প্রক্টর ড. লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক আসাবুল হক। গতকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক আদেশে অধ্যাপক আসাবুল হককে নিয়োগ দেয়া হয়।
রেজিস্ট্রার দপ্তরের আদেশে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীকে ২ ফেব্রুয়ারি হতে অব্যাহতি দেয়া হলো এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক আসাবুল হককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। প্রক্টরের দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তিনি ভাতা প্রাপ্য হবেন। এর আগে ট্রাকচাপায় রাবি শিক্ষার্থী হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীর প্রত্যাহারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে তারা সেখানে অবস্থান নেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপাচার্যের বাসভবনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাহমুদ সাকি দাবিগুলো উত্থাপন করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১.এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি হত্যাকা-। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে। ২.ভুক্তভোগীর পরিবারকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত দুজনের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হবে। ৩. ভুক্তভোগীর পরিবার নয়, প্রশাসনকে হত্যাকা-ের মামলার বাদী হতে হবে। ৪. এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে চলমান নিরাপত্তাহীনতা, দূর্নীতি ও অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ। ২৫ বার প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হয় কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি এবং ঘটনাস্থলেও আসেননি। ঘটনার দায় প্রক্টরিয়াল বডি কোনোভাবে এড়াতে পারে না। এ ঘটনার দায় ঘাড়ে নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে।
৫.নিহতের বাবা নেই। পরিবারে ছোট বোন ও মা আছে। মা অসুস্থ। তাই পরিবারের একজন সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিতে হবে। ৬. অবিলম্বে ঠিকাদার কোম্পানিকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে। ঠিকাদার কোম্পানি পরিবর্তন করতে হবে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে দুর্ঘটনায় গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব হাবিব হিমেল নিহত হন। তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দফতর সম্পাদক ছিলেন।এ সময় সিরামিক ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিক আহত হন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে দুটি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হল নির্মাণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে। অন্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে। শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে একাডেমিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ কাজের জন্য ট্রাকযোগে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে হিমেল ও রায়হান মোটরসাইকেলে করে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই হিমেল মারা যান। রায়হানকে আহতাবস্থায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা মেডিকেলে যাব। আহত রায়হান এখন শঙ্কামুক্ত। ক্যাম্পাসে সকল নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। ট্রাক চালককে গ্রেফতার ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মধ্যরাতে প্রক্টরকে প্রত্যাহার: ট্রাকচাপায় ক্যাম্পাসের ভেতরেই এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। এ ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত দেড়টার দিকে নিজ বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। এর আগে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন ছাত্রীরাও।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তার মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে ‘প্রশাসন কী করে, ক্যাম্পাসে ছাত্র মরে’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এমন অন্যায় আর মেনে নেবো না। এর আগে প্রশাসনের অবহেলায় রাবি অডিটোরিয়ামের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে নির্মাণশ্রমিক মারা গেছেন। আজ আমার ভাই নিহত হয়েছেন। আর কত মৃত্যু দেখে প্রশাসন খুশি হবে? ক্যাম্পাসে বারবার ছিনতাইয়ের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আমার ভাই নিহত হয়েছে। অথচ প্রক্টর ঘটনাস্থলে আসেননি। তাহলে তাকে কেন রাখা হয়েছে? আমরা প্রক্টরের পদত্যাগ চাই। রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের সামনে নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনের পাশে ট্রাকচাপায় নিহত হন মাহবুব হাবিব হিমেল। এরপর থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সহপাঠী হত্যার বিচারের দাবি তুলে আন্দোলন করছেন। তারা পাঁচটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে সহপাঠী হত্যার বিচার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে রাবি ক্যাম্পাস ছাড়লো পুলিশ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের সদস্যদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পুলিশের শতাধিক সদস্য জড়ো হন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করান। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, যে পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, ক্যাম্পাসে সেই পুলিশের দরকার নাই। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। এর আগে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের পাশে নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনের সামনে দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম মাহবুব হাবিব হিমেল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দুর্ঘটনায় আরও দুইজন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলেই ৫টি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান করছিলেন।