সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দইমেলা বসেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ শনিবার দিনব্যাপী এই দই মেলার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে তাড়াশের প্রায় প্রায় তিন শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলায় বেচাকেনা শুরু হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মূল দইমেলা চলবে।
মেলায় দইসহ রসনাবিলাসী খাবার রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানান। ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের তাড়াশে দইমেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্পকাহিনি। রাধা রমন সাহার ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ থেকে তাড়াশের জমিদারি আমলে সে সময়কার জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দইমেলার প্রচলন করেছিলেন।
সাধারণত জনশ্রুতি আছে জমিদার রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক লাল রায় মন্দিরের পার্শ্বের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দইমেলা বসত। প্রতিবছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে এ দইমেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন। যা আজো সে ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। কথিত আছে, সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনো মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বাৎসরিক রেওয়াজ আছে। তবে তিন দিনের স্থলে এক দিনব্যাপী হয়ে থাকে।
দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী, ডায়বেটিস দই সহ এ রকম হরেক নামে-দামের বিক্রি হয় দই। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়। স্থানীয় একাধিক ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বৃদ্ধিও পাচ্ছে। তবে চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।