আল্লাহর বাণী- ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে’ (সূরা : আল ইমরান, আয়াত : ১১০)। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ উপাধিতে ভূষিত করলেন পাশাপাশি জ্ঞাত করলেন আমাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মানবকল্যাণ সাধনের জন্য (বিশ্ব শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে) এবং আমাদের আল্লাহ অবগত করলেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ সম্পর্কে। সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ হলো- ‘মানুষকে সৎকাজের আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ ইত্যাদি প্রদান করা যথাযথভাবে এবং পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে মানবসমাজকে নিষিদ্ধ কর্মকা- হতে সর্বাবস্থায় বিরত রাখা সর্বৎকৃষ্ট চেষ্টা প্রদানের মাধ্যমে।’
আলোচ্য দুটো কর্মকা- সাধন নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার পূর্বশর্ত। যদিও আপাতদৃষ্টিতে সৎকাজের আদেশ ও উপদেশ দেয়ার মাঝে শর্তটি সীমাবদ্ধ। তবে সত্যিকার অর্থে ব্যাপারটি তা নয় বরং সৎকাজের আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি তা অবশ্যই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর আদেশকৃত কার্যসমূহ সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব শ্রেণীতে বিভক্ত। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় উপরোক্ত শর্ত দুটো আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছি? আমার দৃঢ়বিশ্বাস উত্তর আসবে- আমরা উপরোক্ত শর্ত দুটো পালনে অনেকাংশেই ব্যর্থ। পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত রাখা প্রায় বলতে গেলে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। ফলে বিশ্ব শান্তির পরিবর্তে বিশ্ব অশান্তি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তদ্রƒপ একই অবস্থা ব্যক্তিগত শান্তি, পারিবারিক শান্তি, সামাজিক শান্তি, রাষ্ট্রীয় শান্তি, আন্তর্জাতিক শান্তি ইত্যাদিতে। ইসলাম শান্তির ধর্ম তা শতভাগ সত্য কথা। বিশ্ববাসী যদি ইসলাম ধর্মের বিধানগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আঁকড়ে ধরত তাহলে বিশ্ব শান্তি আটলান্টিক মহাসাগরের খরস্রোতের মতো অবিরাম প্রবাহিত হতে থাকত। প্রয়োজন হতো না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, বাসাবাড়ির দারোয়ান, তালা চাবির ব্যবহার এমনকি রাতের বেলায় ঘরের দরজা বন্ধ করার। ইসলাম ধর্ম সর্বশেষ ধর্ম, বিশ্ব ধর্ম। ইসলাম ধর্মের বাহক রাসূল মুহাম্মদ সা: এবং তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন বিশ্বনবী হিসেবে অভূতপূর্বভাবে। ইসলাম ধর্ম থেকে উদাসীনতা মানে দ্রুত গতিতে অশান্তি অরাজকতার দিকে ধাবিত হওয়া আল্লাহর ঘোষণা মতে আমরা মানুষেরা সৃষ্টির সেরা হওয়া সত্ত্বেও। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করিÑ ইসলাম ধর্মের বিধানসমূহ থেকে উদাসীন হয়ে শান্তির আশা করা কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে? উত্তর- নিশ্চয়ই না। কারণ ইসলাম ধর্মের আদেশাবলির মধ্যে নিহিত আছে কল্যাণ আর কল্যাণ। পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ কাজগুলোর মধ্যে নিহিত আছে অকল্যাণ, অশান্তি, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি।
আল্লাহ বলেছেন- ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তা দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর (পাশবিক কার্যাবলির কারণে)। তারাই হলো গাফেল’ (সূরা : আরাফ, আয়াত: ১৭৯)। পাশবিক শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত সংবাদ বা পত্রিকার মাধ্যমে যথা : পাশবিক অত্যাচার, পাশবিক নির্যাতন, পাশবিক আচরণ ইত্যাদি।
আলোচ্য আয়াতে চোখ, কান, অন্তর ইত্যাদি সম্পন্ন মানুষগুলো আল্লাহর বর্ণনা মতে অন্ধ, বধির, বিবেকহীন। ফলে ধর্মীয় জ্ঞান আহরণের দিক থেকে উপরোক্ত প্রসঙ্গগুলো না থাকার শামিল, অর্থহীন, অকেজ ইত্যাদি যা সত্যিকার অর্থে মহাপরিতাপের ও মহা ক্ষতিগ্রস্ততার বিষয়। প্রসঙ্গত মনে পড়ে সেই দুঃখজনক বাক্যটি- ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি আল্লাহর বাণী- ‘মহর বা সিলগালা করে দিয়েছেন কাফেরদের অন্তর এবং শ্রবণ শক্তি এবং ঢেকে দিয়েছেন পর্দা দিয়ে তাদের চোখগুলো। এরাই নিক্ষিপ্ত হবে পরকালে অবর্ণনীয় এবং ভয়াবহ কঠিন শাস্তির ভেতরে’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ৭)। মহা ব্যর্থতা কাকে বলে! এ আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন অন্তর, শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদির অকার্যকারিতা ও ভয়াবহ পরিণাম অর্থাৎ জাহান্নামবাস।
অনুরূপ আরো একটি আল্লাহর বাণী উল্লেখযোগ্য- ‘আমি তাদের গলায় শেকল পরিয়ে রেখেছি, তা তাদের চিবুক পরিমাণ বর্তমান রয়েছে। তাই তারা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে রয়েছে (ফলে তারা দেখতে পাচ্ছে শুধু ঘরের ছাদ বা গাছপালার ডাল বা খোলা আকাশ)। আর আমি তাদের সম্মুখে প্রাচীর রেখেছি এবং পেছনেও প্রাচীর রেখেছি, আর তাদের ওপর থেকে ঢেকে রেখেছি, তাই তারা দেখতে পায় না’ (সূরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৮, ৯)।
উপরোক্ত প্রথম আয়াতটিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে একটা ভয়াবহ চিত্র র্অর্থাৎ ঘাড় বাকা ঊর্ধ্বমুখী করে রাখা। শাস্তি কাকে বলে! দ্বিতীয় আয়াতটিতে আল্লাহ ব্যবস্থা রেখেছেন তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখা প্রাচীর ঘেরা করে। ফলে এদের কোনো দিনই সৌভাগ্য হবে না ইসলামের আলোর দেখা পাওয়ার। হতভাগ্য কাকে বলে!
উপরোক্ত চারটি আয়াত দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত কাফের, মুশরিক, মুজরিম, ফাসেক, মুনাফিক ইত্যাদিদের ঔদাসীন্যের প্রেক্ষাপট যার পরিণাম তাদের মহা ব্যর্থতা বিশেষ করে পরকালে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! দয়া করে চলুন আমরা আত্মজিজ্ঞাসা করি, ব্যক্তিগতভাবে আমরা কোন দলভুক্ত অবস্থায় আছি এবং সে মোতাবেক প্রয়োজনবোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদের রক্ষা করুন উপরোক্ত চারটি আয়াত বর্ণিত নিদারুণ স্বকরুণ অবস্থা ও তার ভয়াবহ পরিণতি থেকে। আমীন।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস