মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

গ্রামজুড়ে সহস্রাধিক মৌচাক, বেড়েছে মৌসুমি আয়

নাহিদুল ইসলাম রিজন নকলা (শেরপুর):
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২২
শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা কলেজ ভবনের চার পাশে মৌচাক

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধিন চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চন্দ্রকোনা কলেজের এক ভবনে ৭১টি মৌচাকসহ গ্রামজুড়ে সহ¯্রাধিক মৌচাক সকলের নজর কেড়েছে। কলেজের চারতলা ভবনটির চার পাশের ছাদ ও জানালার কার্নিশে অন্তত ৭১টিসহ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পাকা বাড়িতে ও বড় গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে মৌমাছি। একটু পরপর মৌচাক থেকে মৌমাছি বের হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাশের শর্ষেখেতে। মধু সংগ্রহ করে এনে জমা করছে নিজ নিজ চাকে। এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ওই কলেজে ও আশপাশের গ্রামে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনগন। এই কলেজের মৌচাক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। কলেজটি নকলা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমটার দূরে হলেও, নকলা-চন্দ্রকোনা সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানবাহনের যাত্রীরা আসা-যাওয়ার সময় দৃষ্টিনন্দন মৌমাছির চাক উপভোগ করেন। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কলেজটির চারতলা ভবনটি নির্মান করা হয় ২০১৮ সালে। নতুন এ ভবন নির্মিত হওয়ার পর থেকেই শীতের শুরুতে মৌমাছিরা চাক তৈরি করে আসছে। গত বছর এ চারতলা ভবনে ৩৭ টি চাক বসেছিলো। এবছর তাবেড়ে হয়েছে ৭১টি। মৌচাকগুলো কলেজটির সৌন্দর্য যেন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়া রাস্তার পথচারীরা হেটে যাওয়ার সময় কলেজের পুরো ভবনটির চারদিকে বিপুল পরিমাণ মৌমাছির বাসার এ দৃশ্য একবার হলেও দেখে যায়। এসব মৌচাকের মধু মৌয়ালিদের কাছে আগাম টাকায় চুক্তি হিসেবে বিক্রি দেওয়া হয়। তথ্যমতে, গত বছর বিক্রি করা হয়েছিলো ৩০ হাজার টাকায়, আর এবছর ৫২ হাজার টাকায় এক ভবনের মৌচাক গুলো চুক্তি হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কলেজটির অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম। ফলে প্রতি বছর কিছু হলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে কলেজের সাধারণ তহবিলের টাকা। তাছাড়া চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রকোনা বাজারসহ চর বাছুরআলগী, চরমধুয়া, ছোট ডৌহারচর, বড় ডৌহারচর ও আশপাশের এলাকার প্রায় প্রতিটি পাকা বাড়ির ছাদ, জানালার কার্নিশে ও বড় বড় গাছের ডালে বাসা বেঁধে আসছে বা চাক করে আসছে বুনো মৌমাছি। কলেজে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মৌমাছি যেন একই পরিবারের সদস্যদের মতো অবস্থান করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠকার্যক্রম নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন, মৌমাছি কাউকে কামড় দেয়না। এমনকি প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শিশুসহ সব বয়সের লোকজন থাকলেও কাউকে মৌমাছি কামড় দেওয়ার সংবাদ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এসব চাক থেকে বাড়ির মালিকরা পাচ্ছেন মহৌষুধ নামে খ্যাত খাঁটি মধু। তাছাড়া অতিরিক্ত মধু বিক্রি থেকেও পাচ্ছেন বাড়তি লাখ লাখ টাকা। ফলে প্রতিটি পরিবারে বাড়ছে মৌসুমি আয়। মধু বিক্রির টাকা কেউ শীতার্তদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণে, আবার কেউ কেউ তাদের ছেলে মেয়ের পড়ালেখার ব্যয় বহনে, তবে অধিকাংশরাই তাদের সাংসারিক কাজে ব্যয় করছেন বলে অনেকে জানান। চন্দ্রকোনা কলেজে অধ্যয়নরত বিএসএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বন্দটেকী এলাকার আলিম উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, মৌমাছির চাক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসলেও আমাদের কাছে এটা নতুন কিছু নয়। তাই এলাকাবাসীরা এনিয়ে তেমন কিছু ভাবেন না। সে জানায়, বুনো মৌমাছিগুলো যেন তাদের সকলের বন্ধু হয়ে গেছে। এপর্যন্ত কাউকে কামড় দেয়নি। দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা কলেজ ভবনটির কাছে যেতে প্রথমে ভয় পেলেও, যখন শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে কাছাকাছি চলে যায়, তাদেখে দর্শনার্থীরাও কাছাকাছি গিয়ে মৌচাক দেখে ও ছবি উঠিয়ে উপভোগ করেন। এইচএসসিতে অধ্যয়নরত অন্য এক শিক্ষার্থী একই এলাকার আলফাজ উদ্দিনের ছেলে মো. সাগর মিয়ার জানায়, শীতের শুরুর দিকে মৌচাকের সংখ্যা কম থাকলেও আস্তে আস্তে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ মৌমাছিকে কোন প্রকার সমস্যার সৃস্টি করে না, যার ফলে মৌমাছিরাও কাউকে কামড় দেয়নি। মৌমাছি ওদের মতো, আর আমরা থাকি আমাদের মতো করে। সরেজমিনে চন্দ্রকোনা কলেজে গিয়ে দেখা হয় নকলা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসাইনের সাথে। তিনি জানান, কৃষি ভান্ডার খ্যাত আমাদের নকলায় চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের তথ্য মতে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এসব সরিষা থেকে মধু সংগ্রহ করতে উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চন্দ্রকোনা কলেজের এক ভবনে ৭১টি মৌচাকসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় প্রতিটি পাকা বাড়িতে ও বড় বড় গাছের ডালে মৌমাছি বাসা বেঁধেছে শুনে কলেজে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, কলেজের চারতলা ভবনের চারপাশের মৌচাক গুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে। যেকেউ এই চিত্র দেখলে আশ্চর্য্য হবেন বলে তিনি মনে করেন। কলেজটির অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চন্দ্রকোনা কলেজের নতুন চারতলা ভবনে মৌচাক বসে। এবছর চাক বেড়েছে। এসব চাক মৌয়ালিদের কাছে চুক্তি হিসেবে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নকলার আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য উপযোগী। এখানে সরিষা আবাদ বেশি হয়। তাই শীত কালে নকলার চরাঞ্চলে মৌমাছি অগণিত চাক করে থাকে। এখানকার পরিবেশ মৌ চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলেও তিনি জানান। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করায় সহজে পরাগায়ণ ঘটে, ফলে সরিষার ফলন অনেক বেশি হয়। তাই মৌ চাষি এবং মধু উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষনসহ সবধরনের সহযোগিতা প্রদান প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান। বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের উৎপাদিত খাঁটি মধুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকারি বিনিয়োগ, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মধুতে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বহিঃবিশ্বে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। মৌ-চাষের উন্নতির জন্য সরকারকে ধান, পাট ও ইক্ষু গবেষনার ন্যায় মধু গবেষনা কেন্দ্র বা ইন্সটিটিউট স্থাপন করলে কৃষকরা তথা মৌ-চাষিরা অর্থিক ভাবে লাভবান হবেন বলে মনে করছেন মৌ খামারি ফয়জুর রহমানসহ অনেকেই। এতে করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, কমবে বেকারত্ব, সমৃদ্ধ হবে দেশের কৃষি অর্থনীতি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com