মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

নৌকা স্কুলে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা!

সামাউন আলী সিংড়া (নাটোর) :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১

নৌকায় শিক্ষা, নৌকায় প্রযুক্তি, বিনোদন, সাংস্কৃতিক সবকিছুইপাচ্ছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা। বর্ষা মৌসুমে এবং বন্যায়ও এমনকি ১২ মাসেই শিশুরা এই শিক্ষা সুযোগ সুবিধা পায়। সিংড়া উপজেলায় নন্দকুজা, আত্রাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ৮টি নৌকায় স্কুল চালু আছে। এর মধ্যে বিলদহর ও কলম এলাকায় নৌকায় কম্পিউটার শিক্ষা চালু আছে। কম্পিউটার প্রশিক্ষন, দর্জি ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষন এ পর্যন্ত ১৩,৫০০ জন কিশোরী, নারী এবং শিক্ষার্থী এই প্রশিক্ষন গ্রহন করেছে। নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলায় এই কার্যক্রম চালু আছে। নাটোরের সিংড়ায়, গুরুদাসপুর, নাটোর সদর, হালসা এলাকা ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলায় নৌকা স্কুল চালু আছে। এছাড়াও ৮টি দেশে এই কার্যক্রম চালু আছে। চলনবিলের এই মডেল গ্রহন করেছে ৮ টি দেশ। ২০০২ সাল থেকে নৌকা স্কুল কার্যক্রম শুরু হয়, যা এখন বিশ্বের মডেল। নৌকা স্কুল শুরুর পর তরুন স্থপতি রেজোয়ান চৌধুরি নৌকা স্কুলের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে লাইব্রেরী, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, ইন্টারনেট ও সৌরবিদ্যুৎ ইত্যাদি সেবা চালু করেন। তার প্রতিষ্ঠান ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’ জাতিসংঘ পরিবেশ পুরষ্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পায়। কম্পিউটার প্রশিক্ষক মোঃ আরিফুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, করোনা কালীন সময় ১০ জন করে ৪ টা ল্যাপটপে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। সকাল ১০ টা হতে ১২ টা পর্যন্ত পাঠাগারে বই পড়ানো এবং কম্পিউটার ট্রেনিং দেয়া হয়। ১৩ বছর ধরে তিনি এই প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। বিলদহর পশ্চিম পাড়ার হুসনে আরা, তানজিলা এখানে প্রশিক্ষন নিতে এসেছে। বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন কম্পিউটার শিখে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে দেশের কল্যানে কাজ করতে চান। সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার মধুসূদন কর্মকার জানান, কিশোর-কিশোরীরা সৌরশক্তি সম্পন্ন লাইব্রেরীর নৌকাতে যায়, যেখানে তারা বই পড়ে আর কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই সংস্থা বন্যাপ্রবন এলাকাতে নৌকায় প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। প্রতিবছর ১৩,৫০০ জন সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী ও নারীরা এই প্রশিক্ষণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণ নৌকা থেকে নদীর পাড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে মানানসই জীবন যাত্রার উপর সান্ধ্যকালীন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সংস্থার সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সুপ্রকাশ পাল বলেন, “বর্তমানে ২৬টি স্কুলের নৌকায় প্রতিদিন তিন শিফটে ২,৩৪০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। প্রতিটি নৌকা একবারে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী ধারণ করতে পারে। প্রতিদিন সকালে নৌকা স্কুলগুলো বিভিন্ন গ্রামে যায় এবং শিশুদের বাড়ীর সামনে থেকে নৌকায় তুলে নেয়। তারপর নৌকাটি একটি জায়গায় দাঁড়ায় এবং শিশুদের শিক্ষা প্রদান করে।” স্কুলগুলোতে একটি ল্যাপটপ, কয়েক শত বই থাকে এবং সোলার প্যানেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের মাধ্যমে নৌকার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো চালানো হয়। স্কুলে যাওয়া শিশুরা ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী। ২০০২ থেকে ২০২১ সাল সময়কালে সিধুলাই নৌকাস্কুলে ২১,২৯০ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সুবিধা পেয়েছে। নতুন শিক্ষামূলক প্লে-বোটে (খেলা-নৌকা) ছাত্র-ছাত্রীরা খেলা-ধুলা করতে পারে। ২০১৭ সালে রেজোয়ান চৌধুরী নৌকা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলার করার জন্য খেলা-নৌকা ডিজাইন করেছিলেন। এই নৌকায় ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা করার জন্য শিক্ষামূলক খেলার উপকরণ আছে। যার মধ্যে ডাবল সুয়িং, আলফাবেট ও নিউমারেসি মার্কিংস্, আলফাবেট ও নিউমারেসি ওয়াল প্যানেল, মাঙ্কি বার, স্লাইড সহ শিশুদের জন্য প্রায় ৫০০ বই আছে। এছাড়া ইণ্টারনেট সংযোগযুক্ত চারটি ল্যাপটপের সাহায্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও শিশুদের দেখানো হয়। জানা যায়, ২০০২ সালে রেজোয়ান চৌধুরী নিজেদের অর্থায়নে একটা ডিজাইনকৃত নৌকা তৈরি করতে সক্ষম হন এবং ভাসমান স্কুল কার্যক্রম চালু করেন। ২০০৫ সালে তরুন স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান চৌধুরী একটি অবিশ্বাস্য সুসংবাদ পেলেন। তার দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্ন বড় আকারে সম্প্রসারনের জন্য বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন তাকে সহযোগিতা করবে। গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা রেজোয়ানের এই ছোট প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে – নৌকার কলেবর বৃদ্ধি পায়, সমস্ত নৌকায় সৌর বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার আনা হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ৫০,০০০ বই ও ১০০ টিরও বেশি কম্পিউটার আনা হয়। এভাবেই শিক্ষায়, প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com