রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

রাণীশংকৈল অসুস্থ শিশু জুনাইদকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি

আনোয়ার হোসেন রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

অসহায় মায়ের কোলে অসুস্থ সন্তান জুনাইদ ইসলাম সাগর(৩)। সন্তানের সঠিক চিকিৎসার খোঁজে বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা জেসমিন বেগম। কী করবে? কোথায় যাবেন? তা নিয়ে চোখের পানি ফেলে দিন কাটছে এই মায়ের। কথা বলতে গেলেই নিজের সন্তানের সঠিক চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই মা। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের। সেই ওয়ার্ডের মিরডাঙ্গী পাইকারবস্তি গ্রামের বিপ্লব আলী ও জেসমিন বেগমের একমাত্র সন্তান সাগর। নিজস্ব কোনো ঘরবাড়ি, নেই পরিবার চালানোর মতো কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা। একদিকে সন্তানের চিকিৎসার চিন্তা করছেন মা অপরদিকে সন্তানের চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বাকপ্রতিবন্ধী বাবাও। জন্মের পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও হঠাৎ যেন পরিবর্তন আসে ছোট্ট এই শিশুর জীবনে। ফুলে উঠেছে তার সমস্ত শরীর, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার চোখ, বেড়ে গেছে তার পেট। কিডনিজনিত সমস্যা, প্রসাবের রাস্তায় ইনফেকশন, রক্তে ভাইরাস ও অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত শিশু সাগর। সন্তানের উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চান তারা। সন্তানের এমনি অসুস্থতায় যেন নিরুপায় পরিবারটি। জানা যায়, গত বছরের দিকে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরে শিশু সাগর। এর পর বিভিন্ন মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে দিনাজপুর উত্তরা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় সাগরকে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পরে সে সুস্থ হলেও আবারও অসুস্থ হয়ে পরে শিশুটি। পরে তাকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে অবশেষে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর নিয়ে যেতে বলে। কোনো উপায় না পেয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য নিয়ে অবশেষে রংপুরে নেওয়া হলে সুস্থ হয়ে ওঠে শিশু সাগর। কিন্তু চলতি বছরে যে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। ফুলে উঠেছে তার শরীর, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার চোখ। এবারে প্রায় নিঃস্ব যেন পরিবারটি। সন্তানের সঠিক চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবারটি। এদিকে শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারটি সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন জেলার দুটি ফেসবুকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। একটি হলো ‘হামার ঠাকুরগাঁও’ এবং অপরটি ‘রানীশংকৈল ফেসবুক ব্যবহারকারী গ্রুপ’। ইতোমধ্যে সেই সংগঠনের সার্বিক সহযোগিতায় সেই শিশুটিকে নেওয়া হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজে। সেখানে শিশুটির চিকিৎসার সব খরচ বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন হেল্প হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক রংপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নওশাদ।তিনি বলেন শিশুটির শিশুটির অবস্হা সংকটাপন্ন। শিশু সাগরের চিকিংসা ও মেডিকেলে ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্হা করে দিয়েছি। যথাসাধ্য চেষ্টা করব শিশুটিকে সুস্হ করে বাবা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে। শিশু সাগরকে বাঁচাতে সমাজের সহৃদয় বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি। স্থানীয় ফাতেমা, কুলসুমসহ কয়েকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শিশুটিকে দেখছি এভাবেই কষ্টের জীবনযাপন করছে। বাবা-মা অসহায়, কী করে শিশুটিকে সঠিক চিকিৎসা দেবে? যেখানে নিজেরাই থাকেন অন্যের জমির ওপর সেখানে সন্তানের সঠিক চিকিৎসা কী করে দেবে? সরকার থেকে যদি শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা হয় তাহলে অনেক ভালো হয়। শিশুটির মা জেসমিন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার ছেলে এভাবে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে অনেকদিন মানুষের কাছে টাকা নিয়ে ছেলেটার চিকিৎসা করেছি। এখন আমার বাবার (সাগর) অবস্থা অনেক খারাপ, শরীর ফুলে গেছে, কী করে তাকে বাঁচাব? আমার ছেলেকে ঠিক করার জন্য আপনারা একটু এগিয়ে আসুন। আমি আমার ছেলেকে সুস্থ করতে চাই। ফেসবুকভিত্তিক ‘রানীশংকৈল ফেসবুক ব্যবহারকারী’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাডমিন ও রানীশংকৈল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আকাশ বলেন, ‘হামার ঠাকুরগাঁও’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে স্বেচ্ছাসেবী শামিম হোসেন একটি ভিডিও ও ছবি তুলে পোষ্ট করেন। আমি এই শিশু সাগরকে নিয়ে পোস্ট দেখি। এরপর আমি গ্রুপের সকলকে বলি শিশুটির সঠিক পরিচয় বের করার জন্য। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমাদের এই দুই গ্রুপের সবাই মিলে বিষয়টি নিয়ে সামাাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করি। এরপর আমার টাইমলাইনে রংপুর থেকে একজন শিশুর চিকিৎসার জন্য দায়িত্ব নিতে চান। পরে শিশুটিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আনোয়ার হোসেন বলেন, সেখানে শুধু শিশুটির চিকিৎসার জন্য যে খরচ হবে সেটি বহন করবেন হেল্প হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক রংপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নওশাদ। হাসপাতালে থাকা খাওয়া, আনুষঙ্গিক সব কিছুই আমাদের গ্রুপের সদস্যরা দেখবেন। এ ব্যাপারে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে শিশুর মা জেসমিন বেগমের সঙ্গে এই নাম্বরে (০১৩০৪৮৩৮৩৪০) যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়া শিশুটির খালাতো ভাই আলতাফুর রহমানের বিকাশ/নগদ ও রকেট নাম্বরে (০১৭১৭২০০২২৩) সহায়তা করা যাবে। শিশুটিকে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য (০১৭১৪৮৬২০৬৮) সংবাদকর্মী আনোয়ার হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com