রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
মুকসুদপুর পৌরসভার সেবা কার্যক্রম স্থবির, চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শেরপুর প্রেসক্লাবের স্মারকলিপি প্রদান সাভারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অষ্টাদশ জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫ দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গড়তে সহযোগিতা চাই -জয়নাল আবেদীন আন্দোলনে আহত আলাউদ্দিন পাননি কোনো সহযোগিতা, মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছেন গুলি ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা মিলেছে জামালপুরের মাদারগঞ্জে গ্যাসকূপ খনন কাজ উদ্বোধন দুপচাঁচিয়া শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে এতিমদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শাহীন স্কুল বগুড়া শাখার আয়োজনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পিঠা উৎসব

বরিশালে কুড়িয়ে পাওয়া বোতলে জোটে পথ শিশুদের দুবেলা খাবার

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

কার সঙ্গে কীভাবে বরিশালে আসছে তাও মনে নেই আলামিনের। খুলনা জেলা শহরে আলামিনের বাড়ি। তবে এটুকু মনে আছে যে তার মা আর বেঁচে নেই। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার দেখা পায়নি সে। প্রায় ৪ বছর ধরে বরিশাল নৌবন্দরে যাত্রীদের মালামাল ওঠানামা বহন করা আর বোতলে পানি বিক্রি করেই তার দুবেলা খাবার জোটে। আর এখানেই গড়ে উঠেছে তার নতুন পরিবার। যে পরিবারে রয়েছে একাধিক বন্ধু, যারাও কোনো না কোনোভাবে এই নৌবন্দরে এসে আলামিনের মতো ঠাঁই নিয়েছে। তবে ওদের এখন আর পিতৃপরিচয় নেই, ওরা এখন ছিন্নমূল বা পথশিশু। সূত্রমতে, বরিশাল নৌবন্দর থেকে হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। ওই সব মানুষ বোতলজাত পানি ব্যবহার করে তা ফেলে দেয়। আর সেই ফেলে দেয়া বোতল কুড়িয়ে নিয়ে পুনরায় ট্যাপ কিংবা টিউবওয়েলের পানি ভর্তি করে স্বল্প মূল্যে সাধারণ যাত্রিদের কাছে বিক্রি করে আলামিন ও তার বন্ধুরা। প্রতি বোতল পানি ৫ টাকায় বিক্রি আর সেই পানি বিক্রির টাকা দিয়েই তারা দুবেলা খাবার কিনে খায়। তবে করোনাকালীন লকডাউনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছিল আলামিনের মতো নৌবন্দরে কয়েকশ ছিন্নমূল মানুষ। আলাপকালে তারা জানায়, লকডাউনের সময় কাগজ কুড়িয়ে, ভাঙ্গাড়ি কুড়িয়ে, প্লাস্টিকের বোতল বা অন্য কোনো তৈজসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করে দিন কাটাত। দিনে তাদের ৫০ থেকে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। অনেকে দোকানের পাশে পড়ে থাকা সবজি, মুরগির ফেলে দেয়া অংশ কুড়িয়েও বিক্রি করে। এসব বিক্রির আয় দিয়ে কোনোমতে চলে যেত তাদের জীবন। তবে করোনার মধ্যে বরিশালের সাংবাদিকরা তাদের রাতের খাবার দিত বলে জানায় তারা। তারা জানায়, করোনার মধ্যে অনেক ছিন্নমূল মানুষ অন্যত্র চলেও গেছে। তারা জানায়, লকডাউন ছেড়ে দেয়ার পর পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় তারা বেশ খুশি। অন্তত পানি বিক্রি করে তারা দুবেলা ভাতের জোগান দিতে পারছে। বরিশাল নগরীতে সব পথশিশু ও ছিন্নমূলের একই অবস্থা। তারা খুবই কষ্টে আছে এখন। একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, নগরীতে পথশিশুর সংখ্যা ১০ হাজারের কম নয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার বস্তি বা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে বেকারত্ব, শিক্ষার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে সামাজিক এবং পারিবারিক কলহ চলে। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ বা পারিবারিক নানা কলহের কারণে সমাজে পথশিশুর জন্ম হয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ছোট বয়সে পারিবারিক কলহ বা নির্যাতনের শিকার হয়ে শিশুদের বড় একটা অংশ ঘর ছেড়ে পথশিশুতে পরিণত হয়। তাদের বেশির ভাগেরই কেউ নেই। পরিবার, স্বজন থাকলেও খোঁজ নেয় না। বাবা আরেক বিয়ে করে সংসার করছে, মা আরেকজনকে বিয়ে করেছে। এদের খোঁজ কেউ রাখে না। সচেতন নাগরিকদের মতে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের সঠিকভাবে পরিচর্যা করাটাও অত্যন্ত জরুরি। পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্য এবং বাসস্থান। তাই তাদের সরকারের সহায়তায় হোক আর বেসরকারি সহয়তায় হোক থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার মাধ্যমে অন্য বাচ্চাদের মতো জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই পথশিশু নামক কোনো নাম শিশুর সঙ্গে যুক্ত হবে না। দেশ থেকে মুছে যাবে টোকাই নামক শব্দটি। শিশু থাকবে শিশুর মতোই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com