প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিভাইরাল ওরাল পিল বা মুখে খাওয়ার ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ দেশে অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। তবে মুখে খাওয়ার এই ওষুধ টিকার বিকল্প নয় বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশে মলনুপিরাভির অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেট জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এগুলো অবশ্যই টিকার বিকল্প নয়। টিকা নিতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেট খেতে হবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত দশটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরও আটটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলো হলো- স্কয়ার, জেনারেল, বিকন, রেনেটা, ইনসেপটা, একমি, হেলথ কেয়ার, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। ওষুধের ব্যবহারবিধি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মুখে খাওয়ার এই ওষুধ পাঁচ দিনের ডোজ। সকালে চারটা ট্যাবলেট আর রাতে চারটা ট্যাবলেট। পাঁচ দিনে মোট চল্লিশটা ট্যাবলেট খেতে হবে। ওষুধ প্রশাসন মহাপরিচালক বলেন, ট্যাবলেটটি ইতিমধ্যে বাজারে (বেক্সিমকোর) এসেছে। এটি ব্যবহার করতে পারলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। আমাদের দেশেও হয়েছে। ফলাফলও আমরা ভালো পেয়েছি। মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি অর্ধেক কমাতে পারে এই ওষুধ। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শেই এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তবে কোনোভাবেই ১৮ বছরের নিচে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। গত সোমবার (৮ নভেম্বর) দেশে মলনুপিরাভির অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেটের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, এ ওষুধ করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার অকার্যকর করতে সক্ষম। পাশাপাশি, করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সক্ষমতা মলনুপিরাভিরের রয়েছে। পিল প্রসঙ্গে বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা জানান, মলনুপিরাভির মানবদেহের প্রবেশকারী করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডে সমস্যা সৃষ্টি করে ভাইরাসটির বংশবৃদ্ধি প্রায় স্থবির করে দেয়। আর এর ফলেই কমতে থাকে করোনারোগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও এ রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা। কর্মকর্তারা আরও জানান, বাজারে বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর মূল কাজ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, ভাইরাসকে অকার্যকর করা নয়। এক্ষেত্রে মলনুপিরাভিরই বিশ্বে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ, যেটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভাইরাসের প্রজনন ক্ষমতা অকার্যকর করতে সক্ষম। জানা গেছে, এ পর্যন্ত তিনটি মেডিকেল ট্রায়াল পার করেছে মলনুপিরাভির। প্রতিটি ট্রায়ালেই রোগীদের শারীরিক অবস্থার লক্ষ্যণীয় উন্নতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা।