সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

পর্যটকদের পছন্দ কুয়াকাটা সৈকতের শুঁটকি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে শুঁটকি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছরই এ শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সুস্বাদু হওয়ায় কুয়াকাটা সৈকতের এই শুঁটকি রয়েছে আলাদা চাহিদা। প্রতি বছরের মতো এবারও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে ওঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। এ কাজে অংশ নেয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যরা।
এসব শুঁটকি পল্লী সহজে দৃষ্টি কাড়ছে সৈকতে আসা পর্যটকদের। অনেকেই ঘুরতে এসে এখানের শুঁটকি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। কাছে অফুরন্ত সামুদ্রিক মাছের ভা-ার বঙ্গোপসাগর, ফলে মাছ সংগ্রহও এখানে অনেকটাই সহজ। পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্রা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি।
কোন কীটনাশক ছাড়া শুধু মাত্র লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর রয়েছে আলাদা স্বাদ এবং চাহিদা। তবে নির্দিষ্ট কোন পল্লী না থাকায় বছরের ৬ মাস চলে এ ব্যবসা। ফলে বছরের বাকি ৬ মাস কর্মহীন। তাই মৌসুম নির্ভর এ ব্যবসার স্থায়ীত্বের পাশাপাশি স্থায়ী পল্লী নির্মাণ হলে শুঁটকি হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় আয়ের আরেকটি বড় উৎস।
কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবাগান সংলগ্ন সৈকতে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা শুঁটকি পল্লীতে কাজ করতে আসা শ্রমিক রিয়াজ মিয়া জানান, মাত্র ৬ মাস চলে এ শুঁটকি ব্যবসা। বছরের বাকি ৬ মাস কর্মহীন থাকি। বর্ষা মৌসুমে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়।
সৈকতের মাঝি বাড়ি সংলগ্ন শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিক রাবেয়া খাতুন জানান, সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর মাত্র তিনশ টাকা বেতন পাই। এ টাকা দিয়ে তো আর পরিবার চলেনা। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন ভাতা কিংবা অনুদান পাইনি।
শুঁটকি ব্যবসায়ী রহমান মিয়া জানান, মীরা সংলগ্ন সৈকতে টং পেতে শুঁটকি শুকানো শুরু করেছি। সাগর পাড়ে শুঁটকি খুব ভালো শুকায়। তাই বাধ্য হয়ে এখানে টং পেতেছি। স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করলে বছরের বারো মাস এ ব্যবসা করতে পারতাম।
অপর ব্যবসায়ী ছলেমান মিয়া জানান, সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় সৈকত ভেঙে বেড়িবাঁধের কাছাকাছি চলে আসছে। আগামী বছর এ সৈকতে শুঁটকি শুকানোর কায়দা থাকবে না। তাই শুঁটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী পল্লী নির্মাণ খুবই জরুরী। ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক কলিম উদ্দিন জানান, ঢাকা বসেই কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লীর কথা শুনেছি। তাই কুয়াকাটা এসেই এখানে আসলাম। কোন কীটনাশক ছাড়াই এদের প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখে খুব ভালো লেগেছে। কুমিল্লা থেকে আসা অপর পর্যটক রাসেল কবির জানান, এখানে এসে নিজ চোখে শুঁটকি তৈরি করা দেখেছি। নিজের বাসার জন্য এবং আত্মীয় স্বজনের জন্য শুঁটকি কিনে নিচ্ছি। দামটাও নাগালের মধ্যে আছে। পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল্লাহ জানান, স্বাস্থ্য সম্মতভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণে শুঁটকি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক প্রনোদনা এবং স্থায়ী পল্লী নির্মাণের লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। আসা করছি খুব শিগগিরই এর সমাধান হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com