কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, এখন খনির যে স্তর থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে, সেখান থেকে কয়লা তোলা হবে। সেখানে আরও এক থেকে দেড় লাখ টনের মতো কয়লা মজুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে এর আগে ২০১৮ সালের জুন মাসে খনির স্তর (ফেইজ) চেঞ্জ করার সময় যন্ত্রপাতি সরানোর কথা বলে কয়লা উৎপাদন বন্ধ রাখার কথা বলে খনি কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, কয়লার যথেষ্ট মজুত আছে। এরপর জুলাই মাসে এসে হুট করে জানা যায় কয়লা নেই। এরপরই কয়লা চুরির কেলেঙ্কারি নজরে আসে। ব্যাপক আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। তখন কয়লা না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। তবে এখন সে ধরনের শঙ্কা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় বাংলাদেশের একমাত্র এই কয়লাখনি থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়।খনিটির কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়ায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালানো হয়। তবে বরাবরই চাহিদার তুলনায় কয়লার জোগান কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে কম মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এই কেন্দ্র থেকে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, এই কয়লাখনিতে মোট কয়লার মজুত প্রায় ৩০ কোটি টন, যা প্রায় ৬৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এলাকাটিকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়, যথা, উত্তর এলাকা (২৭০ হেক্টর), মধ্য এলাকা (৩০০ হেক্টর) ও দক্ষিণ এলাকা (৮০ হেক্টর)। বর্তমানে শুধু মধ্য এলাকা থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে। চীনা ঠিকাদার কোম্পানি পর্যায়ক্রমে কয়েকটি চুক্তির অধীনে ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে এখান থেকে মোট কয়লা উৎপাদন করেছে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ টন, যা বড়পুকুরিয়ায় মোট কয়লা মজুতের মাত্র ৫ শতাংশেরও কম। বর্তমানে চীনা কোম্পানিটির সঙ্গে সর্বশেষ একটি ৪ বছর মেয়াদি (২০১৭-২১) চুক্তির অধীনে তৃতীয় স্লাইস থেকে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছিল।