দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মোহামম্মদ রেজাউল করীম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ঘটনা আপনারা সবাই জানেন। হাজার বছর ধরে হিন্দু-মুসলিমরা এই ভূখণ্ডে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। একই রাস্তায়, একই মহল্লায় মসজিদ আর মন্দির বছরের পর বছর অবস্থান করছে। মানুষ যার যার ধর্ম পালন করছে। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো বিবাদ হলেও এই বছরের মতো ব্যাপক বিবাদ স্মরণকালে ঘটে নাই।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, কুমিল্লার একটি মন্দিরে পবিত্র কুরআন পাওয়াকে কেন্দ্র করে এবং ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাসকে ইস্যু করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে সব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দ্রুত বিচার চাই। এ ঘটনার সূত্রপাত থেকে পরবর্তী প্রত্যেকটি ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতার ছাপ অতি স্পষ্ট। ৫০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে এ ধরণের ব্যর্থতা কল্পনাতীত। অতিমাত্রায় রাজনীতি প্রবেশের কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় এক ধরণের অদক্ষতা তৈরি হয়েছে। যার খেসারত এসব ঘটনা।চরমোনাই পীর বলেন, এই বাস্তবতায় আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব করতে চাই। প্রস্তাবগুলো হলো- ১) কুমিল্লার ঘটনা ও তৎপরবর্তী ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি করতে হবে। সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জনসন্মুখে প্রকাশ করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। ২) ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন করতে হবে।
৩) রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের অতি বাচাল প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অতি বাচাল তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ৪) দেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফেরাতে বিরোধী দলগুলোর ওপরে দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। আটক রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৫) শাসন ব্যবস্থায় জনতার মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে এবং সহনশীল, বহুদলীয়, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ৬) বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করে এবং তাদের নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বাহিনীগুলোকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। ৭) গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে গুলি করার মতো চরমপন্থা অবলম্বন করার প্রবণতা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। ৮) ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও সংখ্যালঘুদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ী সরকারীভাবে নির্মাণ করে দিতে হবে এবং চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তি ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৯) দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া, রাজনৈতিক সংগঠন ও তথাকথিত সুশীল সমাজ এই ধরনের ঘটনায় যেভাবে ধর্মকে কেন্দ্র করে একচোখা বয়ান দাঁড় করায়, তা বন্ধ করতে হবে। ১০) প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দিতে হবে।