মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চকরিয়ার কোনাখালী-ঢেমুশিয়ার ১টি সেতুর অভাবে অর্ধলক্ষ মানুষের ভোগান্তি: ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

অলি উল্লাহ্ রনি চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার)
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১

কেউ কথা রাখেনি

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ও ডেমুশিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মাতামুহুরী নদীর শাখা খালের ওপর স্থায়ী একটি সেতুর অভাবে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ১৪টি গ্রামের অন্তত অর্ধলক্ষ জনগোষ্ঠী। খালের ওপর বর্তমানে স্থিত ঝরাজীর্ণ তক্তার সেতুটি (লালব্রিজ) ভেঙে খালে নিপতিত হওয়ায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে চরম ভোগান্তিতে এসব গ্রামের মানুষ। এতে চরম ভাবে বেকায়দায় পড়েছেন স্কুল, মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী। উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল খালের ওপর নতুন করে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণে দাবী উঠেছে এলাকাবাসী। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মাতামুহুরী নদীর শাখা খাল মধ্যম কোনাখালী ভরামুহুরী খালটি এক সময় খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানকার মানুষের যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা নৌকা দিয়ে পারা পারই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। ছিলনা এলাকার মানুষের তেমন কোন যোগাযোগের রাস্তা-ঘাট ব্যবস্থা। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও কালের পরিক্রমায় দুই ইউনিয়নের মানুষের যাতায়তের ভোগান্তি দেখে বিগত ১৯৯১সালে ভয়াবহ প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পরে বেসরকারী এনজিও সংস্থা কারিতাসের অর্ধায়নে দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী খালের ওপর ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজ নির্মিত হওয়ার পর কয়েক বছর যেতে না যেতেই ওই ব্রীজের কাঠের পাতাটন, পিলার গুলো মরিচিকায় ধরে নষ্ট এবং অকেজো হয়ে ভেঙ্গে যায়। ব্রীজের উপরে থাকা দু’পাশের এঙ্গেল সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাওয়ায় মাদ্রাসা ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনা পতিত হয়ে অনেকই পঙ্গু হয়ে গেছে। বছরের পর বছর দীর্ঘ একযুগের অধিক সময় ধরে দুই ইউনিয়নের সমাজ হিতৈষী কতিপয় ব্যক্তি ও স্থানীয়রা নিজেদের অর্থায়নে শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থীদের যাতায়তের জন্য সেতুটি কাঠের তক্তা বসিয়ে জোড়া তালি দিয়ে মেরামত করে পারাপার করে আসছে। সম্প্রতি সময়ে টানা ভারিবর্ষণে ও ভয়াবহ বন্যায় সেতুর বেশির ভাগ অংশ পানির ¯্রােতে পড়ে ভেঙ্গে যায়। এমনকি কাঠের সেতুর উত্তর পাশ্বের অংশ সম্পূর্ণ তক্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মারাত্মক ভাবে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। বর্তমানে সেতুটি চরম ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়ত করতে ভোগান্তির যেন অন্তনেই। একটি সেতুর অভাবে যাতায়তের ভোগান্তির শিকার হয়ে চাষাবাদসহ নানা ধরণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার জনগোষ্ঠী ও চৌদ্দ গ্রামের বাসিন্দারা। স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, উপকূলীয় দুই ইউনিয়নের মানুষের যাতায়ত সুবিধার্থে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যা স্থানীয়ভাবে লালব্রিজ হিসেবে পরিচিত। সেতু নির্মাণের পর থেকে দুই ইউনিয়নের মানুষের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি হয়। সামগ্রীক ভাবে দুই কূলের মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। যোগাযোগের সহজলভ্যতায় কৃষিপণ্য ও নানা ক্ষেত্রে কোনাখালী ও ডেমুশিয়া ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া, লতাবুনিয়া পাড়া, খাতুর বাপের পাড়া, ডিয়ারপাড়া, সিকদার পাড়া, মুছারপাড়া, জমিদার পাড়া, নোয়াপাড়াসহ অন্তত ১৪টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেতু দিয়ে ভারি যান চলাচল না করলেও মোটর সাইকেল, রিক্সা দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে তক্তার সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে গেলেও কেউই জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছেন না। কোনাখালী দারুল ইরফান মাদ্রাসা হেফজ বিভাগ ও এতিমখানার পরিচালক হাফেজ মৌলানা নুরুল কাদের জানান, দুই ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষ ও শত শত শিক্ষার্থীর যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রথমে লোহার এঙ্গেলের ওপর তক্তা বিছিয়ে ছোট আকারের সেতু নির্মাণ করলেও প্রায় পাঁচ বছর আগে এটি জরাজীর্ণ ও চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় গাছের তক্তা দিয়ে ফের সেতুটি নিজস্ব অর্থায়নে কয়েকদফা মেরামত করলেও বর্তমানে সেই তক্তার সেতুটি ভেঙে পড়েছে খালে। এই পরিস্থিতিতে অসংখ্য স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ১৪ গ্রামের মানুষের যাতায়তে দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই। সেতুটি সংস্কারের অভাবে অকেজো ও ঝরাজীর্ণ হয়ে থাকায় এখানকার মানুষ চরম ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সেতুটি সংস্কার বা স্থায়ী একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। কোনাখালী এলাকার স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলেই নদীতে যখন পানি বৃদ্ধি পাই তখন মানুষের যাতায়ত দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি অনুপযোগী ও সংস্কার বিহীন হয়ে থাকার কারণে নৌকা করেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয়। ডেমুশিয়া মুছারপাড়া এলাকার কৃষক আবদুর রহিম জানান, চাষাবাদের কৃষি পণ্য হাট-বাজারে বেচাকেনা করতে গিয়ে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হয় এখানকার মানুষের। উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতেও ব্যাপক অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ভোট আসলে সব প্রতিনিধি ব্রীজটি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচিত হওয়ার পর বাস্তবে তার বিপরীত। এ পর্যন্ত কোন চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধি তাদের কথা রাখেনি। ব্রীজের কারণে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে ও নদীতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে আসছে। এছাড়াও কোন গ্রামের গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা বা জরুরি কোন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই এখানে স্থায়ী একটি পাকা সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সেতু দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার জানান, স্থায়ীভাবে খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য কোনাখালী এবং ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষথেকে যৌথভাবে প্রস্তাবনা দেওয়া হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এখন নতুন করে এলজিইডিতেও প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, খালে ভেঙে পড়া তক্তার সেতুটি মানুষের চলাচল উপযোগী করতে ও সেতুটি মেরামতের জন্য প্রাথমিক ভাবে যা করার দরকার তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সরেজমিনে সেতু পরিদর্শনপূর্বক নতুন করে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিগত ১০ বছরে কোনদিনও ওই ব্রীজটি দেখতে আসেনি। প্রতিবার নির্বাচনের পূর্বে ব্রীজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে ভোট আদায় করে নিলেও জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কিছুতেই রাখেনা। তারা কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যানের এ ধরনের আচরণে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com