আইন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, সামনে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে যাচ্ছে। সংবিধানের ১১৮ -এর ১ বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন কমিশনার নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। এ বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করবেন। খুব সহজভাবে আমরা এটা বুঝতে পারি, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইন থাকতেই হবে এবং আইনের ভিত্তিতেই কেবল নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ নিয়ে কিন্তু আইনের কথা বারবার আসে। কিন্তু সেখানে তিনটা অপশনের একটা হচ্ছে আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে এরকম আর কোনো অপশন রাখা হয়নি। এখানে আইন প্রণয়ন বাধ্যতামূলক। এখানে আইন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। আর এই কমিশনের কোনো অন্যায় বা ব্যত্যয়ের বিধান এই আইনে রাখা হয়নি। আমরা আজকে ভোটার দিবসের কথা শুনি, ভোটার তালিকা তৈরির কথা শুনি, সীমানা নির্ধারণের কথা শুনি, নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা শুনি। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনের পরে এই শব্দগুলোর আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা সেই প্রশ্ন আমি সংসদে রেখে গেলাম।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, ১১ এপ্রিল ২০১২ আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন দুজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তারমধ্যে একজন মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ইইঝ) অনেক সময় আমাদের ভুল তথ্য দেয়। তারা সঠিকভাবে আদমশুমারি করে না। তারা যে তথ্য দেয় তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।’ তিনি আরো যুক্ত করেন, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৮০ লাখ নয়। ওই মন্ত্রী আরো বলেন, আমিতো মন্ত্রী পড়ায় থাকি না, যে এলাকায় থাকি সে এলাকায় ‘ইইঝ’ ভালোভাবে লোক গণনা করেনি। মাননীয় স্পিকার, উনি আমাদের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সেই একই সভায় তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য বরাদ্দের হিসাব দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, ‘ইইঝ’ এর আদমশুমারিতে বাস্তবতা বিবর্জিত তথ্য আসছে। মাননীয় স্পিকার, আমি যে ঘটনার কথা বললাম এটি ২০১১ সালে হওয়া পঞ্চম আদমশুমারির পরের ঘটনা।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের মূল কারণ জনসংখ্যার পুনঃবিন্যাস। ২০২১ সালে ষষ্ঠ আদমশুমারি হওয়ার কথা। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে আবার সীমানা নির্ধারণ হওয়ার কথা আছে। জনগণের সমর্থন না পাওয়া সরকার ২০১১ সালের আদমশুমারি নিয়ে যে খেলা খেলেছে সেটা দেখলে যে কেউ খুব সহজে বুঝে যাবে নির্বাচনের এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আদমশুমারি এখন কতটা ভয়াভহ হতে পারে। এই আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে কিভাবে সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা সম্ভব?’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, এই বিল পড়তে গিয়ে সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদ পড়লাম। সেখানে উল্লেখ আছে, একক নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হবার কথা। মনে পড়ে গেল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের কথা। যখন একটি মাত্র ভোট পড়ার আগেই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের বেশি আসন জিতে গিয়েছিলো ক্ষমতাসীন জোট। এরপর রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সেই ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করা হয়। ভবিষ্যতে মানুষ আর কবে প্রত্যক্ষ ভোট দিতে পারবে সেটা আল্লাহ মালুম।’