সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার লোহাগাড়ায় ১০৬ টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পূজা উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবার দেবী দূর্গা মর্ত্যলোকে আসছেন ঘোটকে চড়ে আর দোলায় ছড়ে দেবলোকে ফিরে যাবেন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এবছরও সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে কমিটির নেতৃবৃন্দরা। সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই শেষ মহুর্ত্বে চলছে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা। তুলির আঁচড়ে রাঙ্গিয়ে তুলছেন প্রতিমাকে। ইতিমধ্যে সকল পূজামন্ডপ পূজার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এবছর ৬৭ টি প্রতিমা পূজা ও ৩৯ টি ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক পূজামন্ডপ পাচ্ছে ১৭ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ। ১০ অক্টোবর সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত উপজেলা পিআইও অফিসে প্রত্যেক পূজামন্ডপ কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে পূজার সরকারি বরাদ্দের টাকা বিতরণ করা হয়। এদিকে জাঁকজমকপূর্ণ পূজার আয়ােজনে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়ােজকরা। মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমাগুলাে সারিবদ্ধভাবে সাজানাে হচ্ছে। কাল থেকেই শারদীয় দূর্গোৎসবের ঢােলের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হবে পূজামন্ডপ ও পাড়া-মহল্লা। পূজায় পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক দায?িত্ব পালন করবেন। উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দিরগুলােতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জা। এদিকে লোহাগাড়ায় পূজা কমিটি দুইভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা অনুমোদিত লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি হলেন বড়হাতিয়া ইউপি সদস্য সুনীল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজু ধর রাজ। উপজেলার অন্য পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রসেনজিত পাল ও সাধারণ সম্পাদক নরেন দাশ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজু ধর রাজ বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই শ্লোগানকে ধারণ করে সবাইকে নিয়ে এবং সকল ধরনের শৃংখলা বজায় রেখে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা কমিটির পক্ষ থেকে প্রত্যেকটা পূজা মন্ডব পরিদর্শন করা হবে এবং সার্বক্ষণিক যেকোন ধরনের সহযােগীতা করা হবে। পূজা কমিটির সভাপতি ও বড়হাতিয়া ইউপি সদস্য সুনীল সরকার বলেন, সাপ্রদায?িক সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রতি বছরের মতো এবছরও লােহাগাড়ায় ১০৬ টি মন্ডপে ব্যাপক সাড়ম্বরে দূর্গোৎসব উদযাপিত হবে। তিনি আরাে বলেন পূজামন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পুজা মন্ডপের জন্য আর্থিক অনুদানও দিয়েছে সরকার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি শিক্ষাবিদ সুনীল কুমার চৌধুরী বিএসসি বলেন, দূর্গা পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্টান হলেও অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এই উৎসবে সামিল হন। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় লোহাগাড়া একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এলাকা।
এখানে সব ধর্মের মানুষ বিভিন্ন পূজা-পার্বন ঈদসহ নানা আয়োজন মিলেমিশে উদযাপন করি। এবারের দূর্গা পূজাও যাতে ঝাঁকজমক পূর্ণভাবে অনুষ্টিত হয় সেজন্য ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সবধরনের সহায়তা করা হবে। আশাকরি এবারের দুর্গা পূজাও আড়ম্বরপূর্ণভাবে অনুষ্টিত হবে। লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযােগীতা অব্যাহত থাকবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দূর্গাপূজা উদযাপনে তিন স্থরের নিরাপত্তা দেয়া হবে। প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহীনির সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা নিয়ােজিত থাকবে। যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে শান্তিপুর্ণভাবে পুজা উদযাপনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি পুজা মন্ডপে পােশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পােশাকেও পুলিশ মােতায়েন করা হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আহসান হাবিব জিতু বলেন, উপজেলায় দুটি পূজা কমিটি রয়েছে।। যার ফলে পূজার সরকারী বরাদ্ধ বন্টন নিয়ে দুপক্ষয় প্রতিযােগীতা শুরু করে। এতে সম্প্রীতি নষ্ট হয়। তাই গত বছরের মতো এ বছরও উপজেলা পিআইও অফিস থেকেই প্রত্যেক পূজা মন্ডপের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে পূজার সরকারী বরাদ্দ বিতরণ করা হচ্ছে?পূজার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ পূজা মন্ডপে গিয়ে পূজা দেখতে পারে এ ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আশা করি কোন ধরনের সমস্যা ছাড়া সকলের অংশগ্রহণে পুরাে উপজেলায় উৎসবমূখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্যঃ ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দৃর্গাপূজা এবং ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।