মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

কাঁদো বাঙালি কাঁদো

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

শোকের মাস আগস্টের আজ ১১তম দিন। বাঙালির কান্না আর ব্যথার কথা কবিতা গানে তুলে ধরেছেন এদেশের অনেক কবি ও গীতিকার। যেমন: কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘সমবেত সকলের মতো/আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি/রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেসব গোলাপের একটি গোলাপ/ গতকাল আমাকে বলেছে/আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি/আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।’  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় হত্যা, ক্যু-পাল্টাক্যু ও অপরাজনীতি। ১৯৭৬ সালে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুর পরোয়া না করে কবি নির্মলেন্দু গুণ সাহসিকতার সঙ্গে কবিতায় বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছিলেন। লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদস্বরূপ কবিতা। কবি বলেন, ‘জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রথম কবিতা লিখেছিলাম আমি। সে অনেক বছর আগের কথা। যখন বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যেত না, পরিস্থিতি ছিল প্রতিকূলে। তখন কবিতায় আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছিলাম।’ স্মৃতিচারণা করে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘যৌবনে আমি ছিলাম নিশাচর প্রাণী। রাত ছিল খুব প্রিয়। ঘুরে বেড়াতাম শহরের নানা অলিগলিতে। ১৫ আগস্টের রাতেও ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। মধ্যরাতে শাহবাগে ফেরার সময় দেখি কিছু ট্যাংক দাঁড়িয়ে। তখন আমার মনে খটকা লেগেছিল। সকালে শুনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়েছে। আমি বিস্ময়ে, দুঃখে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম।’ ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর সেরা ভাষণ উল্লেখ করে কবি বলেন, ‘তখন আমি সাংবাদিকতা করতাম। ৭ মার্চ বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলাম বঙ্গবন্ধুর জনসভার সংবাদ সংগ্রহের জন্য। বসেছিলাম ঠিক মঞ্চের কাছে, অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে। খুব কাছ থেকে শুনেছিলাম বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণ।’ শেখ মুজিবুর রহমানকে যেদিন ছাত্রদের সমাবেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়, সেদিনও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। সেই স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ‘অসংখ্য ছাত্র-জনতার সমাবেশে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু একটি নাম শুধু নয়, একটি ইতিহাসও।’
নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই, তাঁর আত্মার মৃত্যু নেই। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন। যত দিন পৃথিবী থাকবে, পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, তত দিন টিকে থাকবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- নিয়ে কবিতা লিখেছেন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কবি মীর গুল খান নাসির।
বেলুচিস্তানের প্রথম সারির কবি মীর গুল খান নাসির (১৯১৪-১৯৮৩)। ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজ জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার থাকায় পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মর্মন্তুদ হত্যাকা-ের সময় মীর গুল খান ছিলেন কারাগারে বন্দী। বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৪ দিন পর ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট কারাগারে বসেই তিনি এই কবিতা লেখেন।
তার কবিতা শিরোনাম ‘ভোর কোথায়?’ এটি বাংলা অনুবাদ করেছেন, রিজওয়ান উল আলম।
এই কবিতাটি দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:, চিৎকার, ক্রন্দন আর শশব্যস্ত আহ্বানের মধ্যে/ উল্লাস করছে অন্ধ জনতা।/ ওরা বলে, ‘এখন ভোর’, কিন্তু জীবনপানে তাকিয়ে/ আমি দেখি রাত্রি, ঘোর অমানিশা।/ বিদ্যুৎ চমকানো আর বজ্রপাতে মনে হয় দূরে বৃষ্টি হচ্ছে,/ কিন্তু বাতাসে বৃষ্টির নামগন্ধ নেই/ রক্তের ধারা বইছে প্রবল।
হে নির্বোধের দল, কোথায় উজ্জ্বল প্রভাত?/ এখানে এখনো ক্রুদ্ধ রাত/ এজিদরূপী সাম্রাজ্যবাদীরা এখনো চূর্ণ করছে/ সাহসী দেশপ্রেমিকের হাড়,/ জনবহুল, চিত্রময় বাংলাদেশে আবারও রক্তের ঝড়।/ সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা আবারও জ্বালিয়ে দিচ্ছে গ্রাম-নগর,/ মহান দেশপ্রেমিক মুজিব নিজ রক্তের সাগরে শায়িত/ সাম্রাজ্যবাদের অভিশপ্ত সেবাদাসেরা তাঁকে/ রক্তের জামা পরিয়ে দিয়েছে এবং বিদ্ধ করেছে বুলেটে/ এজিদের বিরুদ্ধে হোসেনের কাহিনির পুনরাবৃত্তি।/ হে সাহসী কমরেডগণ, এজিদ থেকে সতর্ক হও,/ তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও, পরাস্ত হবে তারা/ তাদের মুখ তাদেরই কিন্তু জবান সাম্রাজ্যবাদীদের।/ সেবাদাসেরা ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের পকেট স্ফীতকায়/ এবং সাহসী দেশপ্রেমিকদের খতম করে দিতে/ সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে জোগান আসতেই থাকবে/ তারা পাঠাবে ভাড়াটে লোক ও অস্ত্র/ এই কাপুরুষদের কোনো দয়া-মায়া নেই,/ এদের কারণেই বিশ্বে এখন ঘোর অন্ধকার।/ মুক্তির শিখা কোথাও জ্বলে উঠলে এরা তা নিভিয়ে দেয় দ্রুত/ বঙ্গবন্ধু মুজিব সপরিবারে নিহত ওদের হাতে/ আবারও স্বাধীনতার পতাকা অর্ধনমিত।/ সাম্রাজ্যবাদীরা আবারও ফিরে গেছে তাদের সেই পুরোনো/ চক্রান্তে, বিশ্বাসঘাতকতায়/ আবারও দ্বন্দ্বের ফয়সালা হচ্ছে বন্দুকের নলে/ আবারও সোনার জমিনে জ্বলছে আগুন
হে বন্ধুরা, এভাবেই সময়ের মুখোমুখি আমরা/ আমার মাতৃভূমি বেলুচিস্তানও জ্বলছে এখন/ ভয় পেয়ো না হে সাহসী যোদ্ধারা, থেমে যেয়ো না,/ কণ্টকিত দুর্গম পথ এখনো অনেক বাকি।/ মুজিবের রক্ত কখনোই বৃথা যাবে না,/ দেশপ্রেমিকের জন্য এ এক অগ্নিপরীক্ষা।/ বেশিক্ষণ নয়, কুয়াশা ও আঁধার সত্ত্বেও/ এই ভয়াল রাত্রি দ্রুত কেটে যাবে/ হৃদয় দিয়ে নাসির স্পষ্ট দেখতে পায়/ বিজয়-পতাকা উড়ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com