আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ করে জারি করা বলবৎ থাকবে। এতে মোট ১১টি বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। বিধিনিষেধগুলো হচ্ছে দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা হোটেল ও রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কোনো ব্যত্যয় রোধ করতে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি হয়েছে।
বিশ্বে আবারো বাড়তে শুরু করেছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিশেষ করে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন অতিসংক্রামক হওয়ায় তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৩০ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই বাড়ছে কভিড-১৯ রোগে সংক্রমিতের সংখ্যা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের চলাচলে চতুর্থবারের মতো বিধিনিষেধ জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন, মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধসহ উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশনা।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ ও আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য করোনার টিকার সনদ প্রদর্শন করতে হবে। ১২ বছরের বেশি কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবে না। স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোয় স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বন্দরে অবস্থান করা জাহাজের নাবিকরা বাইরে বের হতে পারবেন না। স্থলবন্দরগুলোয় আসা ট্রাকের সঙ্গে কেবল চালক থাকবে। চালকের কোনো সহকারীকে বন্দরের বাইরে বের হতে দেয়া হবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ট্রেন, বাস ও লঞ্চ সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কার্যকরের তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। চালক ও সহকারীদের করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতে হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কভিড প্রতিরোধী টিকার সনদ থাকতে হবে। দেশে এসেই তাদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও মাস্ক পরার বিষয়ে মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় সচেতন করবেন ইমামরা। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
এছাড়া নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় তাদের সহযোগিতা করবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ থাকবে। কোনো এলাকায় বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এর আগে ৩ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও লকডাউন দেয়ার পরিস্থিতি এখনো হয়নি। ওইদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানে করোনা মোকাবেলায় নানা ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
কিছুদিন আগেও দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে মৃত্যু ও রোগী শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরুর পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গত মাসের প্রথম দিকেও শনাক্তের হার ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। তবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে নতুন ধরন ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।
গত মাসের শেষ দিকে যেখানে দৈনিক রোগী শনাক্ত ৫০০-এর ঘরে ছিল, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সেই সংখ্যা ২ হাজার ২৩১-এ পৌঁছেছে। রোগীর এ সংখ্যা গত ১০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর দুদিন আগেও শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের বেশি। পরপর চারদিন শনাক্তের হারের এ ঊর্ধ্বগতির কারণে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বব্যাংকের নির্ধারিত মান অনুযায়ী, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি থাকলে দেশে তৃতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে বলে ধরে নিতে হবে।