বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায় : প্রধানমন্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আওয়ামী লীগ যখন দেশের ক্ষমতায় আসে, তখন উন্নতি হয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যখন সরকারে আসি, তখন আন্তরিকতা, আদর্শ, নীতি ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। কারণ এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। পাশে থেকেছে জনগণ। কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে যারা ক্ষমতায় বসে, তাদের সেই দায়বদ্ধতা থাকে না। ক্ষমতাটাকে ভোগের জায়গা বানায়। অর্থ-সম্পদ বানানোর একটা মেশিন হিসাবে পায়। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো খেয়ালই থাকে না। এটা হলো বাস্তবতা।’
বুধবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ভবন, উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডেটা ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন নিয়ে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায়, দেশের উন্নতি হয়, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দপঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা যখন শুরু হলো। তখন থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট হতে শুরু করে। বাংলাদেশ নাম শুনলে মনে করত দুর্ভিক্ষ, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করতে, যা আমরা করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দবিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকগুলো ভূমি অফিস জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। ছয়টি ভূমি অফিসসহ অনেকগুলো অফিস তারা নষ্ট করে দেয়। তখন একটা ঘোষণা করেছিলাম যে, যারা এই ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে, তাদের যেন আর কোনো দিন জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারা তো আগুন দিয়ে রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই মালিকানা কেন পাবে? এই হুমকি দেওয়ার পরে তাদের ভূমি পোড়ানো বন্ধ হয়। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। কারণ তারা তো আর মানুষের জন্য কাজ করে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, দবিএনপি সামরিক শাসকের হাতে তৈরি করা একটা সংগঠন। তাই মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধও নেই। দেশের জন্যও নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতায় থেকে টাকা বানানো, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি তাদের কাজ। সেটাই তাঁরা করেছে।’
স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর ভূমি সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, স্বাধীনতার পরে কৃষকদের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করেন। ভূমি কর মাফ করেন। সেই সঙ্গে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। তিনি আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, একজন মানুষের নামে সর্বোচ্চ কতটুকু জমি থাকবে। ১০০ বিঘা পর্যন্ত একটা সিলিংও তিনি করে দিয়েছিলেন। তার একটা লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দসারা পৃথিবীতে যখন নগরায়ণ শুরু হয়। তখন যদি সেটা সুপরিকল্পিত হতো, তাহলে আর অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখন শুরু হয়, ঠিক পরিকল্পনামাফিক হয় না। নগরায়ণের চাপে আমরা একদিকে যেমন কৃষিজমি হারাই, বনায়ন ধ্বংস হয়, পরিবেশ নষ্ট হয়। এটা খুব স্বাভাবিক নিয়মই ছিল। আমরা সরকারে আসার পরে প্রচেষ্টাই ছিল ভূমি ব্যবহার, ভূমির উন্নয়ন, ভূমিকে যথাযথভাবে রক্ষা করা ও কৃষি জমি রক্ষা করা। মানুষের বসতিটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। এসব বিষয় আমরা চিন্তা করি। ভূমি ব্যবহারের জন্য যে একটা নীতিমালা প্রয়োজন, তা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করেছিলাম। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে কতগুলো পদক্ষেপও গ্রহণ করি।’
হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দআমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে চাই। সারা দেশের ভূমি অফিসগুলোর যে জীর্ণ দশা। আমাদের আগে তো অনেকই ক্ষমতায় ছিল। কেন এগুলো সংস্কার করেনি এটা বড় প্রশ্ন। দেশে ডিজিটাল টেলিফোন ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আমরাই তা করি। মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিই। এখন আমরা ফোরজি চালু করেছি। ফাইভজিও চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক কাজ সহজে করতে পারেন। ট্যাক্স, খাজনা যাতে দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ভূমির মালিক এখন অফিসে না গিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর দিতে পারেন।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, ৩ কোটি হোল্ডিংয়ের মধ্যে ১ কোটির ডেটা এন্ট্রি এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। তা শেষ হলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। যাতে সময় ও খরচ বাঁচবে। হয়রানি থেকেও মানুষ রক্ষা পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জলমহল, হাওর-বাঁওড়, চা-বাগান, লবণমহাল, চিংড়িমহাল, হাটবাজার, খাসজমি ও অধিগ্রহণকৃত জমির ডেটাবেইস ছিল না। তা না থাকার কারণে তথ্য পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ভূমি নিয়ে। এই ভূমি কোথায় পাওয়া যাবে, কীভাবে হবে, অধিগ্রহণ করা, তার মালিকানা খোঁজা এবং তাদের অর্থ পরিশোধ করা। এটা অনেক ঝামেলা। ডিজিটালাইজ হওয়ায় সুবিধা হবে।
দেশের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দআমাদের চাষ উপযোগী ভূমি রক্ষার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, যেখানে শিল্পায়ন হবে, যার মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান হবে, রপ্তানি বাড়বে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে।’
সরকারপ্রধান বলেন, দবাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। করোনাভাইরাস আমাদের কিছুটা ক্ষতি করেছে। শুধু আমরা না, সারা পৃথিবীতে এই সমস্যা হয়েছে। তার মাঝেও আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা অব্যাহত আছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যেটা পারতাম, সেটা না পারলেও আমরা কিন্তু থেমে যাইনি। আমরা থেমে যাব না। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাব।’
শেখ হাসিনা বলেন, দআমাদের দেশে অনেক সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়। মামলা-মোকদ্দমা সব থেকে বেশি হয় এই ভূমি নিয়েই। ভূমির সঙ্গে মানুষের একটা বন্ধন ও অধিকার রয়েছে। আবার অধিকারহারাও হতে হয় মানুষকে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com