জেলায় বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘ভোলা কায়াকিং পয়েন্টে’। উপজেলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বান্দেরপাড় এলাকায় ব্যক্তি উদোগে গড়ে উঠেছে এ বিনোদন কেন্দ্রটি। এখানে চাইলে যে কেউ একদিনের জন্য মাঝি হতে পারবে। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সুবিশাল জলরাশির মধ্যে নৌকায় প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে ভ্রমণের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। টিকেট সংগ্রহ করলে ফাইবারের তৈরি বোট ও প্লাস্টিক ও স্টিলের তৈরি বৈঠা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া যায় জলাশয়ে।
আর নৌকা চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রশিক্ষক রয়েছে পরিচালানোর জন্য। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে এ পয়েন্ট। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও ভ্রমণ পিপাসুরা আসছেন এখানে। অন্য সময়ের চেয়ে শীতের সময়টাতে বেশি আসেন পর্যটকরা। বর্তমানে দৈনিক শতাধিক দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত কায়াকিং পয়েন্টেটি। উপরে নীল আকাশের ছায়া স্বচ্ছ জলে মায়ার খেলা তৈরি করে এখানে।
নৌকা নিয়ে স্বচ্ছ লেকটিতে প্রবেশ করলে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। যতই জলাশয়ের গহীণে যাবে নৌকা, ততই ভালোলাগার আবেশ ছড়াবে। চারপাশের সবুজের ঘেরা প্রান্তর, বিভিন্ন জলজ প্রাণি ও পাখিদের কলকাকলী ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে নৌ ভ্রমণে। ভাগ্য ভালো হলে দেখা মেলবে অতিথি পাখিরও । এছাড়াও রয়েছে পানিতে ভাসমান ব্লকের উপর তৈরি লাভ পয়েন্ট। গাড়ির আদলে তৈরি প্যাডেল বোট। শিশুদের জন্য রয়েছে ডরমিন রাইড। আরো রয়েছে মন ভোলানো মিউজিক সিস্টেম। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে এ বিনোদন কেন্দ্রটি।
কায়াকিং পয়েন্টে’র উদ্যেক্তা এম শরিফ আহমেদ বাসস’কে বলেন, কায়ক শব্দটি এদেশে অতটা প্রচলিত নয়। ফাইবার, কাঠ ও পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি লম্বা সরু নৌকাকে কায়াক বোট বলা হয়ে থাকে। যা চালাতে হয় বৈঠা দিয়ে। কানাডায় প্রথম শুরু হয়েছিলো এ কায়াক চালানো। বিদেশে সমুদ্র বা নদীতে কায়াক চালানোর প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে এটিই প্রথম কায়াকিং চালু করা হয়েছে। প্রথম দিকে করোনার কারণে বন্ধ থাকলেও এখন বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এখানে বেড়াতে আসা লিপি আক্তার, রাফিয়া মৌ ও জাহানা রিয়া বলেন, নিজেরা নিজেদের নৌকা চালিয়ে জলে ভ্রমণ সম্পূর্ণ একটি নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথম একটু কঠিন মনে হলেও বোট চালাতে গিয়ে সহজ হয়েছে। পরিবার তথা বন্ধুদের সাথে নিয়ে বিনোদনের এটি একটি আদর্শ স্থান। সময় পেলেই তারা এখানে ছুটে আসেন বলে জানান। ব্যবসায়ী শিমুল হাসান পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন এখানে। তিনি বলেন, মাঝ জলাশয়ে গলা ছেড়ে গান গাইলে নিজেকেই সত্যিই মাঝি বলে মনে হয়। যা শহরের জীবনে ভিন্ন এক প্রসন্নতা এনে দেয়।
উদ্যোক্তা শরিফ আহমেদ আরো বলেন, এখানকার নৌযানগুলো অত্যাধুনিক মানের হওয়ায় সহজে ডুবে যাওয়ার ভয় নেই। তারপরেও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি বোটে রয়েছে লাইফ জ্যাকেট। এখানে ভ্রমণ করতে জেলা জজ, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আসছেন। অন্য জেলা থেকেও দর্শনার্থীরাও আসছেন। আগামী দিনে এ কেন্দ্রটি আরো আধুনিকায়নের পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি।
ভোলা প্রেসক্লাব সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. হাবিবুর রহমান জানান, সম্প্রতি ভোলা কায়াকিং পয়েন্টে বিনোদনের জন্য এক অনন্য স্থান হিসাবে রুপ লাভ করেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে এখানে প্রশান্তির জন্য। কয়জন বেকার শিক্ষিত যুবকের এমন কার্যক্রম অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ।