শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

সূরা মুমিনুনের আলোকে সফলতা

খাদিজা বিনতে জহির (সুমাইয়া):
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

‘সাফল্য’ শব্দটি যেমন সংক্ষিপ্ত, তেমনি তা সুদূরপ্রসারী অর্থ বহন করে। যেকোনো মানুষের কাছেই সফলতার চেয়ে আরাধ্য আর কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ দুনিয়াতে কখনোই পূর্ণাঙ্গ সাফল্য অর্জিত হতে পারে না। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া হচ্ছে কষ্ট ও শ্রমের স্থান। পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সাফল্য তো একমাত্র জান্নাতেই পাওয়া সম্ভব। এ কারণেই তো ‘সফল’ জান্নাতিরা তাদের জন্য নির্ধারিত চিরস্থায়ী আবাসে প্রবেশের সাথে সাথে বলবে, ‘এখন আমাদের দুঃখ দূর হলো!’
তবে কখনো কখনো আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে দুনিয়াতেও তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সফলতা দান করেন; কষ্ট-লাঞ্ছনা, দুঃখ থেকে মুক্তি দান করেন। পবিত্র কুরআনের সূরা মুমিনুনের প্রথম ১০ আয়াতে সাতটি গুণ বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা সেসব মুমিনদেরই সাফল্য দান করার ওয়াদা করেছেন যারা আয়াতে উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত।
‘সাফল্যের সিঁড়ি’ হিসেবে আল্লাহ তায়ালা সূরা মুমিনুনে যে গুণগুলো উল্লেখ করেছেন তা হলোÑ
নামাজে ‘খুশু’ তথা বিনয় নম্র হওয়া : খুশুর আভিধানিক অর্থ হচ্ছেÑ স্থিরতা। নামাজে এই স্থিরতার অন্যতম শর্ত হচ্ছেÑ নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা, আল্লাহর অস্তিত্ব ছাড়া অন্য কিছুর কল্পনাকে অন্তরে উপস্থিত না করা। আর এটাই হচ্ছে নামাজের ‘মোস্ট চ্যালেঞ্জিং পার্ট!’ পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, আল্লাহ আপনাকে দেখছেন এরকম মনোভাব ধারণ করে, বিনয়-নম্রতার সাথে প্রতিদিন পাঁচবার জায়নামাজে দাঁড়াতে পারলেই মুমিন হিসেবে আপনি সফলতার প্রথম সিঁড়ি পার হয়ে যাবেন।
পাশাপাশি নামাজে অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত থাকাও ‘খুশুর’ অন্তর্ভুক্ত। ফিকহবিদরা এরকম নড়াচড়াকে ‘মাকরুহ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: এক ব্যক্তিকে নামাজে দাড়ি নিয়ে খেলা করতে দেখে বললেন, ‘এই ব্যক্তির অন্তরে খুশু থাকলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতা থাকত’ (মাজহারি)।
অনর্থক বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা : আয়াতে অনর্থক বিষয়াদি বলতে এমন উঁচু স্তরের গুনাহকে বোঝানো হয়েছে, যেসব অনর্থক কথা বা কাজে কোনো ধর্মীয় উপকার তো নেই-ই বরং ক্ষতি রয়েছে। এসব থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। আর যেসব অনর্থক কথা বা কাজে কোনো ক্ষতিও নেই-উপকারও নেই সেগুলো থেকে বিরত থাকা উত্তম ও প্রশংসনীয়।
জাকাত প্রদান করা : আল্লামা ইবনে কাসিরসহ প্রমুখ তাফসিরবিদের মতে, সূরা মুজ্জাম্মিলের সর্বশেষ আয়াতে নামাজ কায়েমের সাথে জাকাত প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে মক্কায়-ই জাকাত ফরজ হয়েছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে জাকাত আদায় করার ব্যবস্থাপনা এবং নিসাবের বিস্তারিত বিবরণ মদিনায় হিজরতের পর স্থির হয়। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন সে যদি তার জাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তা একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে যার চোখের ওপর দুটি কালো চিহ্ন রয়েছে। সে তার গলায় ঝুলবে এবং উভয় গালে দংশন করবে। তারপর সে বলবে আমি তোমার সম্পদ, আর আমি-ই তোমার সঞ্চিত ভা-ার। …’ (বুখারি)
যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে সংযত রাখা : যারা স্ত্রী ও শরিয়তসম্মত দাসীদের ছাড়া অন্যান্য সব নারী থেকে যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে এবং এই দুই শ্রেণীর সাথে শরিয়তের বিধিমোতাবেক কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কারো সাথে কোনো অবৈধ পন্থায় কামবাসনা পূর্ণ করতে প্রবৃত্ত না হয়, আরশের মালিক তাদের জন্যও সফলতার দরজা খোলা রেখেছেন।
আমানত রক্ষা করা : বৃহৎ অর্থে ‘আমানত’ শব্দটির মধ্যে আল্লাহর হক এবং বান্দার হক উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর হক সম্পর্কিত আমানত হচ্ছেÑ শরিয়তের নির্ধারিত যাবতীয় ফরজ ও ওয়াজিব পালন করা এবং সব হারাম ও মাকরুহ বিষয়াদি থেকে আত্মরক্ষা করা। আর বান্দার হক সম্পর্কিত আমানতের মধ্যে আর্থিক আমানতের পাশাপাশি কেউ কোনো গোপন কথা কারো কাছে বললে তাও তার আমানত। অনুমতি ব্যতীত কারো গোপন তথ্য ফাঁস করা আমানতের খিয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে রাসূল সা: আমানতের খিয়ানতকারীকে মুনাফিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অঙ্গীকার পূর্ণ হওয়া : অঙ্গীকার বলতে প্রথমত, এমন চুক্তিকে বোঝায় যা উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতার ভিত্তিতে সংগঠিত হয়। এ ধরনের চুক্তি পূর্ণ করা ফরজ এবং ভঙ্গ করা বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা তথা হারাম। আমাদের সমাজে অঙ্গীকারের সমার্থক হিসেবে ওয়াদা শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। একতরফাভাবে একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার অথবা অন্যজনের কোনো কাজ করে দেয়ার এরূপ ওয়াদা পূর্ণ করা শরিয়তের আইনে ওয়াজিব। হাদিসে আছেÑ ‘ওয়াদা এক প্রকার ঋণ’। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।
নামাজে যতœবান হওয়া : সফলতার সাতটি সিঁড়ি উল্লেখ করতে গিয়ে একদম শুরুতে যেমন নামাজে বিনয়-নম্র হওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তেমনি সর্বশেষ গুণ হিসেবেও নামাজের প্রতি যতœবান হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সালাতে ‘যতœবান’ হওয়া বলতে মুস্তাহাব ওয়াক্তে গুরুত্বের সাথে সালাত আদায় করা উদ্দেশ্য।
সূর্য উঠার আগ মুহূর্তে কোনো রকম ফজর, সূর্য ডুবে যাওয়ার ১০ মিনিট আগে আসর, রাত ১২টায় এশাÑ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিদিন এরকম শেষ ওয়াক্তে গিয়ে সালাত আদায় করলে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য ‘আরাধ্যই’ থেকে যাবে। শিক্ষার্থী, আবেদা-নূর ফাজিল মাদরাসা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com