জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের কাজ মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করা। কেড়ে নেওয়া না। আমরা সেটা রক্ষা করে যাচ্ছি এবং করে যাবো। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনের রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা এবং সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত আওয়ামী লীগই সব সময় করেছে। নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন হতে পারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেটার প্রমাণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অনেক সময় স্থানীয় একদল আরেক দলের সঙ্গে কিংবা এক গ্রাম আরেক গ্রামের সঙ্গে মারামারি হয়। তার থেকে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেটা নির্বাচনি সহিংসতা বলা যাবে না। অনেক ওয়ার্ড মেম্বারদের সঙ্গে ঝামেলার কারণে কিছু ঘটনা ঘটেছে। এই মানুষগুলো মারা যাওয়ায় দুঃখিত।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপি গোলমালের চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিলো। তাকে তারা অব্যাহতি দেয়। সেটা ওপর দিয়েই করেছিল। তাদের সব নেতাকর্মী কাজ করেছিল তার জন্য। না হলে এত ভোট কোথা থেকে পেলো? এই নির্বাচন প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এবং হয়।
তিনি বলেন, আজকে দেশে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।বিদ্যুৎ কিছু সবসময় সংরক্ষিত রাখতে হয়। এটা যান্ত্রিক ব্যাপার। যেকোনও সময় সমস্যা হতে পারে। কিছুদিন আগে ভারত আমাদের এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিল। কই আমাদের দেশের মানুষ তো সমস্যায় পড়েনি। টেরও পায়নি। যেহেতু আমাদের উদ্বৃত্ত ছিল। সেখান থেকে আমরা সরবরাহ করে দিয়েছি। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের পেছনে কারা ছিল? ২০০৭ সালে তারা পার্টিও করতে গিয়েছিল। স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেখানে লবিং করেন। একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক আর আমাদের সুদখোর একজন স্বনামধন্য। তিনি আবার ব্যাংকের এমডি পদের জন্য লালায়িত। সব থেকে বেশি সুবিধা আমি যাকে দিয়েছি সেই চলে গেলো এই পদ্মা সেতু বন্ধ করতে। এরপর আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজেদের টাকায় করবো। আজকে আমরা বলতে পারি- এই একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে। যাদের কোন দেশপ্রেম নেই, জনগণের প্রতি যাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই, জনগণের মঙ্গল যারা চায় না তারাই পদ্মা সেতু বন্ধ করে। তারাই বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, সব দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা যাদের পছন্দ না, যাদের প্রতি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই- তারাই দেশের সর্বনাশের জন্য লবিস্ট রাখে। অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তবে আমাদের বিশ্বাস আছে জনগণ আর বিভ্রান্ত হবে না।
শামীম ওসমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশন চলাকালে এ ঘটনা ঘটে বলে শামীম ওসমান নিজেই জানিয়েছেন। বিষয়টি শুরুতে চাপা থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধে পরে তিনি তা স্বীকার করেন।
শামীম ওসমান বলেন, ‘একজন মা যেভাবে সন্তানকে দোয়া করেন, আমাকে ঠিক সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী দোয়া করেছেন। তার সেই দোয়ার পর আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এছাড়া দোয়ার আগে তিনি সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কৃতিত্ব শামীম ওসমানকে দিয়ে বলেছেন, ‘অল থ্যাংকস টু ইউ।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘করোনার কারণে সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর ৫ থেকে ৭ ফুট কাছে কেউ যেতে পারে না। বিরতির সময়ে আমি তার পেছনের সিটে বসা ছিলাম। ওই সময়ে আমার পাশে আইনমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকান। তখন আমাকে দেখে বলেন, ‘অল থ্যাংকস টু ইউ’। শুরুতে আমি ভেবেছিলাম হয়তো আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। যেহেতু আজকে একটি আইন পাস হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে তিনি আবার বলেন, ‘সমস্ত থ্যাংকস শামীম ওসমানকে।’
এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পরে আমি কাছে যাই। তখন আমি আমার কিছু কষ্টের কথা বলি। আমার বাবা-মা ও ভাইদের কিছু ঘটনার (কবরস্থানে শশ্মানের মাটি ফেলা) কষ্ট শেয়ার করি। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কষ্ট নিও না। আল্লাহ ওনাদের বেহেশত নসিব করবেন। আর ওনারা তো (খান সাহেব ওসমান আলী, এ কে এম সামসুজ্জোহা, নাগিনা জোহা, নাসিম ওসমান) তো শুধু তোমার বাবা-মা না। আমাদের পেছনেও তাদের অবদান আছে। তোমার বাবা (এ কে এম সামসুজ্জোহা) আমাদের মুক্ত করতে গিয়ে রক্ত দিয়েছেন। আল্লাহ চাচাকে বেহেশত নসিব করুন। চাচির (নাগিনা জোহা) কাছে আমরা মানুষ হয়েছি।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘কথার শেষের দিকে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তিনি আমাকে প্রাণভরে দোয়া করেছেন। একজন রাজনীতিকের কাছে এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে।
উনি আমাদের দেশের অভিভাবক। ওনার সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি মানুষের দোয়া রয়েছে। ওনার দোয়া মানে সকলের দোয়া। এটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় একটি পাওনা।’ এর আগেও ২০১৪ সালে নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন।