প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে। রবিবার জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৪তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য মেহের আফরোজ, আলী আজম এবং মোশারফ হোসেন বৈঠকে অংশ নেন। এদিন এর আগে অনুষ্ঠিত সব বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত/সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন উপস্থাপন ও পর্যালোচনা করা হয়। মন্ত্রণালয় হতে জানানো হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শূন্য পদের বিপরীতে এবং ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকসহ অন্যান্য সহায়ক জনবলের বিপরীতে পদ সৃজন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে যেসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা নেই, সেসব বিদ্যালয় নির্বাচিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য কমিটি পুনরায় সুপারিশ করে। বৈঠকে জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক এখনও বেতন পাননি দ্রুত তাদের বেতন প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। এছাড়াও এডিপিও পদে কর্মরতদের ডিপিও পদে পদোন্নতির বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরুপণপূর্বক যোগ্য এডিপিও পদে কর্মরতদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
কমিটির ইতোপূর্বে সুপারিশকৃত স্কুল ফিডিং প্রকল্পে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে শিক্ষার্থীদের মাদেরকে সম্পৃক্ত করে এবং মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকল্পে উপবৃত্তির অর্থের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত বরাদ্দের বিষয়ে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে অবহিত করার জন্য বলা হয়। বৈঠকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রাপ্ত সেসব শিক্ষকের মেধা দেশের অন্য কোনো উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো যায় কিনা তা বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিকে জরুরি নির্দেশনা: দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জরুরি নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিভাগীয় উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা, পিটিআইয়ের সুপারিনটেডেন্ট, উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে অনুমোদিত মেন্টরিং গাইডলাইন অনুযায়ী করে মেন্টরিং টুলস ব্যবহার করে প্রতিদিন পাঁচটি বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত শিখন ঘাটতি চিহ্নিত ও নিরাময়যোগ্য পাঠ পরিকল্পনা (অপপবষবৎধঃবফ জবসবফরধষ খবধৎহরহম চষধহ) অনুসারে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
অফিস আদেশে জানানো হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষার্থী উপস্থিতির তথ্য এবং শিখন ঘাটতি পূরণে গ্রহণ সম্পর্কিত মেন্টরিং টুলস প্রস্তুত করা হয়েছে এবং পাঠানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের মেন্টর বিদ্যালয় পরীবিক্ষণের পাশাপাশি সংযুক্ত টুলস ব্যবহার করতে হবে। মেন্টরগণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত মেন্টরিং গাইডলাইন অনুযায়ী মেন্টরিং টুলস ব্যবহার করে প্রতিদিন ৫টি বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করাসহ তথ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মেন্টরদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসার্চ সেন্টার (ইউআরসি) ও থানা রিসার্চ সেন্টারের (টিআরসি) ইনস্ট্রাক্টর, সহকারী ইউআরসি ও টিআরসি ইনস্ট্রাক্টর।
‘বাড়ছে আরও একটি ক্লাস’: মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদানে শিগগিরই আরও একটি বিষয় যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হয় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। শুরুর দিন থেকে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন দুটি বিষয়ের শ্রেণি পাঠদান অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শ্রেণি পাঠদান দুই বিষয়ের সঙ্গে আরও একটি বিষয় যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো ছয় দিন ক্লাস করছি। নতুন কারিকুলামে যখন যাবো তখন পাঁচ দিন শ্রেণি পাঠদান করার কথা। দ্বাদশ ও দশম শ্রেণি প্রতিদিনই ক্লাস করছে। বাকি ৪টি শ্রেণি চার দিন আসছে। বাকি দুদিনে অষ্টম ও নবম শ্রেণি আসুক।’ তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ম মানতে দেখছি। যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসছে তাদের প্রত্যেকের দুটি ক্লাস। দুটি ক্লাসের সময় ৮০ মিনিট। অভিভাবকরা ভাবছেন, বাচ্চারা দূর-দূরান্ত থেকে আসছে, এটা বাড়িয়ে চারটি ক্লাস করে দেওয়া যায় কিনা। কিন্তু চারটি ক্লাস করতে হলে খাবারের বিষয় থাকবে। তখন আবার মাস্ক খুলতে হবে। বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এলে শেয়ারিং হবে। এতে করোনার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই আমরা এখন চিন্তা করছি তিনটি ক্লাস নেওয়া যায় কিনা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকবো।’