শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ অপরাহ্ন

পথ-প্রদর্শকদের আবির্ভাব

ফাতিমা আজিজা :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১

আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজতে গেলে দেখি যুগে যুগে কত শত নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেননি। বরং আমাদের সঠিক সরল পথটি দেখানোর জন্য সব জাতির আদর্শ হিসেবে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। সৃষ্টির শুরুতেই প্রথম মানুষ সৃষ্টি করেছেন আদম আ:কে একজন নবী হিসেবে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য। এরপর নূহ আ: মূসা আ: ঈসা আ: ইবরাহিম আ: এভাবে সর্বশেষ মুহাম্মদ সা:। সেই নবী-রাসূলদের কাজ একটাই ছিল যে, একমাত্র আল্লাহর বাণী পৌঁছানো।
সৃষ্টিকর্তা জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের জীবনের লক্ষ্য কী। ইহকাল-পরকালে মানুষ কী পাবে, কিসে মানুষের মুক্তি আর কিসে মানুষের ব্যর্থতা। কী কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে আর কী কী পুরস্কার মানুষ অর্জন করতে পারে।
মহান আল্লাহর অপার করুণা বলে ৪০ বছর বয়সে হজরত মুহাম্মদ সা: সত্যের সন্ধান তথা নবুওয়াত ও রিসালাত পান। তিনি আসমানি বাণীর মাধ্যমে মানবসমাজের সব সমস্যার সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধানের আল্লাহ প্রদত্ত পথ দেখান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী’ (সূরা আনআম)। (তিনিই আল্লাহ) ‘যিনি সারা দুনিয়ার বরকতের উৎস সমগ্র জাহানের মানুষের সতর্কীকরণের উদ্দেশ্যে তাঁর বান্দার (হজরত মুহাম্মদ সা:) প্রতি সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কিতাব (পবিত্র কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন’ (সূরা ফুরকান)। (জেনে রাখুন) ‘হে নবী! প্রত্যেক জাতির জন্য যেরূপ পথ-প্রদর্শক ছিলেন, (তদ্রুপ) আপনিও পথ-প্রদর্শক হিসেবে মানুষের জন্য সতর্ককারী’ (সূরা রাআদ)। ‘আপনি বলুন, হে দুনিয়ার মানুষ! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ (সূরা আনআম)। ‘হে নবী! আমি আপনাকে বিশ্ব মানবের প্রতি (সৎকর্মের পুরস্কার প্রাপ্তির) সুসংবাদদাতা এবং (পাপকর্মের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে) সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি’ (সূরা সাবা)। ‘হে নবী! আপনি বলুন, (আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি) আমি তো একজন সতর্ককারী’ (সূরা সোয়াদ)। ‘হে নবী! আমি (আল্লাহ) আপনাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা এবং (পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য) ভয় প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছি’ (সূরা বাকারা)।
পবিত্র কুরআনে এ রকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে যেখানে মহান আল্লাহ মানবজাতির পথ-প্রদর্শকরূপে নবী-রাসূলদের পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। বিশ্ব নিয়ন্ত্রক আল্লাহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে পূর্ণ আদর্শের উৎস এবং আঁকর হিসেবে পাঠিয়ে গোটা মানবজাতিকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। বিশ্বনবী সা:-এর পবিত্র জীবনধারা ছিল বিশ্বের সব মানুষের জন্য অনুকরণীয়। তাঁর অনুপম ও নিষ্কলুষ চরিত্রে ছিল সততা-সত্যবাদিতা, অমায়িক ব্যবহার-সদাচার, সংযত আচরণ-সুমধুর বচন, সৌজন্য-ভালোবাসা, মানুষের প্রতি সম্মান ও মর্যাদাবোধ, সব কাজে নিয়মানুবর্তিতা, অটল বিশ্বস্ততা, শ্রমে সহিষ্ণুতা, ব্যবহারে উদারতা, উপার্জন-দান ও বিতরণ, দোষীকে ক্ষমা ও মুক্তিদান। দেশী-বিদেশী, কালো-সাদা, ধনী-দরিদ্র, পর-আপন, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার জন্যই ছিল তাঁর মধ্যে দয়া-দরদ।
আমি কেন এখানে…?
প্রত্যেক মানুষকে এটি স্বীকার করে নিতে হবে যে, মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গ-মস্তিষ্ক, হৃৎপি-, চোখ, কান, নাক, হাত ও পায়ের একটি উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্যই কি আমাদের এখানে আসা নয়?
অত্যন্ত সূক্ষ্ম চিন্তা দিয়ে সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, শুধুই আমাদের আত্মার পরিতৃপ্ততা আর মনের চাহিদা মেটানোর জন্য ঘুরে বেড়ানো কাজ নয়। বরং আমাদের একটি অতি উচ্চমানের উদ্দেশ্য নিয়েই এই পৃথিবীতে আবির্ভাব- সৃষ্টিকর্তাকে একমাত্র উপাস্য এবং তাঁর দেখানো দিকনির্দেশনা মেনে নেয়াই প্রকৃত উদ্দেশ্য। যেই দিকনির্দেশনা আমাদেরকে শিখায় প্রার্থনা করতে এবং সমাজের মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন করতে। সৃষ্টিকর্তা অন্য কোনো উপসর্গকে ইবাদতযোগ্য মনে করতে নিষেধ করে দিয়েছেন এবং তাঁর জন্য অন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সৃষ্টির পরপর তিনি জানিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর জীবন একটি পরীক্ষা মাত্র। কিন্তু পরকালের জীবন আসল জীবন যেই জীবনে যেতে হলে ভালো পথে চলতে হবে এবং অগণিত পুরস্কার হিসেবে জান্নাত অর্জন করতে হবে। কিন্তু যদি পথভ্রষ্ট জীবন পরিচালনা করা হয় তবে পরকালীন কঠিন শাস্তি জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। মানুষের জীবনে কী ঘটবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও কিভাবে মানুষ প্রতিক্রিয়া করবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উত্তম প্রতিক্রিয়া আর ধৈর্যের রয়েছে বিশাল পুরস্কার।
তাহলে এখন আমি কি করতে পারি…?
সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য মানুষের যেই জীবন হবে সহজ সরল পথের সেই জীবন হবে পুরস্কারপ্রাপ্ত। আর এই সহজ সরল পথে যারা নিজেদের পরিচালনা করে যাবে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের বলা হয় ‘মুসলিম’।
সৃষ্টিকর্তা একজন এবং অমুখাপেক্ষী যাকে আরবিতে বলা হয় ‘আল্লাহ’। তিনি ইসলামকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং বাধ্যতামূলক করেছেন। ইসলামকে চলার একমাত্র পথ বলেছেন। একজন মানুষ একটি স্বীকারোক্তি যখন মনে-প্রাণে, কাজে-কর্মে বিশ্বাস করে নেবে তখনই সে হবে মুসলিম, তার কালিমা হলো- ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, হজরত মুহাম্মদ সা: হচ্ছেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।’ এখনো কি সময় আসেনি আপনার সৃষ্টিকর্তাকে চিনে এবং তাঁকে পরিপূর্ণ বিশ্বাস করে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার?




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com