বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

কুরআনের ছায়ায় জীবনযাপন

আহনাফ আবদুল কাদির :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আমাদের পূর্বসূরিদের কুরআনের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। শুধু পাঠে নয়, তাদের চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে ছিল খোদায়ি বাণীর পূর্ণ প্রতিফলন। যেকোনো সমস্যায় তারা কুরআন থেকে সমাধান খুঁজতেন। রাতের পর রাত তাদের অনায়াসে কেটে যেত কুরআন গবেষণায়। একটি কিংবা দুটি আয়াতের মর্ম উদ্ধারে নির্ঘুম রাত কাটাতেন। জীবনের প্রতিটি পদে তারা কুরআন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে কুরআনের ১০টি করে আয়াত ভালোভাবে শিখে নিতাম এবং তার মর্মার্থ পুরোপুরি বুঝেশোনে আমলে পরিণত করার আগে সামনের আয়াত শিখতাম না। এভাবে আমরা পুরো কুরআন শিখতাম ও আমলে পরিণত করতাম’ (জামেউল বায়ান-১/৩৫)। তাবেয়ি হাসান বসরি রহ: বলতেন, ‘কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে অনুযায়ী আমল করার জন্য। তোমরা তোমাদের তিলাওয়াতকে আমলে পরিণত করো’ (মিফতাহু দারুস সায়াদাহ লিইবনিল কাইয়িম-১/১৮৭)।
প্রভুর সাথে স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে দেয় কুরআন। কুরআনের সাথে যার সম্পর্ক যত মধুর, রবের সাথে তার সম্পর্ক তত নিবিড়। মানুষের মনোজগৎ পরিবর্তন করে সোনার মানুষে পরিণত করে কুরআনুল কারিম। তাই মক্কার কাফেরদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল কুরআন থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখা। মক্কার মাথাওয়ালা কাফেররা সাধারণ মানুষকে কুরআন শুনতে বারণ করতেন যাতে সত্য গ্রহণে তাদের অন্তর খুলে না যায়। কুরআনুল কারিমে বিষয়টি মহান আল্লাহ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘অবিশ্বাসীরা বলে, তোমরা এই কুরআন মনোযোগ দিয়ে শুনবে না, বরং শোরগোল তৈরি করবে। তবেই তোমরা বিজয়ী হতে পারবে’ (সূরা হামিম সিজদা-২৬)। তবুও কুরআনের বাণী আড়ালে থেকে শুনত তাদের কেউ কেউ। এর জাদুকরী স্পর্শে তাদের কারো কারো অন্তর শীতল হয়ে যেত। প্রভুর বাণীর কাছে সমর্পিত হতো চিন্তার জগত। এভাবে কুরআনের কাছে যে নিজেকে সঁপে দেয়, সে পায় মহান রবের সন্ধান।
অথচ আমাদের কাছে আজ কুরআন প্রাণহীন গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। আমাদের কেউ কেউ কুরআন পড়তে পারলেও এর মর্মার্থ অনুধাবনে সচেষ্ট নই। কুরআন গবেষণায় কার্যকরী উদ্যোগ নেই। এমনকি এর প্রয়োজনীয়তাও আমরা উপলব্ধি করি না। ফলে অনেক কিছু জানলেও কুরআনের মর্মবাণী না জানার কারণে রবের সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আমাদের জীবনে কুরআনের প্রতিফলন ঘটে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা ঝুলানো’ (সূরা মুহাম্মদ-২৪)? আরো বলা হয়েছে, ‘আমি আপনার প্রতি বরকতময় গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি। যাতে তারা এর আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বিবেকবানরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা সোয়াদ-২৯)। কুরআনের বহু আয়াতে কুরআন বোঝার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অথচ আমাদের কুরআন অধ্যয়ন আজ শুধু তিলাওয়াতেই সীমিত। বিশ্ব মুসলমান আজ কুরআন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। তাই ক্রমেই জ্ঞানের জগত থেকে তারা পিছিয়ে পড়ছে।
হাসান বসরি আক্ষেপ করে বলতেন, ‘তোমরা এখন কুরআন তিলাওয়াতকে কয়েকটি মানজিলে পরিণত করেছ এবং রাতকে পরিণত করেছ উটের বাহনে। তোমরা এ উটের বাহনে চড়ে মানজিলগুলো অতিক্রম করে চলে যাচ্ছ। অথচ তোমাদের পূর্বসূরি ঈমানদাররা কুরআনকে তাদের রবের পক্ষ থেকে বার্তা হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারা রাতে কুরআন নিয়ে গবেষণারত থাকতেন এবং দিনে তা কার্যকর করতেন’ (আত-তিবইয়ানু ফি আদাবি হামালাতিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৫৪)।
নবীজী সা: বলেছেন, ‘কুরআন পড়ো। মনে রেখো, কুরআন যা নিষেধ করে তা যদি বর্জন করতে না পারো, তবে তোমার কুরআন পড়াই হয়নি’ (মুসনাদুশ শামিয়িন-১৩৪৫)। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা কুরআন পড়ি না। কুরআন বুঝার চেষ্টা করি না। যদিও কিছুসংখ্যক মানুষ কুরআন বুঝার চেষ্টা করেন; তবুও আগে থেকে চিন্তা-চেতনায় জেঁকে বসা মাজহাবি গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হতে না পারায় কুরআনের মর্মবাণী বুঝতে ব্যর্থ হন।
ড. আকরাম নদভী আফসোস করে বলেন, ‘আমাদের দার্শনিক, ফুকাহা, সুফি ও মুতাকাল্লিমরা কুরআন অধ্যয়ন করতে গিয়ে তাদের মাথায় আগে থেকে বিদ্যমান থাকা কিছু ধারণা কুরআনের ওপর চাপাতে চেষ্টা করেন। যেমন, দার্শনিকরা কুরআনে শুধু দর্শন খুঁজে পান। কুরআনের যেখানেই দর্শনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কিছু আলোচনা থাকে সেটাকে তারা নিজেদের মতবাদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেন। ফকিহরা নিজেদের মাজহাবের পক্ষে কুরআন থেকে প্রমাণ খুঁজতে থাকেন। তারা হানাফি, শাফেয়ি, মালিকি, হাম্বলি, আশয়ারি কিংবা মাতুরিদি দৃষ্টি দিয়ে কুরআন পড়েন। ফেমিনিস্টরা কুরআনকে ফেমিনিজম অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেন। এটাই কুরআন অধ্যয়নে সমস্যা। কুরআন থেকে হিদায়াত নিতে হলে মনকে পূর্ব ধারণা থেকে মুক্ত করতে হবে। তারপর খালি মনে কুরআন বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে আরেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেন গল্পকার ওয়ায়েজরা। তারা মানুষকে শেখানোর আগেই তাদের অন্তর গলাতে চান। লোকেরা তাদের কথার সুরে, ম্যাসেজ না বুঝেই কান্না শুরু করে।
কুরআন আজ আমাদের মুখে মুখে উচ্চারিত গ্রন্থে রূপ নিয়েছে। গল্পকার ওয়ায়েজিন ও ফেরকাবাজদের বানোয়াট তাফসিরের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আমাদের মন-মগজ ও কর্ম থেকে তো বহু আগেই কুরআন বিদায় নিয়েছে। কুরআনের বিপরীতে চলছে আমাদের পুরো জীবন। কুরআনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে মহান আল্লাহর বাণী হিসেবে এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। মাজহাবি গোঁড়ামির ঊর্র্ধ্বে উঠে যুগ সমস্যার সমাধানে কুরআন গবেষণায় এগিয়ে আসতে হবে । লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com