মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

করোনার সীমাহীন চিকিৎসা ব্যয় মানুষকে দরিদ্র করছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ছোট ব্যবসায়ী হাসান চৌধুরী কোভিডের উপসর্গ নিয়ে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসা বাবদ চার লাখ টাকার বেশি বিল পরিশোধ করে হাসানের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা পরিবারের কাছে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এক বছরের মধ্যে হাসানের পরিবারে এটি দ্বিতীয় ধাক্কা। গত বছর তার স্ত্রী কিডনি সমস্যায় ভুগে এক মাস হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মার যান। তখন স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে সমস্ত সঞ্চয় শেষ হওয়ার পর তারা ঋণ নিয়েছিলেন। হাসানের ভাই জানন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের মর্গে পড়েছিল হাসানের লাশ। পরে নিকটাত্মীয় এবং পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তার লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বয়স ৭০ এর কাছাকাছি এবং তিনি অসুস্থ ছিলেন। গত বছর তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর তার অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় তার ছেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর সরকারি হাসপাতালে শয্যা পেতে ব্যর্থ হয়ে তাকে পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেয়া হয়।’ নিহতের ভাই বলেন, ‘হাসান বেশ কিছুদিন আইসিইউতে ছিলেন কিন্তু কোনো বড় চেক-আপ করা হয়নি। তিন দিন পর আমাদের অনুরোধে চিকিৎসকদের একটি দল তাকে দেখেন এবং আইসিইউ থেকে একটি কেবিনে স্থানান্তরের সুপারিশ করেন। একদিন পর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলা হলে তাকে আবার আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দু’দিন পর আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।’ ‘পাঁচ দিনের চিকিৎসার জন্য আমাদের চার লাখের বেশি বিল দেয়া হয়েছে। একদিনে তাৎক্ষণিকভাবে এত টাকা জোগাড় করতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ রিলিজ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে নিকটাত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগতিায় তার লাশ এনে দাফনের ব্যবস্থা করি।’ শহরের নাখালপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মাকসুদুর রহমান তার স্ত্রী ও মেয়েকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা করোনোর পর প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েন।
মাকসুদ বলেন, ‘আমি গত বছর কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম। সম্ভবত, আমি অফিসের কারো মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছি। পরে আমার স্ত্রী এবং মেয়েও আক্রান্ত হয়। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর আমার ভগ্নিপতি তাদের দেখাশোনা করার পর তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একই হাসপাতালে ভর্তি হন।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে তাদের ছাড়পত্র দেয়ার পর যে বিল দেয়া হয়েছে তা আমার পরিশোধের ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। পরে আমার অফিসে ঋণ নিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে অতিরিক্ত মাসের বেতন দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যা আমার হতাশা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আমি আমার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে বিলের কিছু অংশ পরিশোধ করেছি। পরে বিদেশে থাকা আমার একজন বন্ধুর পাঠানো টাকা দিয়ে পুরো বিল পরিশোধ করতে সমর্থ হই।’ চাকরি চলে যাওয়ায় ঢাকায় থাকার সামর্থ্য না থাকায় তিনি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি আমার কন্যার বিয়েও স্থগিত করতে হয়েছিল কারণ আমার কাছে টাকা নেই।’ হাসান এবং মাকসুদের মতো কোভিড -১৯ রোগীদের অনেক দরিদ্র, নি¤œ-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর চিকিৎসার বিল দেখে অবাক হয়ে যান। ইউএনবির সাথে কথা বলার সময় অন্যান্য অনেক কোভিড রোগীর পরিবারের সদস্যরা কষ্টের কথা শেয়ার করেন। আন্তর্জাতিক ডায়রিয়াল রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্য ব্যয়ে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের (এইচইইউ) আরেকটি জরিপ অনুযায়ী, বেসরকারি হাসপাতালে একজন কোভিড রোগীর দৈনিক চিকিৎসায় সাধারণ শয্যার জন্য গড় খরচ ৩৭ হাজার ১২৮ টাকা এবং একটি আইসিইউ শয্যার জন্য ৬৮ হাজার ৮৮৫ টাকা। ইউএনবির সাথে আলাপকালে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডিজিএইচএস’র সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যয়বহুল, বর্তমান কোভিড মহামারির কারণে এটি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটি প্রচলিত যে, প্রচুর পরিমাণে ওষুধ লিখে দেয়া এবং প্রচুর পরীক্ষা -নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়। ‘আমাদের দেশে কোভিড চিকিৎসার জন্য অনেক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী নয়। কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য মূলত দুটি জিনিস-অক্সিজেন এবং ডেক্সামেথাসোন প্রয়োজন। ডেক্সামেথাসোনের দামও খুব কম। কিন্তু আপনি যদি এখানে কোভিড রোগীদের ওষধের তালিকা দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে তাদের অনেককে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের বাইরে দেয়া হচ্ছে। ডা. বে-নাজির বলেন, সরকারের উচিত মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি করা যাতে জনগণকে এই ধরনের ঝামেলা ও দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে রক্ষা পায়।
এছাড়া তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে বাজেট বরাদ্দকে কাজে লাগাতে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা ও দক্ষতার উন্নতির দিকে নজর দেয়া উচিত। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান এম এইচ চৌধুরী (লেনিন) বলেন, কোভিড চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দরিদ্রদের পক্ষে এটি বহন করা কঠিন। তিনি বলেন, ‘কোভিড রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত ছিল সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত হাসপাতাল স্থাপন করা। কিন্তু সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করলে কোভিড চিকিৎসার জন্য জনগণকে তাদের জমি এবং বসতবাড়ি বিক্রি করতে হবে না।’ লেনিন বলেন, ‘সরকারের সঠিক পর্যবেক্ষণের অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বিলের ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা রয়েছে। সরকারের উচিত এগুলো গুরুত্বের সাথে দেখা।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com