বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রত্যেক মুমিনের উচিত শপথবদ্ধ হয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এভাবে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরকালীন শাস্তি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার প্রচেষ্টায় সর্বদা আল্লাহর ভয়কে পুঁজি করে আত্মঅহঙ্কার ও লোকদেখানো হতে বিরত থেকে মহান রবের বিধান মেনে চলতে হবে। চরম পেরেশানি মাথায় রেখে প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে দ্বীনি দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে; কারণ আল্লাহ আমাদেরকে সেই কঠিন দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। মানুষের বানানো মনগড়া মতবাদের ভিত্তিতে নিজেদের জীবনকে অতিবাহিত করার মধ্যে কোনো মুক্তি নেই। এ জন্যই শপথবদ্ধ হয়ে দ্বীনি কাজ পরিচালনা করাকে আল্লাহ বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। সংখ্যালঘু অমুসলিমদের অধিকারের বিষয়ে বলতে গিয়ে আমিরে জামায়াত বলেন, আমাদের দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব সংখ্যালঘু আমাদের কাছে আমানত।
গতকাল শনিবার জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত বার্ষিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল হালিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহছানুল্লাহ, কুমিল্লা মহানগর আমির কাজী দ্বীন মুহাম্মদ, রাজশাহী মহানগর আমির ড. এম কেরামত আলী, গাজীপুর মহানগর আমির গাজী সানাউল্লাহ, সিলেট মহানগর আমির মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, খুলনা মহানগর আমির আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমির আজম ওবায়দুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ ও এফ এম ইউনুস, সাংগঠনিক সেক্রেটারি এম এ আলম চৌধুরী ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
জামায়াত আমির বলেন, দুনিয়ার কোনো মানুষকে নয়, বরং আমাদের কাজ এক আল্লাহকে খুশি করার জন্যই। প্রদর্শনেচ্ছা পরিহার করে সমাজের অসহায়, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, দ্বীনের এই কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা বিপদ আসবেই। সব বিপদ-মুসিবতে চরম ধৈর্যধারণ করে মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেই দ্বীনি কাজের আঞ্জাম দিতে হবে। রুকনদের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, সর্বাবস্থায় আমাদের নেফাকি থেকে দূরে থাকতে হবে। বিপদে-আপদ সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়ে শপথের হক আদায় করতে হবে। এতেই শপথের যথার্থ মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম বলেন, নিজেকে পরিপূর্ণভাবে খোদার কাছে সমর্পণ করার জন্য রুকনদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মধ্যেই নিহিত আছে রুকনিয়াতের আসল চেতনা। সব ধরনের ঝুঁকি নিয়ে অধিক পেরেশানির সাথে সবার কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আমির মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দ্বীনি আন্দোলনে শরিক হতে পারা বান্দার প্রতি আল্লাহর নিছক করুণা ছাড়া আর কিছু নয়। দুনিয়া হার-জিতের আসল জায়গা নয়। শেষ বিচারের দিন হাশরের ময়দানই হবে হার-জিত ও ব্যর্থতা সফলতার আসল জায়গা।
রাজশাহী ও চট্টগ্রামে গ্রেফতারের প্রতিবাদ : রাজশাহীর পবা উপজেলার ১২ জন জামায়াত নেতাকর্মী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই সদর ইউনিয়নের সাবেক আমিরকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম গত ২৩ অক্টোবর এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, ২১ অক্টোবর পবা উপজেলায় সিরাতুন্নবী সা:-এর এক আলোচনা সভা থেকে ১২ জন নেতাকর্মীকে এবং ২০ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাই সদর ইউনিয়ন শাখার সাবেক আমির কফিল উদ্দিন লতিফীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জামায়াতে ইসলামী কোনো নিষিদ্ধ দল নয়। ধর্মীয় আলোচনা করা, সভা-সমাবেশ করা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। সিরাতুন্নবী সা: উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে এভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সরকার মূলত রাসূল সা:-এর সিরাত এবং সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ : গত ২৩ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ‘১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিলেন জামায়াত নেতা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রকাশিত খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকাশিত খবরে কামালউদ্দিন আব্বাসী নামে যাকে জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে, তার সাথে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ঘটনা ঘটলেই যাচাই-বাছাই না করে তার সাথে জামায়াতকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করা একশ্রেণীর রিপোর্টারের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
রাজশাহীতে ১২ কর্মী গ্রেফতার
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে জামায়াতের ১২ জন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আবু কালম সিদ্দিক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার রাতে পবা থানার পালোপাড়া গ্রামের মধ্যপাড়ার একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতামূলক কর্মকা-ের লক্ষ্যে গোপন বৈঠক থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ইসলামী বই, মিছিলের ব্যানার, জামায়াত-শিবিরের সদস্য ফরম ও চাঁদা আদায়ের রসিদ উদ্ধার করা হয় বলেও জানানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ মনিরুল ইসলাম (৫০), কলিম উদ্দিন (৬৮), আবদুল মতিন (২৫), আবদুল মমিন (২৫), ফয়সাল আহমেদ (২০), আজাহার আলী (৩৫), আবু বক্কর (৪২), আবদুর রব (৩০), উজ্জ্বল হোসেন (৩৪), আবদুল হালিম (৩৫), মো: ওবেদ (৫০) ও আবুল হোসেন (৬১)। প্রেসবিজ্ঞপ্তি